২০০৮ সালে শুরু হলো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ(আইপিএল)। এরপর ক্রিকেটের দিগন্তরেখাই যেন পাল্টে গেল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জোয়ার বইতে শুরু করলো। আইপিএলের আদলে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হলো বিগ ব্যাশ। একই পথে পা বাড়ালো বাংলাদেশও। বিপিএল শুরু হলো। এরপর একে একে পাকিস্তান থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানও নিজেদের দেশে ফ্র্যাঞ্জাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করলো।
এ বছরে তো আবার এক সাথে নতুন দুইটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মরুর দেশে একদিকে হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েটি(আইএলটি)। আর আফ্রিকার ও প্রান্তে আবার বসেছে এসএ টি-টোয়েন্টি লিগের আসর। সব মিলিয়ে ক্রিকেটাই যেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের বিশ্বায়নে ভরে গিয়েছে। অনেকে এসব লিগে কাড়ি কাড়ি অর্থযোগের লোভে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছেড়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু এত সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের আসলে ভবিষ্যৎ কি? ভারতের সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিসিআই-এর সদ্য বিদায়ী সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি এসব টুর্নামেন্টের ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী নন। তাঁর মতে, যে লিগগুলোতে সঠিক কাঠামো রয়েছে, সেগুলোই শুধু টিকে থাকবে। বাকিগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। সৌরভ মনে করেন, কয়েকটা ছাড়া বাকি অধিকাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টেরই ভবিষ্যৎ সুখকর নয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল) আছে।
ভারতের এক সংবাদ মাধ্যমে সৌরভ বলেছেন, ‘সারা বিশ্বেই এখন প্রচুর টি-টোয়েন্টি লিগ চলছে। কিন্তু আমার মনে হয়, সব গুলো পরবর্তীতে টিকবে না। আইপিএলের ব্যাপারটা আলাদা। কারণ এ লিগের নির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে। তাছাড়া ভারতে ক্রিকেট নিয়ে বেশ উন্মাদনা রয়েছে। ভারতের মতো অন্য কোনো দেশের ক্রিকেটে এমন জনপ্রিয়তা নেই। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ-টুয়েন্টি হচ্ছে দেখলাম। আমি গত তিন সপ্তাহ ধরে এই টুর্নামেন্টটা দেখছি। ওরা দারুণ আয়োজন করেছে। এখন এটা ধরে রাখলেই হলো।’
টি-টোয়েন্টি লিগ গুলো কেন চলবে না এ নিয়ে সৌরভ একান্ত নিজস্ব যুক্ত দিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেটের বাজারটা মূলত দর্শকদের কেন্দ্র করেই হয়। এই যে লিগ গুলো হচ্ছে, এটা বিগত বছর গুলোতে ঐসব দেশে ক্রিকেট নিয়ে জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলেই আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিলে কিন্তু এত লিগ আয়োজন করা কঠিন হয়ে যাবে।’
এ নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ইঙ্গিত করে সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, ‘আমরা যখন খেলা শুরু করি জিম্বাবুয়ে তখন তখন দারুণ দল ছিল। এখন তাদের ক্রিকেটের মান কমে গেছে। মানুষের আগ্রহও কমে গেছে সে কারণে। মূলত ক্রিকেটের জন্য অবকাঠামো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলে(সিএবি) ৫ বছর আর বিসিসিআইতে ৩ বছর কাজ করেছি। তাই অবকাঠামো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা খুব ভালই বুঝেছি।’
তিনি আরো যুক্ত করে বলেন, ‘১৯৯৯ বিশ্বকাপে যখন আমি প্রথম খেলতে যাই তখন জিম্বাবুয়ে যেকোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারতো। আমি নিশ্চিত, তখন তাদের ক্রিকেট বোর্ডে অতটাও অর্থ ছিল না। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সে সময় মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টসের মতো ক্রিকেটার খেলতেন। তখনও কিন্তু অর্থের ঝনঝনানি ছিল না। মূলত একটা দেশের বোর্ডের উপর এসব দায়িত্ব বর্তায়। খেলোয়াড় আর বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় থাকলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এখানে টাকা বড় ইস্যু নয়। ক্রিকেটারদের দেশের হয়ে খেলার একটা তাগিদ থাকতে হয়।’