উইজডেন একটা সত্যিকারের ৯০ দশকের ওয়ানডে একাদশ বানিয়েছে, যেখানে যাদের ক্য়ারিয়ার নব্বইয়ের দশকেই শুরু হয়ে সেই দশকেই শেষ, তাদের নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং এন্ট্রি রয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক।
- কেনেডি ওটিয়েনো (কেনিয়া) – উইকেটরক্ষক
কেনিয়া কোনোদিন টেস্ট খেলেনি আর ৯০ এর ওয়ান ডে কেনিয়া ছাড়া ভাবা যেত না। দীপক চুদাসামার সাথে ২২৫ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ (ওটিয়েনোর ১৪৪) তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড ছিল, যা শচীন-সৌরভ পরে ভেঙে দেন।
- নিক নাইট (ইংল্যান্ড)
৪০ এর উপরে ব্যাটিং গড় নিয়ে নব্বইয়ের দশকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটার হয়েও নিক নাইট একটাও ওয়ার্ল্ড কাপ ম্যাচ খেলতে পারেন নি, অনেকটা লক্ষ্মণ এর মতই।
রজার টুজ – টেস্ট ম্যাচে তিনটি ইনিংসে পরপর ২ ও ৪ রান করে আউট হওয়ায় তাঁকে বলা হয়েছিল পদবি চেঞ্জ করতে। তবে ওয়ানডে তে তিনি ৩৯ গড়ে ২৭১৭ রান করেন, ৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮০* এর ইনিংসটা তাঁর খেলা অন্যতম সেরা।
- রজার টুজ (নিউজিল্যান্ড)
টেস্ট ক্যারিয়ার যাচ্ছেতােই। তবে, ওয়ানডেতে ৩৯ গড়ে করেন প্রায় তিন হাজার রান। কেপ টাউনে তাঁর ১০৩ রানের ইনিংস কিংবা ১৯৯৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করা ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। তখনকার নিউজিল্যান্ড খানিকটা আন্ডারডগ ছিল। না হলে হয়তো, রজার টুজ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হতেন আজকের সময়ে।
- নিল ফেয়ারব্রাদার (ইংল্যান্ড)
নব্বইয়ের দশকে ইংল্যান্ডের ফিনিশার ছিলেন, তাঁর ৭৫ টি ওয়ান ডে ম্যাচের ২৫% খেলা ৯২, ৯৬ ও ৯৯ বিশ্বকাপে; বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে বেশি রান তাঁর থেকে বেশি গড়ে ইংল্যান্ডের আর কারুর নেই।
- ডেভ কালাঘান (দক্ষিণ আফ্রিকা)
অন্ডকোষে ক্যান্সার হয়েছিল তার, তার পরেও ফিরে এসে ১৮ টি ওয়ান ডে খেলেন; গোটা ক্যারিয়ারে একটিও ৫০ ছিল না, গড় ২০ এর নিচে! তারপরে এল সেই বিখ্যাত সেঞ্চুরিয়ান ওয়ানডে ( ২০০৩ বিশ্বকাপ নয়) যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা তাকে ওপেন করতে পাঠায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (৯৪ সাল)! কালাঘান নিউজিল্যান্ডের বোলারদের খাদ্য বানিয়ে ১৪৩ বলে ১৬৯* করেন, যেটা তৎকালীন পঞ্চম সর্বোচ্চ রান ছিল ওয়ান ডে তে! এর সাথে তিনি বোলিংয়ে ৩/৩২ নিয়ে ম্যাচের সেরা হন! এই একটি ম্যাচের পারফরম্যান্সের জোরেই তিনি এই দলে ঢুকেছেন!
- রবিন সিং (ভারত)
ত্রিনিদাদে জন্মানো এই ভারতীয় অলরাউন্ডারকে ৮৮ সালে অভিষেকের পরে ৭ বছর বসে থাকতে হয় দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার জন্য; যদিও একটি মাত্র টেস্ট খেলেছিলেন, ওয়ানডে তে বেশ ইউটিলিটি ক্রিকেটার ছিলেন। একটি সেঞ্চুরি আর দুটো ৫ উইকেট আছে তাঁর।
- ক্রিস হ্যারিস (নিউজিল্যান্ড)
লেগ স্পিনারের গ্রিপে স্লো মিডিয়াম পেস বল করতেন তিনি। প্রথম নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ উইকেট নেন এবং ২৫০ ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেন তিনি এবং মনে করা হয় তাঁর বোলিং অ্যাকশন নকল করেই বিরাট কোহলি বল করতেন। ৯০ এর নিউজিল্যান্ড দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন তিনি।
- কুমার ধর্মসেনা (শ্রীলঙ্কা) – অধিনায়ক
ধর্মসেনা ৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলংকা দলের সদস্য ছিলেন, এবং গোটা টুর্নামেন্টে মাত্র ৬ টি উইকেট পেলেও তাঁর ইকোনমি ছিল ৪.৪৪! তাঁর গোটা ক্য়ারিয়ারের সময়ে শ্রীলংকায় একমাত্র ভ্যাস ও মুরলির ইকোনমি তার থেকে ভাল ছিল; যদিও তিনি ম্যাচ পিছু ১ উইকেটের কম উইকেট পেয়েছেন গোটা ক্যারিয়ারে। এই দলে কোনো পার্মানেন্ট ক্যাপ্টেন না থাকায় ধর্মসেনাকে আম্পায়ারিং অভিজ্ঞতার জন্য দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হল।
- শেন লি (অস্ট্রেলিয়া)
নিজের পরিবারের মধ্যেও সেরা ক্রিকেটার নন তিনি, গোটা ক্য়ারিয়ারে ম্যাচ পিছু মাত্র ৬.৫ ওভার বল করেছেন, একটিও ৫০ করেন নি! তাও তিনি এই দলে কেন? কেনই বা অস্ট্রেলিয়ার মত দল তাকে ৪৫ টি ওয়ান ডে খেলিয়েছে? কেননা শেন লি যখন খেলতেন, তাঁর অবসরের আগে অবধি একমাত্র কপিল ও ক্রিস কেয়ার্নস তাঁর থেকে বেশি স্ট্রাইক রেট (৯৫.৪) আর ভাল ইকোনোমি রেটের অধিকারী ছিলেন (৪.৩৭)। শেন লিয়ের থ্রোও ছিল আউটফিল্ড থেকে রকেটের মত।
- নিখিল চোপড়া (ভারত)
হাসি পেয়ে গেল? কিন্তু চোপড়া লাইন লেংথ রেখে বল করতেন, ভারতের হয়ে যত স্পিনার নিখিল চোপড়ার চেয়ে বেশি বল করেছেন, তাদের মধ্যে মনিন্দ্র সিং ছাড়া কেউ তাঁর থেকে ভাল ইকোনোমি রেট (৪.২) রাখতে পারেন নি। প্লাস উনার একটা ৬১ আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ( চল লড়ে আসি বলে নেমেছিলেন সেই ম্যাচে, আনন্দবাজারের রিপোর্ট অনুযায়ী)
- গ্যাভিন লারসেন (নিউজিল্যান্ড)
জেফরি বয়কট যাকে বলেছিলেন ডিবলি ডবলি( য়েস্ট) বোলার! তাঁর প্রতিটি বল থাকতো উইকেটে, ইউ মিস আই হিট মার্কা, তার সাথে ব্যাটসম্যানের জন্য কোনো গতি থাকতো না ব্যবহার করে শট খেলার জন্য। অর্থাৎ, নো রুম টু হিট, নো পেস টু ওয়ার্ক উইথ! ৯০ এর দশকে পুরোটাই খেলা এই বোলারের ইকোনোমি ছিল ৩.৭৬!! বিশ্বকাপে ৩.৫২! অভাবনীয়!
কিছু নতুন জানা গেল? কিছু ইন্টারেষ্টিং তথ্য উঠে এল? কিছু প্রায় বিস্মৃত হয়ে যাওয়া স্মৃতি?