কিংবদন্তীতুল্য ক্রিকেটারের ভাই হওয়ার একটা বিপদ আছে। সেটা কিছুটা হলেও টের পেয়েছিলেন গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের ভাই তিনি। অর্জনেও তিনি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের চেয়ে পিছিয়ে। তবে, এটা ঠিক যে – অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের ভাই না হলে তিনি আরেকটু বেশি আলোচিত হতেন।
তাকে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের প্রবাদ পুরুষ বললে বাড়িয়ে বলা হয় না। নান্দনিক ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি পরিচিত। দারুণ ফিল্ডিং আর কার্যকর অফস্পিন – সব মিলিয়ে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মত পারফর্মার জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে আদৌ আর জন্ম নেয়নি।
- মনে রাখার মত অভিষেক
গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের অভিষেক হয়েছিল ১৯৯২ সালে, ভারতের সাথে টেস্ট ম্যাচে। সে ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৮২ রান। গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের দলও পেয়েছিল ৪৫৬ রানের বড় সংগ্রহ। তা টেস্ট ম্যাচে এমন অভিষেক হলে কি হবে, ক্যারিয়ারজুড়ে তিনি টেস্টের সাথে খুব বেশি সদ্ভাব দেখাতে পারেননি। বরং ওয়ানডেতে তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের প্রথম সারির ব্যাটসম্যান।
- জিম্বাবুয়ের কার্যকর ওপেনার
গ্রান্ট ফ্লাওয়ার যখন ক্যারিয়ার শেষ করেন, তিনি তখন জিম্বাবুয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান করা ওয়ানডে ওপেনার। ওপেনার হিসেবে ১৩৭ ইনিংসে তিনি করেন ৪৪০৯ রান, গড় ৩৩.১৫! ফ্লাওয়ারের কাছাকাছি রান করা হ্যামিল্টন মাসাকাদজার রানও ফ্লাওয়ারের চাইতে কম, ২৫৯৫!
- ফ্লাওয়ার-পাওয়ার
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আর গ্রান্ট ফ্লাওয়ার দুজনই ক্রিকেটে দীক্ষা নিয়েছিলেন তাঁদের বাবার কাছ থেকে। অনেকটা সময় কাছাকাছি থাকার জন্য দুই ভাইয়ের মধ্যে রসায়নটা ছিল বেশ মজবুত, যেটা কিনা ক্রিকেট পিচেও দেখা গেছে দুইজনের মধ্যে যার প্রমাণ একসাথে ১২ টা সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ নিজেই দেয়।
- হঠাৎ অবসর
২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে একটা বিরাট কাণ্ড ঘটে। শ্বেতবর্ণের খেলোয়াড় হবার জন্য অধিনায়ক হিথ স্ট্রিককে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় ১৩ জন খেলোয়াড় হুমকি দেন, হিথ যদি আবার ফিরে না আসেন তাহলে তাঁরা সবাই অবসর নেবেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট নিজেদের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকে। আর এতে খেলোয়াড়রা অবসর নেয় যার মধ্যে গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারও ছিলেন।
- এসেক্স সাফল্য
গ্রান্ট ফ্লাওয়ার যখন অবসর নেন, তাঁর বয়স তখন ৩৪ বছর। কিন্তু তিনি জানতেন ক্রিকেটে এখনও তাঁর দেওয়ার আছে অনেক কিছু। তাই তিনি ভাই অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সাথে এসেক্সে যোগ দেন।।এসেক্সে তিনি বিরাট সফলতা পান। এসেক্সের হয়ে খেলা ৭২ ম্যাচে তিনি করেছেন ২০৩৮ রান, গড় ৪২.৪৫!
- জিম্বাবুয়ে হয়ে প্রত্যাবর্তন
২০১০ সালে সাবেক খেলোয়াড় অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেলের অনুরোধে গ্রান্ট ফ্লাওয়ার আবার জাতীয় দলে ফিরে আসেন। কিন্তু ফিরে এলে কি হবে, সফলতা পাচ্ছিলেন না আগের মত আবার দলে কিছু তরুণও ছিল যারা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেল অনুরোধ করেছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপটা খেলতে, কিন্তু গ্রান্ট ফ্লাওয়ার তার আগেই আবার নিজেকে সরিয়ে নেন।
- জিম্বাবুয়ের বিপদের বন্ধু
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে সাহায্য করার জন্য গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের মধ্যে সত্যিকারের একটা ইচ্ছা সব সময়ই ছিল। যে কারণে এসেক্সের লোভনীয় চুক্তি ফেলে তিনি জিম্বাবুয়েতে ফিরে গিয়েছিলেন। এরপরও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের যুব উন্নয়নে কিছুদিন কাজ করেছেন তিনি।
- ফিটনেস কিং
ফিটনেসের প্রতি ফ্লাওয়ার ছিলেন দারুণ সচেতন। জিম্বাবুয়ে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ফিল্ডার তিনি। মাঠেও তিনি ছিলেন দারুণ চনমনে। আজ যখন কোচিংয়ে মন দিয়েছেন, তখনও ফিট থাকার নেশাটা তাঁকে ছেড়ে যায়নি।
- কোচিং ক্যারিয়ার
ফ্লাওয়ার সব সময়ই চাইতেন ক্রিকেট নিয়ে থাকতে। তাইতো খেলা ছাড়ার পর কোচিংকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। তবে মজার ব্যাপার হল, তিনি খেলোয়াড় থাকাকালীনই ছিলেন কোচ । ২০১০ সালে যখন জিম্বাবুয়ের হয়ে শেষ ম্যাচটা খেলছেন তিনি, তখনই তিনি দলের ব্যাটিং কোচ। এখন তিনি বিশ্বের সেরা ব্যাটিং কোচদের একজন। কাজ করছেন পাকিস্তান দলেও।
- সিমার থেকে স্পিনার
মজার একটা অজানা তথ্য দিয়ে লেখার ইতি টানি। সবাই জানে, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার করতেন স্পিন বোলিং। তবে স্কুল ক্রিকেটে শুরুর দিনগুলিতে তিনি কিন্তু স্পিনার ছিলেন না, বরং ছিলেন একজন সিমার। কালক্রমে তিনি হয়ে যান স্পিনার।