আইপিএলে এবারের মৌসুমের শুরু থেকেই রব উঠেছিল আন্দ্রে রাসেল ফুরিয়ে গেছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্স ভরসা না হারালেও পুরনো রাসেলকে যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে ইডেন গার্ডেন্সে আরো একবার ছক্কার পসরা সাজিয়ে রাসেল যেন জানান দিলেন এখনো ফুরিয়ে যাননি।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বিশ্বসেরা ফিনিশারের তকমা রাসেলের নামের পাশে। ইনিংসের শেষদিকে নেমে অবিশ্বাস্য সব ইনিংসে দলকে জিতিয়েছেন বহুবার। যেকোনো ম্যাচের ফলাফল একা হাতে বদলে দেবার ক্ষমতা রাখেন এই ক্যারিবীয়ান।
টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা হয়ে গোটা বিশ্বব্যাপী ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নাম কুড়োনোর পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা। কেবল ব্যাট হাতেই নয়, তাঁর দুর্দান্ত পেস বোলিং বহুবার ম্যাচ জিতিয়েছে দলকে।
আইপিএলে কলকাতার ঘরের ছেলেই বনে গেছেন রাসেল। ২০১২ মৌসুমে দিল্লী ডেয়ারডেভিলসের হয়ে অভিষেক হলেও দুই মৌসুম বাদেই নাম লেখান কলকাতার ডেরায়। সেই থেকে শুরু, এরপর কলকাতা কখনো রাসেল ছাড়া খেলতে নামার কথা কল্পনাতেও ভাবেনি। নিজের অভিষেক মৌসুমেই কলকাতাকে শিরোপা জিতিয়ে রাসেলও আস্থার প্রতিদান দিয়েছিলেন দারুণভাবেই।
তবে গত কয়েক মৌসুম ধরেই আইপিএলে খানিকটা নিষ্প্রভ ছিলেন রাসেল। ব্যাট হাতে রান পাচ্ছিলেন না, ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল বারবার। ক্রমাগত ইনজুরিতে মৌসুমের বড় একটা সময় থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। আগে ব্যাটে রান না পেলেও বোলিং দিয়ে পুষিয়ে দিতেন এই অলরাউন্ডার।
কিন্তু, বর্তমানে ইনজুরি আশংকায় বোলিং থেকে একপ্রকার নিজেকে সরিয়েই রেখেছেন এই তারকা। ব্যাটে রান নেই, বোলিংয়ে নেই পুরনো ধার – রাসেল যেন বয়সের ভারে হারিয়ে যাওয়া এক তারকা। ধীরে ধীরে কলকাতার মূল ভরসা থেকে দলের বোঝা হয়ে উঠছিলেন তিনি।
কলকাতা অবশ্য নিজের পুরনো সেনানীর উপর থেকে কখনোই ভরসার হাত সরায়নি। বরং রাসেলের ইনজুরির সময়টাতে সেরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, সময় দিয়েছে পুর্নবাসনের। রাসেলকে ছেড়ে দেয়া তো দূর, বরং ২০২২ আইপিএল নিলামের আগে ১৬ কোটি রুপির বিশাল অংকের বিনিময়ে ধরে রেখেছে তাঁকে।
অফ ফর্মের দিনগুলোতে সবাই রাসেল সমালোচনায় মুখর থাকলেও টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিকই খেলিয়ে গিয়েছে রাসেলকে। তাঁরা জানতেন রাসেল ফিরলে তাঁকে রুখবার সাধ্য নেই কারো। রাসেলও সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন দলের সবচাইতে জরুরি সময়ে জ্বলে ওঠে।
পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াইয়ে শেষ চার ওভারে জয়ের জন্য ৫১ রান প্রয়োজন ছিল কলকাতার। আর্শদ্বীপ সিং, স্যাম কুরান, নাথান এলিসদের মতো স্বীকৃত ডেথ বোলারদের বিপক্ষে কাজটা সহজ নয় মোটেই।
কিন্তু, রাসেল যেদিন ছন্দে থাকেন সেদিন তাঁকে থামানোর উপায় যেন কারোরই জানা নেই। ইডেন গার্ডেন্সে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিলেন প্রতিপক্ষের বোলারদের উপর। ২৩ বলে সমান তিনটি করে চার আর ছক্কায় ৪২ রান যখন সাজঘরে ফিরছেন ততক্ষণে ম্যাচ পকেটে পুরে নিয়েছে কলকাতা।
রাসেল হারিয়ে গেছেন, পুরনো রাসেল ফিরবেন না – এক ইনিংসের যেন সব সমালোচনা উড়িয়ে দিলেন এই তারকা। বুঝিয়ে দিলেন টি- টোয়েন্টিতে আজও ফিনিশার হিসেবে আন্দ্রে রাসেলই শেষ কথা।