ইংল্যান্ড, এই তো সেদিন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতল। সাদা বলের জোড়া বিশ্বকাপের মালিক দলটি। শক্তিমত্তার নিশ্চয়ই কোন প্রশ্ন বাকি থাকে না। এই দলটা খেলতে এসেছে বাংলাদেশের মাটিতে। স্বভাবজাত দাপট দেখিয়ে টাইগারদের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হারিয়েছে থ্রি লায়ন্সরা। যদিও শেষ ম্যাচটায় নিজেদের ছন্দ খুঁজে পায় তামিম ইকবালের দল।
সেই ছন্দের মৃদু বাতাস যেন ছড়িয়ে পড়ে গোটা টি-টোয়েন্টি দলে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন দলটি ছিল বেশ চনমনে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একটা ইউনিট হয়েই ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং প্রতিটা ডিপার্টমেন্টই যেন ছিল টপনচ। ঠিক যেমনটা প্রত্যাশা করে সবাই আর কি।
টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুতে অনুশীলনে অংশ নিয়েছিল গোটা দল। সেটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এই দলের ভেতর যে ইতিবাচকতার সঞ্চার ঘটেছে সেটার স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় অনুশীলন থেকেই। হাসি-ঠাট্টার মাঝেও অনুশীলন হয়েছে বেশ। পুরো বিষয় সামনে থেকে তদারকি করেছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। খানিকটা দূরে থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে রেখেছিলেন চান্ডিকা হাতুরুসিংহে।
পুরো দলকে নিয়ে সাকিব সেন্টার উইকেটে মজার ছলে পাওয়ার হিটিং প্র্যাকটিস করিয়েছেন। দলের সাথে খুনশুটি করেছেন। এরপরই যেন দারুণ উজ্জীবিত একটা দল নিয়ে তিনি হাজির জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে। খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় ইতিবাচকতা ছিল শুরু থেকেই স্পষ্ট। টস জিতে অধিনায়ক বোলিং করবার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় প্রতিটা রান আটকে দেওয়ার ভীষণ প্রবণতা দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রতিটা ফিল্ডারদের মাঝে।
একটি অতিরিক্ত রানও যেন কেউ দিতে চাইলেন না। নাজমুল হোসেন শান্ত থেকে শুর করে, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, শামীম পাটোয়ারীরা দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে গেছেন পুরো কুড়ি ওভার। শান্তর শেষ বলে ছক্কা বাঁচিয়ে ক্যাচ লুফে নেওয়ার চেষ্টাটাই যেন এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের একটি প্রতীকী চিত্র। সেটাই ফুটিয়ে তোলে গোটা দলের নিবেদন।
অন্যদিকে, ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বল করেছেন দেশীয় পেসাররা। হাসান মাহমুদের নাম এখানে একটু আলাদাভাবেই বলতে হয়। প্রথম স্পেলের দুই ওভারে তিনি খরচ করেন ২১ রান। তবে দ্বিতীয় স্পেলে ঠিক ৩৬০ ডিগ্রি উল্টে যায় হাসানের বোলিং পারফরমেন্স। ডেথ ওভারে দুই ওভার করেন তিনি। সেই দুই ওভারে মোটে ৫ রান খরচ করেন। পাশাপাশি তুলে নেন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তাতে ইংল্যান্ডের কম করে হলেও ৩০ খানা রান কাঁটা পড়ে। তাঁকে সঙ্গ দেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এই দুই বোলারের দারুণ বোলিংয়ের সুবাদে শেষ চার ওভারে ২০ রান নিতে সক্ষম হয় ইংলিশরা। অথচ ১৮০ রান অন্তত ছুঁয়ে দেখার কথা ছিল তাদের। এরপর বাংলাদেশ ব্যাটিং করতে নামে ১৫৭ রানের লক্ষ্যে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সামগ্রিক পদযাত্রা পর্যালোচনা করলে এই লক্ষ্যমাত্রাও খানিকটা বড়ই ঠেকবে। তবে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মাঝে বাড়তি একটা তাড়না দেখা যায়। পূর্ণ শক্তির ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নদের হারানোর তাড়না। তাছাড়া বিপিএলে পারফর্ম করা খেলোয়াড়রা সুযোগ পেয়েছেন একাদশে। সেই আত্মবিশ্বাসটাও দারুণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
আট বছর বাদে দলে সুযোগ পাওয়া রনি তালুকদার খাতা খোলেন নিজ ভঙ্গিতে। আগ্রাসনের দামামা বাজিয়ে। সে পালে হাওয়া দেয় লিটন। উদ্বোধনী জুটি লম্বা হয়নি। সেটার বিশেষ প্রয়োজনও নেই। তবে কার্যকর একটা সূচনা এনে দিতে সক্ষম হয়েছিল রনি-লিটন জুটি। সেই সূচনার উপর দাঁড়িয়ে পরবর্তীতে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে যান শান্ত। সদ্য অভিষেক হওয়া তৌহিদ হৃদয়ও নিজের একটা ছাপ ফেলে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে বাংলাদেশের জয়ের পথটা সুগম হয়।
শেষ অবধি অধিনায়ক সাকিব আর আফিফ হোসেন দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেন। তাতে অনায়াসে ছয় উইকেটের বড় জয় পায় টাইগাররা তাও আবার ১২ বল বাকি থাকতে। এই পুরো ব্যাটিং ইনিংসে ডট বলের সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। যে একটা কারণে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা পিছিয়ে যায় বহুদূর। প্রায় প্রতিটা ব্যাটার ক্রিজে এসেছেন, স্ট্রাইক রোটেট করার চেষ্টা করেছেন। এক রান গুলোকে দুই রানে পরিণত করেছেন। এভাবেই পরিকল্পনার ছক মেনেই জয়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে বাংলাদেশ।
তরুণ ক্রিকেটারদের দারুণ পারফরমেন্সের বদৌলতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জয়টা এসে ধরা দিয়েছে। এই যে ইতিবাচকতা গোটা দলের সেটা বেশ স্বস্তি-দায়ক। এমন ইতিবাচক আগ্রাসন দেখার অপেক্ষায় তো এই বাংলার প্রতিটা ক্রিকেট পাগল ভক্ত। হয়ত হাতুরুসিংহের এই নতুন অধ্যায়ে বদলের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। সবাই হয়ত মেনে নিতে চাইবেন, ‘এটা কোন ফ্লুক নয়’। একটা দল যখন তিন ডিপার্টমেন্টে ভাল করে, তখন নিশ্চয়ই সেটা ফ্লুক নয়।