‘সবার প্রিয়’ রাহুল ‘দলের বোঝা’

ক্রমশ যেন এক চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় ব্যাটার লোকেশ রাহুল। তিনি যতই হাত-পা চালিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করছেন ততই যেন তলিয়ে যাচ্ছেন। বাইরে থেকে করা সাহায্যও যেন কোন প্রকার প্রতিকার ঘটাতে পারছে না তাঁর পরিস্থিতির। ঘরের মাঠে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতেও সেই অফ ফর্মের ধারা অব্যাহত রেখেছেন রাহুল।

দুই টেস্টের চার ইনিংস মিলিয়ে তাঁর রান ৩৮ রান। দুই টেস্টের রান মিলিয়েও অর্ধশতকের গণ্ডি ছুঁতে পারেননি তিনি। শেষ পাঁচ ম্যাচ আগে তিনি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। মাঝের সময়টা ব্যাট হাতে ধুঁকেছেন লোকেশ রাহুল। তবুও যেন দলের অত্যন্ত পছন্দের খেলোয়াড়দের একজন তিনি। ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে অধিনায়ক এবং সিনিয়র খেলোয়াড়রা প্রতিনিয়ত তাঁকে আগলে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

হিসেবে বিস্তৃতি যদি আরও একটু বাড়িয়ে নেওয়া যায় তবে শেষ দশ টেস্টে কেবল দুইটি সেঞ্চুরি ছাড়া তেমন বলার মত পারফরমেন্স তিনি করতে পারেননি। তবে টেস্টে রাহুল ঠিক কখনোই ভারতীয় সমর্থক, সমালোচকদের খুশি করবার মত পারফরমেন্স করতে পারেননি। ৩৩.৪৭ গড়ে তিনি রান করেছেন।

ভারতের ক্রিকেটের ইতিহাসে যা যথেষ্ট নয় কখনোই। সে কারণেই ভারতীয় ক্রিকেট অঙ্গনে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। ঠিক কি কারণে লোকেশ রাহুল এত সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন? সেটার সঠিক উত্তর যেন জানা নেই কারো। তবে বিরাট কোহলি কিংবা রোহিত শর্মারা বিশ্বাস করেন তিনি বেশ প্রতিভাবান একজন ব্যাটার। সেই কারণেই তিনি এখনও অবিচল রয়ে গেছেন ভারতের ওপেনিং পজিশনে।

কিন্তু ২০২১ এ লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ১২৯ রানের ইনিংসটির আগে বছর তিনেক তিনি পেয়েছিলেন সেঞ্চুরির দেখা। এতটা অধারাবাহিক খেলোয়াড়কে দল বয়ে বেড়াচ্ছে। ক্রমশ তিনি বোঝায় পরিণত হচ্ছেন। তবুও দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর অধিনায়ক রোহিত ও কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কণ্ঠে বেজে ওঠে রাহুলের পক্ষে গান।

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রোহিত বলেন, ‘এটা শুধু রাহুলের ক্ষেত্রেই নয় (সবার ক্ষেত্রেই দল এতটা নমনীয় হবে)। বিদেশের মাটিতে সে যে কয়েকটি সেঞ্চুরি দেখা পেয়েছে তা আমার দেখা রাহুলের সেরা। বিশেষ করে লর্ডসের ইনিংসটি। ওমন ড্যাম পিচে টসে হেরে ব্যাটিং করা এবং পারফর্ম করা সহজ কথা নয়। সেখানেও সে পারফর্ম করেছে, আবার সেঞ্চুরিয়নেও পারফর্ম করেছে। দু’টি ম্যাচই ভারত জিতেছে। ঠিক এতটা সক্ষমতাই নিজের মধ্যে ধারণ করে রাহুল।’

অন্যদিকে, কোচ দ্রাবিড় বলেন, ‘যতদূর সম্ভব আমরা তাঁকে (রাহুল) ব্যাক করে যাব।’ ঠিক এসব বিষয়ই পক্ষপাতে বিষয়টি সামনে আসে। কেননা রাহুলের সাথে তূলনা করা ব্যাটাররা তাঁর থেকে ভাল পারফর্ম করেছে না আন্তর্জাতিক সার্কিটে। উদাহরণ হিসেবে মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও শিখর ধাওয়ানের উদাহরণ টেনে নিয়ে আসা যায়।

রাহুল ৮১টি টেস্ট ইনিংস খেলেছেন। পঞ্চাশ রানের গণ্ডি পেরিয়েছেন কেবলই ২০ বার। সাত শতকের বিপরীতে ১৩ অর্ধশতক। এর মানে দাঁড়ায় তিনি প্রায় চার ইনিংসে একটি করে পঞ্চাশ পেরুনো ইনিংসের দেখা পেয়েছেন। অন্যদিকে, মায়াঙ্ক খেলেছেন ৩৬টি ইনিংস। চার শতক ও ছয় অর্ধশতক রয়েছে তাঁর নামের পাশে। ৩.৬ ইনিংসে তিনি পঞ্চাশ পার করেছেন।

অন্যদিকে, শিখর ধাওয়ান শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১৮ সালে। ৫৮ ইনিংসে অর্ধশতককে শতকে রুপান্তরিত করার ক্ষেত্রে বাকিদের থেকে এগিয়ে তিনি। সাত সেঞ্চুরি সাথে পাঁচ ফিফটি করেছেন তিনি। প্রায় পাঁচ ম্যাচে তিনি পঞ্চাশের বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন। সুতরাং বাকিরাও তো ঠিক একই রকম সুযোগের প্রত্যাশা করতেই পারে। তবে তাঁরা কোন এক অজানা কারণে পাচ্ছেন না।

রাহুলকে ঘিরে তাই গুঞ্জনের শেষ নেই। এমনকি ভারতীয় ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরও রাহুলের পক্ষেই কথা বলছেন এবং ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাওয়া সেঞ্চুরির উদাহরণ টেনে এনেছেন। সুতরাং খুব সহসাই রাহুলকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। তবে এমনটা নয় যে এই ম্যানেজিং গ্রুপই তাঁকে রেখে দিতে চাইছে।

এর আগে বিরাট ও রবি শাস্ত্রীর আমলেও একই রকমভাবে আগলে রাখা হয়েছিল লোকেশ রাহুলকে। সে ধারা অব্যাহত থাকছে এখনও। তবে সে ধারা শেষ হওয়ার সময় যেন অতি সন্নিকটে। সদ্যই দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে রাহুলকে। চাপমুক্ত হয়ে নিজের স্বরূপে ফিরবেন রাহুল, সেটাই হয়ত সকলের প্রত্যাশা। তবে সেটা কতখানি তিনি করতে পারবেন, তা হয়ত সময় বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link