বিপিএলের ফ্লপ একাদশ

অপেক্ষা এখন দশম আসরের। এক ঝুড়ি সমালোচনা আর ভুলের ভরা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরের সমাপ্তি ঘটেছে। প্রায় মাস খানেকের ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের অবসান হয়েছে। হাজার খানেক নিন্দা ছাপিয়ে দারুণ কিছু পারফরমেন্সের দেখা মিলেছে এবারের আসরে। ধুন্ধুমার ব্যাটিং থেকে শুরু করে দূর্দান্ত বোলিং পারফরমেন্স, সব কিছুই ছিল এই আসরে।

দর্শক আকর্ষণের পূর্ণ চেষ্টাই ছিল। সিলেট সেই চেষ্টার প্রতিফলন দেখিয়েছে। তবে হতাশার গল্পেরও অভাব নেই। তেমনই এক হতাশায় ঠাসা একাদশ নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন। দারুণ সব পারফরমেন্সের ভীরে যারা বিষাদ ছড়িয়েছে তাদেরই তালিকা নিয়ে হাজির খেলা ৭১।

  • নাঈম শেখ (রংপুর রাইডার্স)

রাজ্যের সমালোচনার জবাব দেওয়ার একটা সুযোগ ছিল নাঈম শেখের হাতে। এবারের বিপিএলকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত থেকে শুরু করে নাসির হোসেনদের মত খেলোয়াড়রা। কেবল নাঈম শেখ সুযোগটা কাজে লাগাতে হয়েছেন ব্যর্থ। তাঁর দল রংপুর রাইডার্স দ্বিতীয় কোয়ালিফারে হেরে বিদায় নিয়েছে টূর্নামেন্ট থেকে। এই পুরোটা সময় জুড়ে দল তাঁর উপর আস্থা রাখলেও, তিনি আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।

সবগুলো ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহের ঝুলিতে রয়েছে ২১৭। স্ট্রাইকরেটে বিশেষ কোন উন্নতি নেই। ১১১ এর আশেপাশে তিনি রান তুলেছেন ১৩ ম্যাচে। এর মধ্যে অধিকাংশ ম্যাচেই ওপেনিং করবার সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি তিনি। প্রায় ১৭ গড়ে তিনি ইনিংস গড়েছে পুরো নবম আসর জুড়ে। কার্যত তাঁর দল প্রত্যাশা মাফিক ফলাফল পায়নি নাঈমের কাছ থেকে।

  • মুনিম শাহরিয়ার (খুলনা টাইগার্স)

গেল আসরটায় মাঠ মাতিয়েছেন মুনীম শাহরিয়ার। সেবার তিনি খেলেছিলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে চাপিয়েছিলেন মুনিম। তবে সে জার্সির ভারে কাঁধ যেন নুইয়ে পরে তাঁর। সে ভার সইতে না পেরে তিনি কোথাও একটা হারিয়ে গেলেন। তাঁকে আর ফিরে পাওয়া গেল না। এমনকি বিপিএলের নবম আসরেও তিনি একেবারেই অদৃশ্য।

খুলনা টাইগার্সের হয়ে মাত্র চার ম্যাচ সুযোগ পেয়েছে একাদশে। চার ম্যাচে মোটে ২৮ রান করেছেন এই ব্যাটার। অথচ আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্যে বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন মুনীম। এমন ভরাডুবির কারণটা অজানা। তবে এই ভরাডুবির পর ফ্লপ একাদশে তাঁর জায়গা করে নেওয়াটা নিশ্চয়ই অবাক করবার মত কিছু নয়।

  • রবিন দাস (ঢাকা ডমিনেটর্স)

বাংলাদেশি বংশদ্ভুত ইংলিশ খেলোয়াড় রবিন দাস। তরুণ এই ক্রিকেটারকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল। ঢাকা ডমিনেটর্স দলের শক্তি বাড়াতেই তরুণ এই ব্যাটারকে সংযুক্ত করা হয়। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা এই ক্রিকেটার বিপিএলে ছিলেন মলিন। দুই ম্যাচে ঢাকার জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন।

দুই ম্যাচেই তিনি ফিরে গেছেন খালি হাতে। স্রেফ এসেছেন এবং প্রত্যাশার বিশাল চাপ মাড়িয়ে নিজের সক্ষমতার আলো নিভিয়ে বিদায় নিয়েছেন বিপিএল থেকে। ঢাকা এবার ধুকেছে বেশ। এমন সময়ে রবিন দাসদের মত খেলোয়াড়দের অবদান ভীষণ প্রয়োজন ছিল ডমিনেটর্সের।

  • সৌম্য সরকার (ঢাকা ডমিনেটর্স)

একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাণ্ডারি ভাবা হত সৌম্য সরকারকে। তবে সে সময়ের পরিসমাপ্তি বোধহয় ঘটে গেছে। হাজার খুঁজেও সেই ক্ষুরধার সৌম্যের দেখা মেলে না আজকাল। তিনি যেন হারিয়ে গেলেন বিস্তৃতির অতলে। এবারের বিপিএলটা হতে পারত তাঁর ফিরে আসার মঞ্চ। তবে তিনি এক্ষেত্রেও হয়েছেন ব্যর্থ।

১২ ম্যাচ খেলেছেন তিনি ঢাকা ডমিনেটর্সের হয়ে। সাড়ে ১৪ গড়ে তিনি রান করেছেন ১৭৪। এই সময়ে তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল একশের খানিকটা বেশি। বল হাতেও তিনি দলের জন্যে অবদান রাখার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। সেখানেও যে খুব একটা সফলতার মুখ তিনি দেখেছেন সেটা বলার সুযোগ নেই। ছয় ইনিংস বল করে তিন উইকেট বাগিয়েছেন। ইকনোমি রেটটা ছিল প্রায় দশ ছুঁইছুঁই।

  • মোহাম্মদ হারিস (সিলেট স্ট্রাইকার্স)

ব্যাটিং তাণ্ডবের জন্যে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে পাকিস্তানি ব্যাটার মোহাম্মদ হারিসের। এমনকি পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। এমন একজন ব্যাটারের কাছ থেকে প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকার কথা ছিল। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন হারিস। সিলেট স্ট্রাকার্সের হয়ে খুব বেশি অবদান তিনি রাখতে পারেননি।

চার ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৬৩ রান করেছেন। যার মধ্যে একটি ম্যাচেই ছিল ৪৪ রানের ইনিংস। ১৩৪ এর আশেপাশের স্ট্রাইকরেটে করা এই স্বল্প রান হয়ত অপ্রত্যাশিতই ছিল। তাছাড়া এবারের বিপিএলে কমবেশি সব উইকেট রক্ষকই পারফরম করেছেন। সেইদিক বিবেচনায় পার্টটাইম উইকেটরক্ষক হিসেবে এই একাদশে জায়গা করে নিচ্ছেন মোহাম্মদ হারিস।

  • উন্মুক্ত চাঁদ (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)

ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন উন্মুক্ত চাঁদ। সে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্তিশালী কাঠামোতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। তাইতো যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের হয়ে খেলার একটা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তেমনটাই শোনা যাচ্ছে।

অভিজ্ঞতায় পূর্ণ এই খেলোয়াড়কে আনা হয় চট্টগ্রামের ডেরায়। তবে তিনি আশার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। পাঁচ ম্যাচে মোটে ৩৭ রান করেছেন তিনি চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। মামুলি এই রানটুকু চ্যালেঞ্জার্সের কোন কাজে আসেনি। তাইতো একরাশ হতাশা নিয়েই তাদেরকে ছাড়তে হয়েছে বিপিএলের এবারের আসর।

  • সাব্বির রহমান (খুলনা টাইগার্স)

বাংলাদেশ যাদেরকে নিয়ে একটা সময় স্বপ্ন দেখতে, তাদেরই একজন সাব্বির রহমান। মারকুটে ব্যাটিং করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন সাব্বির। সম্ভাবনাময় এই খেলোয়াড়টির বিপিএলের মঞ্চে শতক করবারও রেকর্ড রয়েছে। তবে এবারের বিপিএলে তিনি ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। সেটা অবশ্য তিনি বেশ একটা লম্বা সময় ধরেই।

খুলনার টাইগার্সের হয়ে পাঁচ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন সাব্বির। কেবলমাত্র ৩০টি রান তিনি করতে পেরেছেন। একেবারেই ফ্লপ বলতে যা বোঝায় আরকি। ব্যাট হাতে যাচ্ছেতাই সময় তিনি পার করেছেন। তাইতো দল তাঁর উপর আস্থা হারিয়ে সুযোগ দেয়নি সব ম্যাচে।

  • মোহাম্মদ নওয়াজ (রংপুর রাইডার্স)

পাকিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজকে দলে ভিড়িয়েছিল রংপুর রাইডার্স। বেশ কার্য্যকর এক অলরাউন্ডার তিনি। অভিজ্ঞতাও রয়েছে বেশ। তবুও কোন এক অজানা কারণে তিনি পুরো টূর্নামেন্টে আলো ছড়াতে হয়েছেন ব্যর্থ। নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি নওয়াজ।

ছয় ম্যাচ খেলেছেন তিনি রংপুরের হয়ে। ব্যাট হাতে ৮৩ রানের বিপরীতে বল হাতে কেবল একটি উইকেট শিকার করতে পেরেছেন। রংপুর দলটায় শেষ অবধি অবশ্য ছিলেন না নওয়াজ। তাঁর সাথে চুক্তি হয়েছিল সেভাবেই।

  • মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের জন্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। কিন্তু সেই মোসাদ্দেক এবারে পুরো টূর্নামেন্ট জুড়েই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ব্যাট, বল, ফিল্ডিং কোন ক্ষেত্রেই নিজেকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি সৈকত। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দারুণ যাত্রায় তিনি ছিলেন কেবলই এক স্তম্ভ।

১৪ ম্যাচে তিনি ৯৮ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন। রান করেছেন ১৩০। অন্যদিকে সাড়ে আট ইকোনমি রেটে ছয়টি উইকেট বাগিয়েছেন তিনি। দলের কঠিন মুহূর্তে আশানরুপ পারফেন্স মেলেনি তাঁর কাছ থেকে। তাইতো ফ্লপ একাদশে তাঁর থাকাটা অবধারিত।

  • মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (খুলনা টাইগার্স)

পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে দ্যুতি ছড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের আগমন। তবে ক্রমশ সে আলো কেবলই মরীচিকায় পরিণত হয়েছে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে এবারের বিপিএলেও। ১১ ম্যাচে ৮৮ এর একটু বেশি স্ট্রাকরেটে তিনি রান করেছেন ৭০টি। অন্যদিকে বল হাতে ছিলেন খরুচে।

প্রতিটি ইনিংসেই তাঁর হাতে বল তুলে দিয়েছিল খুলনার অধিনায়ক। ৭.৪৭ ইকোনমি রেটে তিনি রান বিলিয়েছেন। জবাবে উইকেট নিয়েছেন ১২টি। বল হাতে গড়পরতা মানের পারফরমেন্স উপহার দিলেও ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন হতাশাজনক।

  • এবাদত হোসেন (ফরচুন বরিশাল)

গেল বছরটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালই কাটিয়েছিলেন এবাদত হোসেন। তবে এবছরের শুরুর টূর্নামেন্টটায় আলো ছড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন এবাদত হোসেন। বেশ বাজে একটা সময় কাটিয়েছেন তিনি এবারের বিপিএলে ফরচুন বরিশালের হয়ে।

গেল বারের রানার্সআপ দলটির হয়ে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন এবাদত। রান খরচ করেছেন ১০.৩৩ ইকোনমিতে। জবাবে খুব বেশি উইকেটও তিনি শিকার করতে পারেননি। সে ট্যালিতে রয়েছে তিনটি উইকেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link