ইউরোপিয়ান ফুটবল বাজারে শীতকালীন ট্রান্সফার উইন্ডো আপাতত শেষ। তবে দলবদলের বাজার আবারো সরগরম হবে গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতে।
আর সেই উইন্ডোটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের জন্য। কারণ দলের দুই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার টনি ক্রুজ আর লুকা মদ্রিচের এই মৌসুম শেষেই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
যদিও এমন গুঞ্জন রয়েছে, যে এই দুই অভিজ্ঞ ফুটবলারকে আরো এক মৌসুমের জন্য ধরে রাখতে চাইবে রিয়াল মাদ্রিদ বোর্ড। তবে বাস্তবতা হলো, মাদ্রিদের আগামী দিনের পরিকল্পনায় দল সাজাতে হলে এই ট্রান্সফার উইন্ডোতেই চোখ রাখতে হবে। কারণ সামনে গ্রীষ্মের দলবদলে বেশ কিছু তরুণ ফুটবলার রয়েছে যাদের নিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে বসে আছে বেশ কিছু ইউরোপিয়ান ক্লাব।
বিশ্বকাপ শেষের পর থেকেই শোনা গিয়েছিল, ইংলিশ ফুটবলার জুড বেলিংহ্যামকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সদ্য শেষ হওয়া শীতকালীন ট্রান্সফারে ব্যাটে বলে তা মেলেনি। তারপরও লস ব্লাঙ্কোসদের এখন পর্যন্ত প্রথম টার্গেটে রয়েছেন বেলিংহ্যামই। সামনের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোতেই সব জটিলতা কেটে যেতে পারে।
কিন্তু বেলিংহ্যামকে দলে ভেড়াতে রিয়াল মাদ্রিদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি। কারণ ইংল্যান্ডের এ দুই দলও বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের এ মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়াতে মুখিয়ে আছে।
তবে এর মধ্যে কিছুটা চমকপ্রদ খবর হলো, বেলিংহ্যামের পাশাপাশি আরেক ফুটবলারের দিকেও নজর রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তিনি হলেন এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত খেলতে থাকা স্ট্রাইকার আর্লিং হাল্যান্ড। নওয়ের এ ফুটবলার গত মৌসুমেই ম্যানসিটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।
কিন্তু গুঞ্জন আছে, ম্যানসিটিতে এসে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও ঠিক সুখে নেই হাল্যান্ড। এছাড়া সম্প্রতি এ ইংলিশ দলের উপর আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। যার কারণে উয়েফার তদন্তের মুখে পড়তে হচ্ছে দলটাকে। আর এটিই নাকি হাল্যান্ডকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে। তাই আগামী মৌসুমে হাল্যান্ড নিজেকে ম্যানসিটি থেকে অবমুক্ত করতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
যদিও এখানেও বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। কারণ হাল্যান্ডের জন্য ম্যানসিটির কোনো রিলিজ ক্লজ নেই। তাই ম্যানসিটি কতৃপক্ষ না চাইলে ক্লাব ত্যাগ করতে পারবেন না হাল্যান্ড।
তবে রিয়াল মাদ্রিদ ঠিকই হাল্যান্ডকে পর্যবেক্ষণে রাখছে। এই মুহূর্তে সুয়ামেনি, কামাভিঙ্গাদের নিয়ে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল তারা। এদের সাথে হাল্যান্ড, বেলিংহ্যামরা যুক্ত হলে বেশ কিছু বছরের জন্য একটা অপ্রতিরোধ্য দল হয়ে উঠতে পারে লস ব্লাঙ্কোসরা। একই সাথে বেনজেমারও বয়স হয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ ফ্রন্টম্যানের জন্য হাল্যান্ডই থাকছেন আগ্রহের কেন্দ্রে।
অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনা পেরেজ, বেলিংহ্যাম ও হাল্যান্ড- দুজনকেই এক সাথে দলে ভেড়াতে আগ্রহী। কারণ এই দুজনই একসময় বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে একসাথে খেলেছেন। একই সাথে তাদের দুজনকে দলে পেলে তাই পুরনো রসায়নটা আবারো জমে উঠতে পারে। আর মাদ্রিদ বোর্ডের দৃষ্টিতে এই বিষয়টাও বিবেচনায় রয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান দলটার মধ্যে অন্যতম দুর্বলতার দিক হলো- রাইট ব্যাক সমস্যা। এই পজিশনে খেলেন দানি কার্বাহাল। কিন্তু চলতি মৌসুমে খুব একটা ফর্মে নেই তিনি। তাছাড়া বয়সের কারণে আগামী মৌসুমেই বেঞ্চে কাটাতে হতে পারে তাঁকে। তাই তাঁর জায়গায় রাইট ব্যাক হিসেবে পিএসজিতে খেলা আশরাফ হাকিমিকে আনার পরিকল্পনা মাদ্রিদের।
হাকিমি রিয়াল মাদ্রিদের অ্যাকাডেমি থেকেই বড় হয়েছেন। তাই মাদ্রিদ ম্যানেজমেন্টও চাইছে তাঁকে দলে ভেড়াতে। কিন্তু সমস্যা বেঁধেছে, পিএসজি’র সাথে হাকিমির চুক্তিতে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ফ্রেঞ্চ এ ক্লাবের সাথে চুক্তি রয়েছে তাঁর।
লস ব্ল্যাঙ্কোসরা বরাবরই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই দল সাজায়। এজন্য কখনোই তেমন দলটার অবনমন হয়নি। ছোট ছোট ট্রানজিশন পিরিয়ড কাটিয়ে ঠিকই দলটা নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছে। সেই সংস্কৃতি ধরে রাখতে এবারের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডোটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য।
কারণ সামনে মৌসুমের দলটাই তাদের আগামী এক দশকের পরিকল্পনার অংশ। তাই মদ্রিচ, ক্রুজ, বেনজেমার উত্তরসূরি খুঁজতে ব্যস্ত দলটা। আর এই মুহূর্তে হাল্যান্ডের চেয়ে কোন নাম্বার নাইনই বা এগিয়ে রয়েছে? ইতিহাস বলে, রিয়াল মাদ্রিদ সেরা খেলোয়াড়ের পিছনেই সব সময় দৌড়েছে। এখন দেখার পালা, তারা এই দৌড়ে এবার সবার আগে ফিনিশিং লাইন ছুঁতে পারে কিনা।