আর মাত্র দুটি ম্যাচ। এরপরেই শেষ হতে যাচ্ছে দুই মাসের ক্রিকেটযজ্ঞের। দুই মাসের এই ক্রিকেটযজ্ঞে হয়েছে অসংখ্য দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, দারুণ সব রেকর্ড। তরুণ খেলোয়াড়েরাও পুরোনোদের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে নাম তুলেছেন রেকর্ডের পাতায়।
এই যেমন এক মৌসুমে প্রথম দল হিসেবে দুইশোর বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। কিংবা রান তাড়া করতে নেমে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডটা কলকাতার রিঙ্কু সিংয়ের।
প্লে অফে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন আকাশ মাধওয়াল। আইপিএলের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে প্লে অফে পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন মুম্বাইয়ের এই পেসার। এছাড়াও পাঁচ রানে পাঁচ উইকেট শিকার করে আইপিএলে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগারের কীর্তিও এখন আকাশের। ভাগ বসিয়েছেন ২০০৯ আসরে অনিল কুম্বলের রেকর্ডে।
এছাড়াও এবারের আসরে তৃতীয় বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট পেলেন আকাশ। আগের দুটো কীর্তিও দুই পেসারের। লখনৌ পেসার মার্ক উড প্রথমবার পাঁচ উইকেট শিকারের পর হায়দ্রাবাদ পেসার ভুবনেশ্বরও পান পাঁচ উইকেট।
চলতি আসরে রীতিমতো হয়েছে রানবন্যা। ৩৫ বার দলীয় ইনিংস দুইশো রান পেড়িয়েছে। যা আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়াও চারবার দুইশো রান তাড়া করেও জিতেছে দলগুলো। সেই চারটি দল হলো-মুম্বাই, লখনৌ, কলকাতা ও পাঞ্জাব।
এরমধ্যে ১৫ টি ম্যাচ দেখেছে দুই ইনিংস মিলিয়ে চারশোর বেশি রান যেটিও আইপিএলের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। ১২ টি ম্যাচে দুটো দলই পেড়িয়েছে দুইশো রানের গন্ডি। যা গত আসরে গড়া রেকর্ড অতিক্রম করেছে।
১৫ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারের তালিকায় শীর্ষে আছেন গুজরাট পেসার মোহাম্মদ শামি। এক উইকেট কম নিয়ে তাঁর পরেই আছেন গুজরাটে তাঁর সতীর্থ রশিদ খান।
দল প্লে অফে ওঠার আগেই বাদ পড়লেও এখনো রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার ওপরে আছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ৫৬.১৫ গড়ে ৭৩০ রান করেছেন ডু প্লেসিস। ১৪ ম্যাচে ৩৬ টি ছক্কা হাঁকিছেয়েন এই দক্ষিন আফ্রিকান ব্যাটার যা এই আসরের সর্বোচ্চ।
এছাড়াও আসরে আটটি অর্ধশতক করেছেন তিনি। তাঁর ওপেনিং পার্টনার বিরাট কোহলিও এই আসরে করেছেন দুটি সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটি। বিরাট ও ডু প্লেসির আটটি পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস চলতি আইপিএলের সর্বোচ্চ। এই দুজন মিলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ব্যাঙ্গালুরুকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। এই দুজনের পার্টনারশিপ থেকে ১৪ ম্যাচে এসেছে মোট ৯৩৯ রান। যা জুটি হিসেবে এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
এই দুজনের পার্টনারশিপ ভাগ বসিয়েছে ব্যাঙ্গালুরুরই আরেকটি জুটির রেকর্ডে। সেই রেকর্ডেও জড়িয়ে আছে বিরাট কোহলির নাম। ২০১৬ সালে আরেক দক্ষিন আফ্রিকান এবিডি ভিলিয়ার্সের সাথে পার্টনারশিপেও মোট ৯৩৯ রানই তুলেছিলেন বিরাট। তবে বিরাট-এবিডির ৭৮.২৫ গড়কে ছুঁতে পারেনি বিরাট-ডু প্লেসিস জুটি। চলতি আসরে তাদের গড় ৬৭.০৭।
চলতি আসরে ৫০০’র বেশি রান করেছেন সাতজন ব্যাটার। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট মুম্বাইয়ের সুরিয়াকুমার যাদবের। ১৮৩.৭৮ স্ট্রাইকরেটে ৫৪৪ রান করেছেন সুরিয়া।
এই আসরের অন্যতম আবিষ্কার কলকাতার রিঙ্কু সিং। গুজরাটের বিপক্ষে শেষ ওভারে পাঁচ ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানো রিঙ্কু চলতি আসরে মেরেছেন ২৯টি ছক্কা। এই ২৯ টি ছক্কার ২২টিই মেরেছেন রান তাড়া করতে নেমে। রান তাড়ায় রিঙ্কুর চেয়ে বেশি ছক্কা মারতে পারেননি আইপিএলের আর কোনো ব্যাটারই।
আইপিএলের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে এক আসরে সবচেয়ে বেশি দুইশো বা তার বেশি রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। চলতি আসরে ছয়বার দুইশো পেড়িয়েছে মুম্বাই। এর মধ্যে চারটি ইনিংস ছিলো দুইশো রান তাড়া করতে নেমে। যেটিও আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এই ছয় ইনিংসের পাঁচটিই মুম্বাই খেলেছে নিজেদের মাঠ ওয়াংখেড়েতে। আইপিএল শুধু নয়, যেকোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে একটি নির্দিষ্ট ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি দুইশো রানের ইনিংস খেলার রেকর্ডও মুম্বাইয়ের।
এবারের আইপিএলটা যাচ্ছেতাই ভাবে কেটেছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের। টেবিলের তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করেছে বলে শুধু নয়, অংশ হতে হয়েছে অসংখ্য লজ্জার রেকর্ডের। আইপিএলে প্রথম দল হিসেবে টানা তিন ম্যাচে কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি হজম করতে হয়েছে হায়দ্রাবাদকে। শুভমান গিল, বিরাট কোহলি ও ক্যামেরন গ্রিন হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে করেন সেই তিনটি শতক।
এছাড়াও আইপিএলের এক আসরে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি। চলতি আসরে ১১ টি সেঞ্চুরির সাক্ষী হয়েছে আইপিএল। দুটি করে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন শুভমান গিল ও বিরাট কোহলি। এছাড়াও হ্যারি ব্রুক, ভেন্কাটেশ আইয়ার, যশস্বী জয়সওয়াল, সুরিয়াকুমার যাদব, প্রভসিমরান সিং, হেনরি ক্লাসেন ও ক্যামেরন গ্রিন একটি করে সেঞ্চুরি করেছেন।
এই আসরে দুটি সেঞ্চুরির মাধ্যমে আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন বিরাট কোহলির। সাত সেঞ্চুরি করে পেছনে ফেলেছেন আইপিএলের আরেক কিংবদন্তি ক্রিস গেইলকে।
ব্যাটারদের জন্য মধুময় এই আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১০৮৫ টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ব্যাটাররা। দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই এক আসরে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড ভেঙেছে এবারের আইপিএল। ২০২২ আসরে হয়েছিলো ১০৬২ টি ছক্কা।
এই ১০৮৫ টি ছক্কার পাশাপাশি ২১০৮ টি চারও মেরেছেন ব্যাটাররা। যেটিও আবার আইপিএল রেকর্ড। গত আসরে ২০১৭ টি চার হয়েছিলো আইপিএলে।