মুস্তাফিজের ম্যাজিক ট্রিক সবাই জানে

শুরুটা ভাল হয়েছে সেটা বলার উপায় নেই। প্রথম ওভারে গুণে গুণে তিন বার বল বাউন্ডারি লাইন ছুঁয়েছে। সবাই ধরেই নিল মুস্তাফিজুর রহমানের এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) শুরুর যাত্রা খুব একটা সুখকর হবে না। তবে খেলার যে তখনও অনেকটা বাকি। নিজের পুরনো রুপে আবারও হাজির মুস্তাফিজুর রহমান। যদিও একটা সময় খেই হারিয়েছেন তিনি।

প্রোটিয়া পেসারদের আধিক্যে দিল্লি ক্যাপিটালসে মুস্তাফিজের সুযোগ পাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। তবে তিন ম্যাচ বাদে একাদশে কাটার মাস্টার। দল প্রথমে ব্যাটিং করল। স্বাভাবিকভাবেই দলের সংগ্রহ ডিফেন্ড করবার গুরু দায়িত্ব এসে যায় মুস্তাফিজের উপর।

তবে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারলেন না ফিজ। ফিরলেন ১৩ রান খরচায়। ঈশান কিষাণ টানা তিন খানা বাউন্ডারি আদায় করলেন মুস্তাফিজের প্রথম ওভারে। সেখানে মনবল ভেঙে যাওয়ার কথা। অধিনায়কও খানিকটা ভরসা হারিয়ে ফেলার কথা। যদিও বাকি বোলাররাও যে খুব একটা ভাল করেছেন সেটা বলার উপায় নেই।

এনরিচ নর্কিয়া পাওয়ার প্লে-তে দুই ওভারে খরচা করেন ২৪ রান। বাকিদেরও একই দশা। সেদিক বিবেচনায় শুরুটা মন্দ হয়নি ফিজের। তবে মুস্তাফিজ যেন নিজেকে জমিয়ে রেখেছিলেন ডেথ ওভারে। ম্যাচ মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যে বেশ প্রসিদ্ধ তিনি। গোটা আইপিএল পাড়ায় স্লগ ওভারে মুস্তাফিজকে নিয়ে রীতিমত বন্দনা হয়। হার্শা ভোগলের মত ক্রিকেট বোদ্ধারা বলে ওঠেন, ‘হি ইজ অ্যা ম্যাজিশিয়ান উইথ দ্য স্লো বল’।

১৫ তম ওভারে তিনি বল করতে এসে দিলেন মাত্র ২ রান। ফিফটি করা রোহিত শর্মাকে তিনি যেন পুরোপুরি করে রাখলেন নিশ্চুপ। পরের ওভারে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু। পরের তিনটি বলে এলো না কোন রান। চাপে পড়ে গেলেন রোহিত শর্মা। অফ সাইডের অনেকটা বাইরে দিয়ে যাওয়া বল এক প্রকার বাধ্য হয়ে ব্যাটে লাগাতে চাইলেন। তাতে তিনি বন্দি অভিষেক পোরেলের দস্তানায়।

দূর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নিয়ে ম্যাচে ফেরে দিল্লি ক্যাপিটালস। সে ওভারটা নিতান্তই এক ভাল ওভার হওয়ার পথেই ছিল। তবে শেষ বলে আরও এক বাউন্ডারি আদায় করে চাপমুক্ত হয়ে যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ১৯ তম ওভারে ম্যাচটা দিল্লির পকেটে এনে দেওয়ার দায়িত্বে করুণভাবে ব্যর্থ ফিজ। ক্যামেরুন গ্রিন ও টিম ডেভিডের পেশিশক্তির সামনে পরাজিত হতে হয় মুস্তাফিজকে। লম্বা ব্যাটারকেও একই কৌশলে পরাস্ত করতে গিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। কিন্তু, সেই কৌশল বুঝে ফেলেন গ্রিন-টিম ডেভিডরা।

দুই ব্যাটার বিশাল দুই ছক্কা হাকান, ১৯ তম ওভারের চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে। তাতে করে শেষ ওভারে কেবল পাঁচ রান প্রয়োজন পরে মুম্বাইয়ের। সেখান থেকেও ম্যাচ শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। শেষ বলে দুই রান নিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় পাঁচ বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা।

তবে ১৯ তম ওভারটি বাদ দিলে মুস্তাফিজের বোলিংকে একেবারেই চোখের আড়াল করার বা নিন্দা করার কোন মানে নেই। ১৫ তম ওভারে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ডানহাতি ব্যাটারদের জন্যে বল করেছেন ওয়াইড অফ স্ট্যাম্প অঞ্চলে। আবার বাম-হাতি ব্যাটারদের ছুড়েছেন পিন পয়েন্ট ইয়োর্কার। সাথে তার কার্য্যকর স্লোয়ার বল। এ যেন ক্ল্যাসিক মুস্তাফিজের প্রতিচ্ছবি।

শেষদিকে চাপ সামলে নিতে খানিকটা হিমশিম খেয়েছেন মুস্তাফিজ। বলের লাইন-লেন্থ হয়েছে এলোমেলো। তাতে আর জয়ী দলে থাকা হয়নি মুস্তাফিজুর রহমানের। দিল্লীও রয়ে গেল টেবিলের তলানিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link