অথর্ব তাইডে, জিরো থেকে হিরো

আইপিএলে দুঃস্বপ্নের মতো এক অভিষেক হয়েছিল অথর্ব তাইডের। লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে তিন বল খেলে সাজঘরে ফিরেছিলেন রানের খাতা খোলা আগের। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে যেন ছন্দে ফিরছেন তাইডে, চাপের মুখে বিধ্বংসী ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন নিজের সামর্থ্য। 

বাবার আগ্রহেই ক্রিকেটে আসা অথর্ব তাইডের। ছোটবেলা থেকে দারুণ প্রতিভাবান তাইডের সামনে এগোতে সমস্যা পোহাতে হয়নি মোটেই। ঘরোয়া বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে নিয়মিত রান করে জায়গা করে নেন ছোটদের জাতীয় দলে। আলো ছড়িয়েছেন সেখানেও, শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজে খেলেন ১১৩ এবং ১৭৭ রানের চমৎকার দুটো ইনিংস। 

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে আলো ছড়ানোর পর সিনিয়র ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে না পেরে ঝরে যান অনেকেই। তাইডে অবশ্য হারিয়ে যাবার পাত্র নন, বরং রানের ধারাটা তিনি বজায় রেখেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও। যুবরাজ সিংয়ের পর মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে কোচবিহার ট্রফিতে ত্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকান এই তারকা। কেবল লাল বলের ক্রিকেট নয়, টি টোয়েন্টিতে মারকুটে ব্যাটিংয়েও সমান পারদর্শী তাইডে। ডিওয়াই পাতিল টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ২১২ স্ট্রাইকরেটে তাঁর সংগ্রহ ছিল ২২১ রান। 

তবে তাইডে জানতেন টিকে থাকতে হলে ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনতে হবে প্রতিনিয়ত। সেই কারণেই কিনা কখনো থেমে থাকেননি, প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে গেছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি খেলতে শুরু করেন ইংল্যান্ডেও।

নর্দান প্রিমিয়ার লিগে এক হাজারের বেশি রান করে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া আলো ছড়ান বল হাতেও, ১৮ ম্যাচে শিকার করেন ৫৪ উইকেট। মজার ব্যাপার হলো, সেই টুর্নামেন্টে দলের প্রয়োজনে উইকেটের পেছনেও দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে। 

এরপর সময় যত গড়িয়েছেন, তাইডের খেলায় আরো উন্নতি এসেছে। সর্বশেষ সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতেও ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা তারকাদের একজন। ১০ ম্যাচে ২৩৪ রান করার পাশাপাশি শিকার করেন দশ উইকেট। সেই সুবাদেই কিনা আইপিএলের নিলাম থেকে তাঁকে দলে ভেড়ায় পাঞ্জাব কিংস। 

আইপিএলে প্রথম মৌসুমের পুরোটা সময় কাটাতে হয়েছিল বেঞ্চেই। কিন্তু এবারের মৌসুমে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের বিদায়ের পাশাপাশি জনি বেয়ারেস্টো, ভানুকা রাজাপাকশে, শিখর ধাওয়ানদের ইনজুরির সুবাদে পাঞ্জাব টপ অর্ডারে সুযোগ পান তাইডে। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই শূন্য রানে ফেরার পর সবাই ভেবেছিলেন তাইডে বোধহয় হারিয়েই যাবেন। কিন্তু তাইডে হাল ছাড়েননি, তিনি ফিরে এসেছেন।

লখনৌর দেয়া পাহাড়সম ২৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে পাঞ্জাব যখন চোখে সর্ষেফুল দেখছে, তখনই পাল্টা আক্রমণ শুরু তাইডে। মাথায় পাহাড়সম চাপ নিয়েও লখনৌ বোলারদের তুলোধুনা করেছেন এই তরুণ। তাঁকে দেখে মনেই হয়নি সবে চতুর্থ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন।

যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শটে মুগ্ধ করেছেন এই তরুণ। তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটে ভর করেই এক সময় অঘটনের স্বপ্ন দেখছিলো পাঞ্জাব। কিন্তু আট চার এবং দুই ছক্কায় ৩৬ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে আউট হন তাইডে। তবে বুঝিয়ে দিয়ে যান হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। 

তাইডের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হলো তাঁর ভয়ডরহীন মানসিকতা। আগামী দিনগুলোতে তাই ভারতীয় ক্রিকেটের বড় তারকা হতে পারেন অথর্ব তাইডে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link