আপনি ফ্যাশন সচেতন হন কিংবা না হন, পোশাক সব সময়ই আপনার ব্যক্তিত্ব এবং রুচিরই বহি:প্রকাশ। ক্রিকেট মাঠে ক্রিকেটাররা মূলত একই ধরনের পোশাক পরে থাকেন, নিজেদের স্বকীয়তা প্রকাশের খুব বেশি স্বাধীনতা তাঁরা পান না।
কিন্তু কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা ক্যারিয়ারে হেলমেট না পরে ফ্লপি হ্যাট পরতেন নিজেদের স্বাছন্দ্যের জন্য। আসুন দেখে নেয়া যাক পাঁচজন ক্রিকেটারকে যারা ফ্লপি হ্যাট পরে মাঠে নামতেন।
- রিচি রিচার্ডসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৯৮৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সাবেক ক্যারিবীয় অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসনের। এর বছর পাঁচেক বাদে মেরুণ রঙের টুপি পরে খেলা শুরু করেন এই ব্যাটার। ফ্লপি হ্যাট পরে পেসারদের হুক শটে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলছেন রিচার্ডসন – নব্বইয়ের দশকে ক্যারিবীয়ান আগ্রাসনের প্রতীক ছিল সেটা।
রিচার্ডসনের ফ্লপি হ্যাট এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে অস্ট্রেলিয়ার এক টিভি শোতে সেটার স্কেচ আঁকা হয়েছিল।
তখনকার দিনে সবাই হেলমেট ব্যবহার করলেও রিচার্ডসন তাঁতে স্বাছন্দ্যবোধ করতেন না। এমনকি একবার অশন্তা ডি মেলের বাউন্সার মুখে লাগলেও না। রক্তাক্ত রিচার্ডসন সেদিন বাধ্য হয়েছিলেন রিটায়ার্ড হার্ট হিসেবে মাঠ ছাড়তে।
১৯৯৫ সালে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথমবারের মত হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ব্যাট করতে নামেন রিচার্ডসন। ১৫ বছরের মাঝে প্রথমবারের মতো সিরিজ হারে ক্যারিবীয়রা এবং তাঁর ফ্লপি হ্যাট ছেড়ে হেলমেট পরতে শুরু করা হয়ে আছে ক্যারিবীয় স্বর্ণযুগের পতনের প্রতীক হিসেবে।
- জ্যাক রাসেল (ইংল্যান্ড)
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় একই ক্যাপ পরে উইকেটকিপিং করে গেছেন সাবেক ইংল্যান্ড কিপার জ্যাক রাসেল। নিজের আত্নজীবনীতে পরবর্তীতে লিখেছেন পুরো মৌসুমে নাকি দুবার ক্যাপটা ধুয়ে দিতেন। ১৯৯৪ সালে বার্বাডোস টেস্টের আগে তো ক্যাপটা শুকানোর জন্য ওভেনের উপর দিয়ে রেখেছিলেন!
তবে গোলযোগ বেঁধেছিল দুই বছর বাদে ১৯৯৬ বিশ্বকাপের আগে। আইসিসি নিয়ম বেঁধে দেয় বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের নীল জার্সির সাথে রাসেলকেও রঙিন হ্যাট পরতে হবে। অন্যদিকে, রাসেল নাছোড়বান্দা, নিজের ট্রেডমার্ক সাদা টুপি বাদে অন্য কিছুতে পরতে নারাজ। অবশেষে কলকাতা এবং লন্ডনের বহু চিঠি চালাচালির পর নিজের সাদা টুপি পরেই মাঠে নামার অনুমতি পান তিনি।
- সুলতান জারাওয়ানি (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
অ্যালান ডোনাল্ড তখন উইকেটে আগুন ঝরাচ্ছেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ৩২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬৮ রানেই ছয় উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এমতাবস্থায় সুলতান জারাওয়ানি কিনা মাঠে নেমে গেলেন হেলমেট ছাড়াই!
টুপি পরা জারাওয়ানিকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররাও। অ্যালান ডোনাল্ড অবশ্য ছাড় দেননি, জারাওয়ানির শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতেই কিনা বাউন্সার দিলেন। হ্যাটটা উড়ে পরলো উইকেটের পেছনে, জারাওয়ানি অবশ্য পড়ে গেলেও উঠে দাঁড়িয়েছিলেন দ্রুতই। সেদিন আর মাত্র ছয় বল ক্রিজে ছিলেন, ড্রেসিংরুমে ফেরা মাত্রই হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে।
- শেন ওয়ার্ন (অস্ট্রেলিয়া)
ক্রিকেটের আইকনিক একটা দৃশ্য হল স্লিপে দাঁড়ানো শেন ওয়ার্ন। লাল ফিতেওয়ালা জুতো, হাত পেছনে রেখে চুইংগাম চিবোনো শেন ওয়ার্ন। আর হ্যাঁ, মাথায় অবশ্যই ফ্লপি হ্যাট।
ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পরে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিটি অজি ক্রিকেটারের স্বপ্ন। অথচ ওয়ার্ন ব্যাগি গ্রিন ক্যাপের বদলে কিনা সাদা ফ্লপি হ্যাটকেই আপন করে নিয়েছিলেন। আরো বেশ কয়েকজন অজি ক্রিকেটারই ফ্লপি হ্যাট পরতেন, কিন্তু ওয়ার্নের মতো জনপ্রিয় হননি কেউই। ক্যারিয়ারের শেষদিকে প্রায়ই দেখা যেত ওয়ার্ন দর্শকদের দিকে তাঁর হ্যাট ছুঁড়ে দিচ্ছেন।
পরবর্তীতে তাঁর আত্নজীবনী ‘নো স্পিন’ এ লিখেছিলেন, ‘মাঠে আমি আমার দেশের জন্য সর্বোচ্চটা নিংড়ে দেব। কিন্তু ব্যাগ্রি গ্রিন পরতে পারবো না কারণ আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমি আমার সান হ্যাটটাই পরবো।’
- মিতালি রাজ (ভারত)
২১৪ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়ার পথে মিতালি রাজের একটা ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। ১৯ বছর বয়সী মিতালি হাফ স্লিফ সোয়েটার এবং নীল ফ্লপি হ্যাট পরে লেগসাইডে শট খেলছেন – ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই স্মরণ করতে পারেন সেই দৃশ্য।
মিতালি ফ্লপি হ্যাট পরতেন মূলত রোদ থেকে বাঁচার জন্য। ক্যাপের চাইতে হ্যাটটাই তাঁকে বেশি স্বাছন্দ্য এনে দিত। তাঁর ভাষায়, ‘আমি আসলে হ্যাট পরে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। হেলমেট পরার চাইতে হ্যাট পরেই আমি বলটাকে ভালোভাবে দেখতে পেতাম।’
২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন সময়ে মাঠে অনেক বাতাস বইছিল। ফলে মিতালির হ্যাট বারবার উড়ে যাচ্ছিল এবং তাঁকে কুড়িয়ে আনতে হচ্ছিল। কিউই অধিনায়ক হেইডি টিফেন এতে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলেন। অবশেষে মিতালি রাজ হেলমেট পরতে রাজি হন। টিফেনের বিরক্তি নয় বরং মিতালির ভয় ছিল হ্যাটটা না আবার উড়ে উইকেটের উপর পরে যায়।