পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই তিনি ফ্লপ। দুই অংকের স্কোর করাটাই যেন ভুলে গিয়েছিলেন। তবুও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে শামিম হোসেন পাটোয়ারিকে রংপুর খেলাল তিন নাম্বার পজিশনে। অফ ফর্মে থাকা শামিম ফর্মে ফিরলেন বড় ম্যাচেই। যেদিন দলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তাঁকে।
শামিম হোসেন পাটোয়ারি বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভাবনাময় এক তরুণ। তাঁর ব্যাটের সুইং মুগ্ধতা ছড়ায়। তাঁর পাওয়ার হিটিং এবিলিটি নিয়ে চর্চা হয় ক্রিকেট পাড়ায়। কোচ থেকে শুরু করে, সমর্থক সবাই জানে শামিম কত ভালো মারতে পারেন।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের এই সদস্য তাই অনেক আগেই থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কড়া নজরে। এমনকি ওই যুব দলটা থেকে সবার আগে জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারের নামও শামীম। কেননা তাঁর মত একজন ব্যাটার বাংলাদেশে সহসা পাওয়া যায় না। ব্যাটটাকে তিনি চাবুকের মত করে চালান।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত স্লগার ভাবতে শুরু করা হল তাঁকে। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ছয়-সাতে ব্যাট করার জন্য তো তাঁকেই চাই। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কয়েকটা ম্যাচেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে এরপর আর নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
বিশেষ করে হতাশ হতে হয়েছিল জাতীয় দলে তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখে। কেননা দ্রুত রান করতে পারার যে ক্ষমতা তাঁর আছে সেটা আর দেখা যাচ্ছিল না। টুকটাক যা রান করেছেন সেটায় স্ট্রাইক রেটটা তাঁর পক্ষে ছিল না।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে। তবে নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করে আবার ফিরে আসবেন এমন প্রত্যাশাই ছিল। কেননা একজন স্লগার তো এখনো বাংলাদেশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। অথচ সেই সুযোগটা তিনি কাজে লাগাতে পারলেন না।
গত বছর ঘরোয়া ক্রিকেটেও তেমন পারফর্ম করতে পারেননি। কোন ফরম্যাটের ক্রিকেটের সেই চেনা শামীমকে আর দেখা যায়নি। বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, তাঁর সেই বিধ্বংসী ইনিংস গুলোও আর দেখা যায়নি।
এবারের বিপিএলেও শামিমের একই হাল। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই রান খরায় ছিলেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৪৪ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন, এটুকুই। তবে শামীম নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন বড় ম্যাচের জন্য।
বিপিএলের এলিমেনেটর ম্যাচে আজ মুখোমুখি হয়েছে ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্স। হারলেই শেষ হয়ে যাবে টুর্নামেন্ট। আর জিতলে থাকবে বিপিএলের ফাইনাল খেলার সুযোগ। এমন ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নামা বরিশাল দারুণ শুরু করেছিলেন। মেহেদী হাসান মিরাজের অসাধারণ ইনিংসে ১৭০ রান করেছিল বরিশাল।
জবাবে ব্যাট করতে নামা রংপুরের হয়ে হালটা ধরলেন শামিম পাটোয়ারি। অফ ফর্মে থাকা এই ব্যাটারকেই অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান পাঠালেন তিন নাম্বার পজিশনে। তা আবার এত বড় ম্যাচে। যে ম্যাচে হারলেই শেষ হয়ে যাবে টুর্নামেন্ট।
তবে শামীম আর এবার তাঁর অধিনায়ককে হতাশ করলেন না। এই বিপিএলে নিজের সেরা ইনিংসটা খেললেন শামিম। আসলে ভুল হল, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই নিজের সেরা ইনিংসটা আজ খেলেছেন শামিম।
ফরচুন বরিশালের শক্তিশালী বোলিং লাইন আপকে রীতিমত তুলোধুনো করেছেন।নিজের অর্ধশতক পূরণ করেছেন মাত্র ৩৬ বলে। তবে এরপরও কাজ বাকি ছিল। ম্যাচ জিততে হলে আরো লম্বা পথ হাঁটতে হত শামিমকে।
তাঁকে সেভাবে কেউ সঙ্গ দিতে না পারলেও এগিয়ে যেতে থাকেন নিজের মত করে। আজ অনেকদিন পর শামিমের ব্যাট চলেছে চাবুকের মত। যেমন ব্যাটিংয়ের জন্যই পরিচিত ছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৫১ বল থেকে খেলেছেন ৭১ রানের ইনিংস। প্রায় ১৪০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা শামিম মনে করিয়ে দিলেন পুরনো দিনের কথাই। শামিমের এই ফিরে আসাটা তো দেশের ক্রিকেটের জন্যও প্রয়োজন ছিল।