সাইফ হাসান সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই এক রহস্যের নাম। খুব ক্লাসিক ব্যাটার হিসেবে যুব পর্যায়ের ক্রিকেটে তাঁর নাম ডাক ছিল। কিন্তু, সেই নাম ডাক কি আর আন্তর্জাতিক ময়দানে কাজে লাগে?
হ্যাঁ, সাইফ হাসানও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পেরেছিলেন সামান্যই। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক এই অধিনায়ক জাতীয় দলের হয়ে নেহায়েৎ কম সুযোগ পাননি। ছয়টা টেস্ট খেলেছেন। সাদা পোশাকে দলের সাথে পাকিস্তান গেছেন, শ্রীলঙ্কা গেছেন, জিম্বাবুয়েতেও খেলেছেন। কিন্তু, কোথাওই তেমন নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। একটাও হাফ সেঞ্চুরি নেই তাঁর ক্যারিয়ারে।
অথচ, ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচরা প্রায়ই বলেন সাইফ হাসানের টেকনিক নাকি দারুণ। এমনকি টি-টোয়েন্টি দলের সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও একবার প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে সাইফের ব্যাটিং টেকনিকের প্রশংসা করেছিলেন।
আর এই ক্লাসিক সাইফ হাসানের মাঝে একজন পাওয়ার হিটারের ছায়া খুঁজে পান খালেদ মাহমুদ সুজন। ‘পাওয়ার হিটার অন্বেষণ’-এর মত একটা ক্যাম্পেও এই সাইফকে রেখেছিলেন তিনি। তখন ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে সদ্যই ফিরেছে বাংলাদেশ দল। পাওয়ার হিটারের আক্ষেপে পুড়ছিল বাংলাদেশ দল। বিশেষ করে ওপেনিংয়েই দারুণ সূচনা এনে দিতে পারে – এমন কাউকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল টিম ম্যানেজমেন্টে।
সেখান থেকেই এই ক্যাম্পের সূত্রপাত। আর যতদূর জানা যায়, ওই ক্যাম্পে নাকি মুগ্ধই করেছিলেন সাইফ। অপেক্ষা ছিল বড় একটা মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের। অবশ্য পুরোদস্তর টেস্ট ব্যাটার হিসেবে পরিচিত সাইফের টি-টোয়েন্টি সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার লোকের অভাব ছিল না।
সাইফ খেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে, দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি সিরিজে। সিরিজটা তিনি নি:সন্দেহে ভুলেই যেতে চাইবেন নিশ্চয়ই। দু’টো ম্যাচ খেলেছিলেন। দুই ম্যাচে করতে পেরেছিলেন মোটে এক রান। সেবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডেও ছিলেন। সেখানেও ব্যর্থ হওয়ার পর লম্বা সময়ের জন্য বাদ পড়ে যান। এরপর আর কখনওই জাতীয় দলে আসেননি তিনি। বলা যায়, সাইফ হাসানের বাংলাদেশ অধ্যায়টা সেখানেই শেষ!
তবে, সাইফ হাসান হারিয়ে হয়তো যাননি পুরোটা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। মৌসুমে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ১৯ বলে ৩১ রান করলেন। সেখানে ছক্কাই আবার চারটি। ফলে, সামর্থ্য নিয়ে তো প্রশ্ন উঠছে না। প্রশ্নটা তাহলে কোথায়? প্রতিভা নিয়েও তো সংকট নেই কোনো!
আসলে, সাইফের রহস্যটা তাঁর পরিচয়ে। কখনও পুরোপুরি টেস্ট ব্যাটার বলা হল তাঁকে। আবার তাঁকে হঠাৎ করে ধরে খেলিয়ে দেওয়া হলে টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক ম্যাচে। আসলে নিজের সঠিক চরিত্রটা খুঁজে পাওয়া জরুরী তাঁর জন্য। কিংবা তিনি যদি বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা কিংবা দেশের সাকিব-মিরাজদের মত সব ফরম্যাটের ক্রিকেটার হন – সেটাও নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে প্রমাণ করতে হবে নিয়মিত। তবেই ভবিষ্যৎ আছে। না হলে পুরোটাই অন্ধকার।