যে বিতর্কের রেশ এখনও কাটেনি

লর্ডস টেস্টে জনি বেয়ারস্টোর আউট বিতর্ক যেন শেষই হচ্ছে না। অনেকেই ইংল্যান্ডের পক্ষ নিয়ে বেয়ারস্টোর আউটকে ক্রিকেটীয় চেতনার পরিপন্থী বলছেন। আবার অনেকেই বেয়ারস্টোর অসতর্কতাকে দায়ী করছেন। এতটুকু পর্যন্ত গড়ালেও ঠিক ছিল।

কিন্তু বেয়ারস্টোর এক আউট বিতর্ক নিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। দুই দলের কোচ, অধিনায়ক ও ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থার মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্যরা এ ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িয়েছেন। ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজার সঙ্গে ঝামেলার জেরে এমসিসির তিন সদস্য নিষিদ্ধও হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাগযুদ্ধে জড়িয়েছেন ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও।

চলমান এ বিতর্কে এবার বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে নিজস্ব মতামত দিয়েছেন সাবেক আম্পায়ার সাইমন টোফেল। অস্ট্রেলিয়ার এ আম্পায়ারের মতে, বেয়ারস্টোকে আউট দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

এ নিয়ে অস্ট্রেলিয় গণমাধ্যম সিডনি মর্নিংসকে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড এটা পছন্দ করেনি। তবে টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। একটা বল বা ওভার তখনই ডেড বিবেচিত হবে, যখন দুই দলই মনে করবে সেটা আর খেলার মধ্যে নেই। পরিষ্কার বোঝা গেছে, ফিল্ডিং দল বলকে ডেড ভাবেনি।’

বেয়ারস্টোর আউট বিতর্কের সূত্রপাত ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৫৩ তম ওভারে। তো ঐ ওভারে গ্রিনের একটি বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর ক্রিজে ব্যাট না ঠেকিয়েই বেয়ারস্টো বেরিয়ে যান ক্রিজ থেকে। ঠিক তখনই অজি উইকেট রক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি পিছন থেকে বল ছুঁড়ে উইকেট ভেঙে দেন।

ওভারের শেষ বল হওয়ায় ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ভেবেছিলেন বলটা ‘ডেড’ হয়ে গেছে। কিন্তু অ্যালেক্স ক্যারি স্ট্যাম্পে ডিরেক্ট থ্রো করলে আউটের জোরালো আবেদন জানায় অস্ট্রেলিয়ানরা। অনফিল্ডে থাকা দুই আম্পায়ার এহসান রাজা ও ক্রিস গ্যাফানি এরপর তৃতীয় আম্পায়ার মারাইস এরাসমাসের সহায়তা চান। এর কিছুক্ষণ বাদে তৃতীয় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলে শুরু হয় বিতর্ক। যে বিতর্কের রেশ কমেনি এখনো। মূলত ম্যাচটা ইংলিশরা ৪৩ রানে হারায় বিতর্কের মাত্রা বাড়তে থাকে আরো।

তবে এমন বিতর্কের বিপরীতে প্রফেশনাল যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে ৮ টি প্রশ্ন সম্বলিত নিজের মতামত দিয়েছেন সাইমন টোফেল। রেকর্ড পাঁচ বারের আইসিসি বর্ষসেরা আম্পায়ারের স্বীকৃতি পাওয়া টোফেল সেখানে লিখেছেন, ‘আমার কাছে বারবার কিছু প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে। যেটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা প্রয়োজন। তার আগে আমার ৮ টি প্রশ্ন আছে।

  • আপনি কি কোনো আম্পায়ারকে বলতে দেখেছেন, উইকেটরক্ষক স্ট্যাম্প থেকে বেশ পেছনে দাঁড়িয়ে থাকলে স্টাম্পিং করতে পারবে না?
  • প্রথম ইনিংসে বেয়ারস্টো নিজেই যখন লাবুশানেকে  একইভাবে স্ট্যাম্পিং করার চেষ্টা করেছিল। তখন কেন কেউ অভিযোগ করেনি?
  • বেয়ারস্টো নিজে কেন চুপ আছে? নিজের আউট নিয়ে তাঁরই তো সরব থাকা প্রয়োজন। সে এখন নিরব কেন?
  • আমার অভিজ্ঞতা বলে, যখন কেউ ক্রিকেটের আইনের অধীনে কোনো আউট পছন্দ করে না, তখন নিজেদের যুক্তি দাঁড় করাতে তাঁরা ক্রিকেটীয় চেতনার কথা তোলে।
  • অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটীয় চেতনার কী লঙ্ঘন করেছে?
  • অস্ট্রেলিয়া কি অন্যায়ভাবে তাঁকে আউট করার চেষ্টা করেছিল? কেউ কি ব্যাটারকে ধাক্কা মেরেছিল, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছিল অথবা ক্রিজে ঢুকতে বাঁধা দিয়েছিল?
  • বেয়ারস্টোর নিজের অসতর্কতার জন্যই সে আউট হয়েছে। আম্পায়ার ওভার শেষের ঘোষণা না দেওয়ার আগেই সে ক্রিজ ছেড়েছে। এটার দায় কিভাবে এড়ানো যায়?
  • আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত ও আইন অনুযায়ী স্টার্কের ক্যাচকে বৈধতা না দেওয়ার পর ইংল্যান্ড কি বেন ডাকেটকে প্যাভিলিয়নে চলে আসতে বলেছিল?

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এ আম্পায়ার তাঁর পোস্টে এ ৮ টি প্রশ্ন রাখার পর লিখেছেন, ‘ক্রিকেটীয় চেতনার নাম করে এমন দ্বিচারিতা খুবই উদ্বেগজনক ক্রিকেটের জন্য। হয়তো আমি সেটা বলার কেউ না। তবে ভাল ব্যাপার হচ্ছে, আমি টেস্ট ক্রিকেটের সাথেই সক্রিয়ভাবে জড়িত, যেটাকে এখনো আমি ক্রিকেটের সেরা সংস্করণ বলেই মানি।’

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link