মাহেন্দ্র সিং ধোনি নামটাই যথেষ্ঠ ক্রিকেট সমর্থকদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তিন বছর হতে চলল। কিন্তু এখনো কোনোভাবেই কমেনি ধোনি নামটার প্রতি ভারতীয় দর্শকের উন্মাদনা। চলতি আইপিএলে চেন্নাইয়ের প্রতিটা ম্যাচেই যেন দেখা যাচ্ছে সেই চিত্র। ৪১ বছর বয়সী ধোনিও দর্শকদের হতাশ করছেন না মোটেও।
ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ব্যাটসম্যান ধোনি কি করতে পারেন তা দেখেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বই। ‘ফিনিশার’ ট্যাগটা একান্তই নিজের করে নিয়েছিলেন ভারতের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক। ১৬ বছর আগের চেন্নাইয়ের অধিনায়ক ধোনি এবারও আছেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক হয়েই। ৪১ বছর বয়সেও নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের বিচ্ছুরণ দেখাচ্ছেন মাঠে। চেন্নাইয়ের হয়ে প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করার সুযোগই পাননি তিনি।
কিন্তু যে ১০ টি বল খেলেছেন সেই ১০ বলেই দেখিয়েছেন ‘ধোনি ম্যাজিক’। এবারের আইপিএলেই ষষ্ঠ ভারতীয় হিসেবে ছুঁয়েছেন পাঁচ হাজার আইপিএল রানের মাইল ফলক। গুজরাটের বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম ম্যাচে করেন সাত বলে ১৪ রান। আর চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠে এবারের আসরের প্রথম ম্যাচে লক্ষনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে নিজের মোকাবেলা করা প্রথম দুই বলেই ছক্কা হাঁকান ধোনি।
ধোনি ব্যাটিংয়ে নামার সময়ই চেন্নাইয়ের মাঠের সব দর্শক ধোনি, ধোনি গর্জনে মুখরিত করে রাখেন পুরো স্টেডিয়াম। ধোনির ব্যাট থেকে আসা টানা দুই বলে দারুণ দুটি ছয়ের মার যেন দর্শকদের ক্ষুধা মিটিয়েছে একটু হলেও।প্রথম বলে কাট করে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছয় মারেন ধোনি। পরের বলেই অসাধারণ এক পুল শটে বল গ্যালারিতে নিয়ে ফেলেন দর্শকদের ভালোবাসার মাহি।
৪১ বছর বয়সেও নিজের ব্যাটিংয়ের ধরণে চির ধরেনি ধোনির। শেষ ম্যাচেই আইপিএলে ২৫০ টি ছক্কা মারার রেকর্ডও করেন এই উইকেটরক্ষক। মার্ক উডের বলে হাঁকানো ধোনির এই দুটি ছক্কার ভিডিও দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দর্শকরা তো বটেও অনেক সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারও নষ্টালজিক হয়ে যান ধোনির এই চিরায়ত রূপ আবার দেখতে পেয়ে।
বাদ যাননি ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রশিদ লতিফও। রশিদ বলেন, ‘সে আইপিএলে একাই পাঁচ হাজার রান করেছে। ধোনি সব সময়ই বিশেষ কিছু। ভারতীয় ক্রিকেট ও বিশ্ব ক্রিকেটে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আপনি যা মন চায় তা বলতে পারেন, তাতে কিছু যায় আসে না। সে ভারতের ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক। এখানে কোনো সন্দেহ নেই।’
ক্রিকেটটাকেই যেন এক ধাপ উপরে নিয়ে গিয়েছিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। নিজের ব্যাটিং, উইকেট কিপিং আর অধিনায়কত্ব; সব কিছুতেই এনেছিলেন নতুনত্ব। রেখেছিলেন নিজের ছাপ। শুধু ভারত কেন, চাইলেই ধোনিকে ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে রায় দেয়া যায় সহজেই। আর ব্যাট হাতে তো ধোনি ছিলেন দর্শকদের জন্য চরম আকর্ষণীয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেবার পর আইপিএল ছাড়া ধোনিকে খেলতে দেখার সুযোগ নেই সমর্থকদের জন্য।
তাই আইপিএলে ধোনির টস করা, ব্যাটিংয়ে নামা কিংবা কিপিং করার সময় দর্শকদের চোখ যেন আটকে থাকে ৪১ বছর বয়সী ধোনির দিকেই। কিন্তু বয়স ৪১ হলে কি হবে! ধোনির ব্যাটিংয়ের ধরণের কারণে তাকে ৪১ বছরের তরুণ বলা ছাড়া কি উপায় আছে!
পাকিস্তানের সাবেক উইকেট রক্ষক রশিদ আরো বলেন, ‘দেখুন কিভাবে সে ব্যাট করছে। সে মাত্র ২-৩ বল মোকাবেলা করছে এবং দেখাচ্ছে সে এতদিন কি করে এসেছে। সে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলোয়াড়। আমরা সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার বিরাট কোহলিদের দেখেছি। কিন্তু ধোনি যেভাবে মাঠে নিজেকে পরিচালনা করে এবং তাঁর যত ভক্ত সমর্থক আছে, তা সত্যিই অসাধারণ।’