ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে স্পিনারদের দাপট

দিনের একেবারে শেষভাগ। দিনের খেলার সতেরো ওভার বাকি। ঠিক এমন সময়ে ব্যাট হাতে বাইশ গজে হাজির আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশ এমনিতেই বিশাল এক চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে। ১৫৫ রানের লিড নিয়ে থেমেছে টাইগাররা। টেস্ট ক্রিকেটের দুনিয়াতে আয়ারল্যান্ড বড্ড বেশি আনাড়ি। সেই দলটার জন্যে এটাও বেশ চাপের বিষয়।

সেই চাপ সামলে ব্যাট করে যাওয়া এবং দিনের শেষটায় একটা ইতিবাচকতা নিয়ে বাড়ি ফেরাটাই ছিল আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সে চ্যালেঞ্জটায় পুরোপুরি ব্যর্থ আয়ারল্যান্ড। এখানে আয়ারল্যান্ডের যতটা না ব্যর্থতা, তাঁর থেকেও বেশি কৃতীত্ব বাংলাদেশি স্পিনারদের। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা স্পিনারদের জন্যে সব সময় বেশ পয়া। সেই পয়া উইকেটের ফায়দাটা লুটেছেন আইরিশ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। তামিম, সাকিব, মুশফিকদের উইকেটসহ মোট ছয়টি উইকেট তিনি নিজের দখলে নিয়েছেন। তখনই আন্দাজ করে নেওয়া যাচ্ছিল স্পিন ধরতে শুরু করেছে প্রথম দিনের থেকেও বেশি।

প্রথম দিনও তাইজুল বাংলাদেশের পক্ষে পেয়েছিলেন ফাইফার। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেই যেন কঠিন এক পরীক্ষার মুখোমুখি আয়ারল্যান্ড। সাকিব আর তাইজুলের ধূর্ত বোলিংয়ে কাবু আয়ারল্যান্ডের টপ অর্ডার। দ্বিতীয় দিনের শেষটা রীতিমত বিভীষিকাময় ছিল আইরিশ ব্যাটারদের জন্যে।

চকচকে লাল বল নিয়ে প্রথমে আঘাত করতে শুরু করেন সাকিব আল হাসান। সাকিবের আর্ম বলে পরাস্ত জেমস ম্যাককলাম। অফ স্ট্যাম্পের আশেপাশে পড়া বলটা তড়িৎ গতিতে গিয়ে আঘাত হানে ম্যাককলামের প্যাডে। আম্পায়ার দ্বিধা ছিলেন। আউট দেননি। তবে সাকিব রিভিউ নিয়ে নিতে এক ফোটাও দেরী করেননি। বল ট্র্যাকিং অনুযায়ী লেগ স্ট্যাম্পের ভেতরে আঘাত করবার কথা ছিল বলটি। অগ্যতা আউট জেমস ম্যাককলাম।

সেখান থেকেই শুরু আয়ারল্যান্ডের পতনের। মিরপুরের অসম বাউন্সের সাথে সাকিব, তাইজুলদের অভিজ্ঞতার সামনে খাবি খেতে হয়েছে আয়ারল্যান্ড টপ অর্ডারকে। গুণে গুণে চারখানা ব্যাটার সতেরো ওভারের মাঝেই সাজঘরে। সাকিব আর তাইজুল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন দুইটি করে উইকেট।

৬.৩ ওভারের মাঝে চার উইকেট হারিয়ে তখন লজ্জার এক রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অ্যান্ডি বার্লবির্নির দল। শঙ্কা জাগে দ্বিতীয় দিনেই টেস্ট হেরে যাওয়ার। বাংলাদেশের স্পিনাররা অন্তত সেই ইঙ্গিতটাই দিচ্ছিলেন। প্রচণ্ডরকম ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেছিল সাকিবের নেতৃত্বাধীন স্পিন ইউনিট। তবে শেষ অবধি চার উইকেট শিকার করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টাইগারদের।

কার্টিস ক্যাম্ফারকে অতি সূক্ষ্ম এক ক্যাচ আউটে প্যাভিলনে ফেরান তাইজুল ইসলাম। স্ট্যাম্পের পেছনে থাকা লিটনও সমান কৃতীত্ব প্রাপ্য। সেটাই ছিল দিনের শেষ উইকেট। মিরপুর টেস্টে দ্বিতীয় দিনে সব মিলিয়ে ১২ উইকেট পড়েছে। যার এগারোটি উইকেটই গেছে স্পিনারদের পকেটে। দিনটি একান্ত নিজেদের করে নিয়েছে স্পিনাররা।

তবে বাংলাদেশি স্পিনারদের ভয়ানক রুপটা নিশ্চয়ই কাঁপন ধরিয়েছিল আইরিশদের মনে। যদিও শেষ অবধি আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান হ্যারি টেক্টর আর পিটার মুরের দৃঢ়তায় কোন রকমে দিনটি পার করে আয়রল্যান্ড। ২৭ রানে চার উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড রয়েছে ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচ হারার সন্নিকটে। তৃতীয় দিনের শুরুতে এই আগ্রাসী টাইগার স্পিন সামলাতে পারবে কি-না আয়ারল্যান্ড সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link