গত ২৭ ডিসেম্বর, আইসিসি ঘোষণা করে এই দশকের সেরা টেস্ট একাদশ। সেই একাদশে সবচাইতে বেশি রয়েছে যেমন ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা, তেমনি পাকিস্তানি কোন ক্রিকেটার সুযোগ পাননি। আবার ভারত থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রিকেটার আছেন এই তালিকায়।
কিন্তু, এমন পাঁচজন ক্রিকেটার আছেন যাদের দশক সেরা টেস্ট একাদশে না থাকাটা একটু চমক হয়েই এসেছে। পারফরম্যান্স বলছে – তাঁরা এই একাদশে জায়গা করে নেওয়ার যোগ্য দাবিদার ছিলেন।
- ইউনুস খান
এদেরই একজন ইউনিস খান। ২০১৭ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ইউনিস খান গোটা দশক জুড়েই ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে স্বাচ্ছন্দ্যে। ২০১১ থেকে ২০১৭ অবধি, তিনি ৯৭ ইনিংসে করেছেন ৪৬৫৯ রান, গড়ও আকাশছোঁয়া- ৫৪.১৭! এই দশকেই ইউনুস খান করেছেন ১৭ সেঞ্চুরি, সাথে চার চারটে ডাবল সেঞ্চুরি!
ক্যারিয়ারজুড়েও টেস্ট ক্রিকেটে ইউনুস খান ছিলেন পরিচিত এক নাম। সাদা পোশাকে ২১৩ ইনিংসে ইউনিস খান করেছেন দশ হাজারের ওপরে রান (১০,০৯৯), গড়ও ঈর্ষণীয় (৫২.০৬)। শুধু তাই না, ইউনিস খান ছাড়া আর কোন পাকিস্তানী খেলোয়াড়ের দশ হাজার টেস্ট রানও নেই।
ইউনিস খান তাই নিজের নাম না দেখতে পেরে আক্ষেপ করতেই পারেন!
- এবি ডি ভিলিয়ার্স
টেস্ট একাদশে এবি ডি ভিলিয়ার্সের না থাকা কিছুটা চমকই বলা যায়। উইকেটের চারপাশে খেলতে পারা এই সাউথ আফ্রিকান ব্যাটিং জিনিয়াস এই দশকে ৮০ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছেন ৪০৬৩, গড় ৫৫ ছুঁই ছুঁই। শুধু কি তাই, এই দশকেই ডি ভিলিয়ার্স করেছেন ১০ টা সেঞ্চুরি আর ২৩ টা হাফ সেঞ্চুরি!
এবিডি ভিলিয়ার্স টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ২০১৮ সালে। দশকের শুরু ২০১১ থেকে এই অবসরের বছর ২০১৮ পর্যন্ত এবিডি ভিলিয়ার্স মোট ৮ বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলেছেন। এই আট বছরের মধ্যে সাত বছরই প্রত্যেক বছর এবিডি ভিলিয়ার্সের টেস্ট গড় ছিল ৪৫ এর বেশি। এই একটা পরিসংখ্যানই যথেষ্ট এবি ডি ভিলিয়ার্সের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করতে। তাই তালিকাতে যখন ভিলিয়ার্সের নাম দেখা গেল না, কিছুটা অবাক তো হতেই হয়।
- নাথান লিঁও
এই দশকে স্পিনারদের মধ্যে সবচাইতে বেশি উইকেট নেওয়া নামটা হল নাথান লিঁও। হ্যাঁ, গোটা দশক জুড়েই তার চাইতে বেশি উইকেট আর কোন স্পিনার নেয়নি। ২০১১-২০২০ সময়ে তার উইকেট সংখ্যা ৩৯৪। এই উইকেটের মধ্যে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে ১৮ টি, আর ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে তিনটি!
তাছাড়াও গোটা দশক জুড়েই টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ান বোলিং লাইনআপে নাথান লিঁও ছিল ভরসার এক নাম। এই মুহুর্তে তিনি টেস্ট ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। শুধু তাই নয়, আর মাত্র ছয়টা উইকেট পেলেই তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন।
নাথান লিঁও এই একাদশ থেকে তাই নিশ্চিত আক্ষেপে পুড়েছেন!
- জো রুট
টেস্ট একাদশ দেখার পর জো রুটকে খোঁজেনি এমন কেউ কি আছে? খুব সম্ভবত না। ইংলিশ টেস্ট অধিনায়ক নিশ্চিতভাবেই একটা জায়গা দাবি করেন এই একাদশে। দশকজুড়ে ১৭৭ ইনিংসে তিনি করেছেন ৮০০০ এর কাছাকাছি রান, আছে ১৭ সেঞ্চুরি আর ৪৯ টা হাফ সেঞ্চুরি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে গড় ৪৭.৭০ অনেক অনেক ভাল। এমনকি মডার্ন ডে ক্রিকেটের যে ফ্যাব ফোর- কোহলি, উইলিয়ামসন, স্মিথ, রুট- এদের মধ্যে এই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে রুটের রানই সবচাইতে বেশি। অথচ বাকি তিনজনের নাম তালিকাতে দেখা গেলেও, বাদ পড়তে হল জো রুটকেই।
এছাড়াও, এই মুহুর্তে ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি, রান সংগ্রাহকদের তালিকাতে আছেন সপ্তম স্থানে। জো রুট যেভাবে আগাচ্ছেন, আধুনিক যুগের টেস্ট ইতিহাসেরই স্মরণীয় নাম হয়ে যাবেন তিনি দ্রুতই। আর তাকেই কিনা আইসিসি দশকের সেরা টেস্ট একাদশে রাখেনি!
- হাশিম আমলা
হাশিম আমলা – দক্ষিণ আফ্রিকার এক সময়কার এই ব্যাটিং স্তম্ভ দশকজুড়েই টেস্ট ক্রিকেটে ছিলেন অনন্য। গোটা দশকেই ১৬ সেঞ্চুরি আর ২৩ হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি করেছেন ৫৪৪৬ রান। এসব ছাড়াও ২০১২ তে অপরাজিত ৩১১ রান তার টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিং সামর্থ্যের কথাই বলে।
তাছাড়াও, এই দশকেই হাশিম আমলা টেস্ট ফরম্যাটে করেছেন তিন তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি। সাউথ আফ্রিকান ব্যাটিং লাইনআপের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য নামও ছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে সাউথ আফ্রিকার ইতিহাসেরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি- ৪৬.৬৪ গড়ে ৯২৮২ রান। সেঞ্চুরির সংখ্যাতেও তিনি আছেন প্রোটিয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় স্থানে – ২৮ সেঞ্চুরি নিয়ে।
আমলাও তাই এই একাদশ দেখে নিজের নামের প্রতি সুবিচার হয়নি ভাবতেই পারেন।