কিছুদিন আগেই একটা সাক্ষাৎকারে বলে ফেলেছিলেন তিনি পুরো দেশের বিরুদ্ধে খেলেন। ভুল অবশ্য তেমন কিছু বলেননি। নাজমুল হোসেন শান্ত তাঁর ক্যারিয়ারে যত বাজে ভাবে ট্রলের শিকার হয়েছেন তা বোধহয় খুব কম ক্রিকেটারকেই সইতে হয়েছে। দেশের হয়ে খেলতে নামছেন তবে পুরো জাতি তাঁর বিপক্ষে।
এত সমালোচনা, এত কটু কথা, এত ঘৃণা নিয়েও তিনি খেলতে নামেন। মাঠে তিনি যেমনই করুণ না কেন , এতকিছু তিনি সইতে পারছেন। পুরো একটা জাতির সমালোচনা, বাজে ভাবে ট্রল নিতে পারাটাও তো অনেক বড় ক্ষমতা। নাজমুল হোসেন শান্তকে যা সইতে হয় রোজ, প্রতিটা মুহূর্তে।
তাই তো, লিটন কুমার দাস সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ‘শান্ত মানসিকভাবে অনেক শক্ত একটা ছেলে।’ মানসিকভাবে শক্ত না হলে কী আর এতকিছুর পরেও মাঠে নামা যায়। শান্তর এই মানসিকতা মনে ধরেছে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজারও।
তাইতো সংবাদ সম্মেলনে এসে এই অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘পুরো দেশ শান্তকে নিয়ে সমালোচনা করছিল। তারপরও সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গিয়ে ২০০ এর মত রান করে এসেছে। যে ছেলে এত চাপ সামলে ২০০ রান করতে পারে তার মানে সে ভাল টাচে আছে।’
মাশরাফির এই কথাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছে। শান্ত যে ভাল টাচে আছেন তা বিপিএলের শুরু থেকেই প্রমাণ করে আসছেন। প্রায় প্রতিটা ম্যাচে সিলেটকে শক্ত শুরু এনে দিয়েছেন। একপ্রান্তে থেকে দলকে আগলে রেখেছেন। তাঁর গড়ে দেয়া ভিত্তিতে পরে জাকির, হৃদয়রা স্বভাবসুলভ ব্যাটিংটা করতে পেরেছেন।
ধন্যবাদবিহীন ভাবেই কাজটা রোজই করে যাচ্ছিলেন শান্ত। তবে সেই প্রশংসা তিনি কখনো পাননি। আজও একইভাবে নিজের কাজটা করছিলেন। তবে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিমের এক ওভারের ঝড়ে সবকিছু লন্ড ভন্ড হয়ে গেল। জাকির হাসান, তৌহিদ হ্রদয়, মুশফিকুর রহিম সবাই এক ওভারের মাঝেই আউট হয়ে গেলেন। মাত্র ১৫ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে সিলেট তখন দিশেহার।
আজও আগলে রাখার কাজটা করে গেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে যখন পায়ের নিচে মাটি হয়ে তখন চড়াও হয়েছেন ফরচুন বরিশালের বোলারদের উপর। বরিশালের কোন বোলারের সাধ্য হয়নি তাঁকে থামানো। শান্ত খেলে গিয়েছেন তাঁর নিজের মত করে। আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনি মানসিকভাবে কতটা শক্ত, তিনি ব্যাট হাতেও কতটা শক্ত।
এতদিন শান্ত বড় ইনিংস খেললেও তাঁর স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন ছিল। প্রতিদিনই রান করেছেন তবে একটু ধীরগতিতে। আজ অবশ্য মিটিয়েছেন সেই গ্লানিও। শুরুতে তো আজ তাঁকে ধীর স্থীর হয়ে খেলতে হতই। কেননা তাঁদের ব্যাটিং অর্ডার ভেঙে গিয়েছিল ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই।
সেই পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পর হাত খুলেছেন। ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা সিলেট ইনিংস শেষ করেছে ১৭৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। যার পুরো কৃতিত্ব নাজমুল হোসেন শান্তর। ৬৬ বল থেকে খেলেছেন ৮৯ রানের ইনিংস। ব্যাটিং করেছেন ১৩৪.৮৪ স্ট্রাইক রেটে। অপরাজিত এই ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১১ টি চার ও ১ টি ছয় দিয়ে। এই শান্তকেই তো সবাই চেনে, মাঝে পথটা হারিয়ে ফেলেছিলেন হয়তো। তবে ফিরে আসার গল্পটাও তিনি লিখবেন নিশ্চয়ই।