পেলে আসছেন, পেলে!

তখন সদ্য এবেলার ডিজিটাল বিভাগে যোগ দিয়েছি। কলকাতার আকাশবাতাস জানান দিচ্ছে ফুটবল সম্রাট আসছেন শহরে।

ছোটবেলা থেকে পেলের কত গল্প শুনেছি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেই ম্যারাথন ফাইনাল চলাকালীন এক ঝলক পেলেকে দেখিয়েছিল। আমার ছোটকাকু টিভিতে ফুটবল সম্রাটকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। সটান উঠে দাঁড়িয়ে আমাকেই বল ভেবে মারতে গিয়েছিলেন।

সেই পেলের পা পড়তে চলেছে কলকাতায়। দ্বিতীয়বার এই শহরের অতিথি তিনি।

আমি খুব উত্তেজিত। ফুটছি ভিতরে ভিতরে। এদিকে আবার আশঙ্কা। নতুন কর্মস্থল। আদৌ কি আমাকে পাঠানো হবে অ্যসাইনমেন্টে?

আমাদের বস খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ। আমি একাধিকবার তাঁর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে পেলের সাংবাদিক বৈঠকে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। কিন্তু বরফ গলল না।

মন ভারাক্রান্ত। চোখ ফেটে জল আসার জোগাড়। এমন পরিস্থিতিতে বরফ গলানোর জন্য এগিয়ে এলেন শেলীদি।


বসকে বুঝিয়ে আমাকে বললেন, ‘যা বেরিয়ে পড়।’

আমার হাতে তখন চাঁদ পাওয়ার অবস্থা। একছুটে পৌঁছে গেলাম তাজ বেঙ্গলে। সেখানে সাংবাদিকদের ভিড়। এদিকে পেলের দেখা নেই। টেলিভিশনের এক মহিলা সাংবাদিক বারংবার খোঁজ নিচ্ছিলেন, ‘পেলে দাদু কোথায়? পেলে দাদু কখন আসবেন?’

অবশেষে পেলে এলেন। বৃদ্ধ সম্রাটকে প্রশ্ন করার জন্য এক উপায় গ্রহণ করা হল। যেহেতু বহু সাংবাদিক উপস্থিত, তাই প্রশ্নোত্তর পর্ব দীর্ঘায়িত হতে পারে, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন পেলেকে করাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করলেন আয়োজকরা।

সাংবাদিকদের কাছ থেকে লিখিত প্রশ্ন চাওয়া হল। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি প্রশ্ন বেছে নেওয়া হল। সেই প্রশ্নগুলোই করা হচ্ছিল পেলেকে। পেলের কাছে প্রশ্ন রাখছিলেন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা।
এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, এই মেসি-রোনালদোর যুগেও কি তিনি ফুটবলশ্রেষ্ঠ হতে পারতেন? একটুও না ভেবে পেলে বলেছিলেন, এই সময়ে খেললেও তিনিই বিশ্বসেরা হতেন। কথাগুলো বলার সময় পেলের চোখ দুটো অস্বাভাবিক উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। চোয়াল দুটো শক্ত হয়ে উঠছিল।

পরের দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ছিল এটিকের ম্যাচ। আইএসএলের সেই খেলা দেখতে গিয়েছিলেন পেলে।

সব দেখেশুনে আমার মন ভরে গিয়েছিল। বাড়িতে এসে হৃদয় উপুর করে দিয়ে পেলের গল্প করছিলাম। আমার বাবা একটা ডায়রির পাতায় লিখে রেখেছিলেন, ‘পরিবারের একজন অন্তত পেলেকে সামনে থেকে দেখল।’

এরকমই এক মার্চ মাসে বাবা চলে যান। ওই ডায়রির পাতাগুলো উল্টে উল্টে পড়তাম। পাতাগুলোয় বাবার গন্ধ পেতাম। একটা পাতায় বাবা লিখে রেখেছিলেন, ‘আমার কথাটি ফুরলো, নটে গাছটি মুড়োল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link