শান্ত তবুও মানটা রাখলেন

ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি নিজেকে কখনোই প্রমাণ করতে পারেননি। আজকের আগে খেলা পনেরো ম্যাচে একটা অর্ধশতকও নেই। তবুও নাজমুল হোসেন শান্তর উপরই আস্থা রাখলেন হেড কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে। গুরুত্বপূর্ণ তিন নাম্বার পজিশনটা দেয়া হল তাঁকে। যেখানে প্রথমেই সামলাতে হল জোফরা আর্চারের ছুঁড়ে দেয়া গোলা গুলো।

নাজমুল হোসেন শান্তকে আর্চার স্বাগত জানালেন বাউন্সার দিয়ে। যেটা শান্তর মাথা বরাবর ছুটে গিয়েছে ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে। কোন রকমে ব্যাটটা সামনে পেতে দিয়ে নিজের শরীরটা বাঁচালেন। ব্যাট দিয়ে আটকাতে পারলেও পুরো শরীরটা কেঁপে উঠলো একবার। একেবারে শুরুতেই শান্ত বুঝে গেলেন ভীষন কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে তাঁকে।

ঝড়ের মধ্যেও থিতু হয়ে দাঁড়াতে চাইলেন তিনি। ধীরে ধীরে ঐ জোরে আসা বলগুলো গাঁয়ে সয়ে গেল। উইকেটে মানিয়ে নিতে শুরু করলেন। ব্যাট থেকে আসতে শুরু করলো বাউন্ডারিও। একটা সময় ইংল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে রীতিমত দাপিয়ে বেড়ালেন বাইশ গজে।

এই ভয়ডর-হীন, টেকনিক্যালি স্ট্রং শান্তকে নেটে দেখা যায় নিয়মিতই। সেজন্যই কোচরা তাঁকে এতটা পছন্দ করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন বহুবার। সেজন্যই তাঁকে বলা হত বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের সেই রূপটা শান্ত দেখাতে পারেননি কখনো।

বিভিন্ন ফরম্যাটে যথেষ্ট সুযোগ পেয়েও টানা ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও বাংলাদেশের ক্রিকেট শান্তর পিছনে বিনিয়োগ করেছে। অন্য ক্রিকেটারদের যেমন ফ্যান গ্রুপ তৈরি হয়, শান্তর তৈরি হয়েছে হেটার্স গ্রপ। সমালোচনা কিংবা ট্রলের চূড়ান্ত রূপ দেখেছেন তিনি।

সেই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই শান্ত ফিরে আসার গল্প লিখতে চাইলেন ফিনিক্স পাখির মত। নিজের রানে ফেরার আভাষটা দিলেন এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। এক আসরে করেছেন পাঁচশোরও বেশি রান করার রেকর্ড। তবুও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা যে অনেক বড় মঞ্চ।

তাও আবার সামলাতে হচ্ছে আর্চারের গতি কিংবা রাশিদের ঘূর্নি। ঠিক যেই শান্তকে দেখে আশা জাগত। যেই ব্যাটিংটা দেখে মনে হত তিনি বড় কিছু করবেন। সেই শান্তকেই প্রমবারের মত দেখা গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে এতটা আত্মবিশ্বাসের সাথে কখনোই খেলতে দেখা যায়নি তাঁকে।

আজ লিটন আউট হয়ে ফেরা পর তিন নাম্বারে নামলেন শান্ত। নতুন বলে ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণ সামলাতে হত তাঁকে। সেই কাজটা করেছেন একেবারে নিখুঁত ভাবে। তামিম ইকবালকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তিনি। যেন বিপিএলের ফর্মটা টেনে এনেছেন এখানেও।

তবে তামিম , মুশফিক, সাকিব কেউই তাঁকে সঙ্গটা দিতে পারলেন না। অনেকটা একাই এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড। মিরপুরের মন্থর উইকেটে তিনি বাংলাদেশকে এনে দিতে চাইলেন একটা সম্মানজনক স্কোর।

ওয়ানডে ফরম্যাটে দেখা পেলেন নিজের প্রথম অর্ধশতক। সেটাও আবার বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে। তাঁর ৫৮ রানের ইনিংসটিই আজ মান বাঁচিয়েছে বাংলাদেশের। কেননা তিনি বাদে আর কেউই আজ অর্ধশতকের দেখা পাননি।

এরপর সর্বোচ্চ ৩১ রান করতে পেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এছাড়া মুশফিক, সাকিব, আফিফ, মিরাজ কেউই সামলাতে পারেননি ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ। শেষ পর্যন্ত ২০৯ রানেই অল আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link