একটা প্রশ্ন দিয়েই শুরু করি। ওয়ানডেতে লিটন দাসের ব্যাটে শেষ সেঞ্চুরি কবে দেখেছিলেন? মনে করাটা একটু কঠিনই বটে। কেননা প্রায় ৪৮৫ দিন কেটে গেছে তার শেষ সেঞ্চুরির। সেই যে ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেলেন, ওই শেষ। এরপর কেটে গেছে ২০টি ম্যাচ। আর প্রায় দেড় বছর।
না, গুরুতর কিছু হয়ে যায়নি। লিটন দাস প্রবল রান খরায় দিন পার করছেন তেমনটি না। আবার যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করা হয় তবে অদূরে কিঞ্চিৎ দুশ্চিন্তা উঁকি দিতে দেখা যাবে নিশ্চিত। কাব্যিক কাভার ড্রাইভ খেলা লিটন দাসের যে ২০২৩ বছরটি একেবারেই যাচ্ছে না ভাল।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লিটন দাস পিষ্ঠ হয়েছেন প্রত্যাশার চাপে। প্রতিভাবান তিনি, তবুও কি নিদারুণ কষ্ট করতে হয়েছে তাকে বাইশ গজে। প্রতিটি রানের জন্যে করতে হয়েছে সংগ্রাম। প্রতিটি দিন কাটাতে হয়েছে সমালোচনার তীব্র ব্যথা সহ্য করে। সেখান থেকে পাশার দান উল্টে যায় ২০২২ সালে। শুধুমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেটের বিচারেই কি দুর্দান্ত একটা বছর তিনি কাটালেন!
নামের পাশে প্রায় ৬০০ রান। হাফ সেঞ্চুরি ছাড়ানো গড়। যা কিছু লিটনের থেকে ছিল প্রত্যাশিত, তাই তিনি করে দেখিয়েছেন। বছর জুড়ে ১৩ ওয়ানডেতে রান করেছেন ৫৭৭। সেঞ্চুরি একটি, হাফ সেঞ্চুরি চারটি। বাকি ফরম্যাটেও তিনি নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। লিটনের সেই দুরন্ত বছরকে তো দেশীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো স্বীকৃতিও দিল। তাকে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাবে ভূষিত করল।
কিন্তু সেখান থেকে আবারও যেন পুরনো রুপেই আবির্ভূত হতে শুরু করেছেন লিটন দাস। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর। স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি ভরসা থাকছে লিটনের উপর। কিন্তু চলতি বছরে পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে কেমন একটা নিজের ছায়ায় পরিণত হয়েছেন। রান করছেন। তবে সেগুলো বড় হচ্ছে না। দুশ্চিন্তার জায়গা তো সেটাই।
২০২৩ এ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিনি রান করেছেন মোটে সাত। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ সামলাতে তো হিমশিম খাওয়ার কথা নয় লিটনের। অন্তত তার ক্যালিবারের একজন ব্যাটারের কাছ থেকে এটা অপ্রত্যাশিতই বটে। তবুও তেমনটা হয়েছে। এরপর যদিও রানে ফিরেছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে দুইটি হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন।
তারপর আবার সেই একই দশা। রান হয়, কিন্তু বড় হয় না। নয় ম্যাচে গড়টা আগের বছরের ঠিক অর্ধেক, প্রায় ২৬। আরেকটা নিরিখ হতাশা বাড়ায়। ২০২২ সালে কোন ইনিংসেই শূন্য রানে ফেরেননি লিটন। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে তিন দফা তিনি আউট হয়েছেন শূন্য রানে। যা কিনা তার ক্যারিয়ারে বছরের হিসাবে ওয়ানডে ক্রিকেটে যৌথ সর্বোচ্চ। এমনকি ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ফেলে দেওয়ার নয়।
সেটাই মূলত চিন্তার কারণ। বাংলাদেশ দলের ওপেনিং পজিশনটা বেশ ঠুনকো অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খেলতে থাকা তামিম ইকবাল ফর্মহীনতায় ভুগছেন, সাথে ইনজুরি তার পিছু ছাড়ছে না। এদিকে লিটন দাসও নিজেকে হারিয়ে ফেললেন। ২০২২ সাল যদি হয় দারুণ নিয়ন্ত্রণে খেলা রিভার্স সুইপ। তবে ২০২৩ যেন ফেরত এসে বুকে আঘাত করা বল।
যদিও লিটন কালেভদ্রে কথা বলেন, সংবাদ মাধ্যমে। তবে যখনই বলেছেন তিনি জানিয়েছেন যে এই ফর্মহীনতা নিয়ে তিনি খুব বেশি চিন্তিত নন। লিটনকে এও বলতে শোনা গেছে, ব্যাটারদের এমন উত্থান-পতন থাকবেই। সেটা অবশ্য ঠিক। তবে এত দ্রুতই লিটনের ফর্ম পড়তে শুরু করে দেবে সেটাও নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত ছিল না কারোই।
তবে সময় এখনও বাকি। বাংলাদেশ তথা লিটনের সামনে বেশকিছু সুযোগ রয়েছে নিজেকে আবারও ফিরে পাওয়ার। তার থেকেও বড় বিষয়, তাকে ভাবা হচ্ছে বাংলাদেশের পরবর্তী অধিনায়কদের একজন। এমন সময়ে নিজের ফর্মটা ধরে রাখাই হয়ত তার মূল চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া একটি আন্তর্জাতিক শিরোপার যে স্বপ্ন বাংলাদেশ লালন করে, সেটা অর্জনেও তো লিটনকে চাই টাইগারদের।
ফিরবেন তো লিটন? দু’হাত উঁচিয়ে, তাবড় বোলারদের শাসক হিসেবে? হয়ত..