স্রেফ ভাল ফিল্ডার বলেই কি-না দলে এলেন। আবার অদ্ভুত কোন এক কারণে ওয়ানডে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়লেন। শামীম হোসেন পাটোয়ারিও সম্ভবত নিজের ভুলটা কোথায় বুঝতে পারেন না। তিনিও হয়ত একটা ঘোর অন্ধকারের মধ্যে থেকেই অপেক্ষা করেন সুদিনের।
সুদিন যে শামীমের একেবারেই আসে না, তাও কিন্তু নয়। আসে, তবে অনিয়মিতভাবে। ধারাবাহিকতার কোন বালাই নেই। যখন ইচ্ছে হয়, শামীম দলে যুক্ত হন। আবার টিম ম্যানেজমেন্টের তাড়াহুড়োতে আলোচনার বাইরে চলে যান। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ক্যারিয়ারে শামীম এই মুহূর্তগুলো বেশ ক’বার দেখে ফেলেছেন। অথচ তিনি হতে পারতেন সাত নম্বর সমাধান।
হ্যা, যেই সাত নম্বর পজিশন নিয়ে বিশ্বকাপের আগে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। সেই সাত নম্বরে শামীম হতে পারতেন কার্যকর এক সমাধান। নতুন করে শামীম হোসেন পাটোয়ারি নিজেকে সেই আলোচনায় যুক্ত করলেন। নিজের সামর্থ্য আর টেম্পারমেন্টের প্রতিফলন ঘটিয়ে, তবেই তিনি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছেন।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটাই শামীমকে নিয়ে হওয়া আলোচনার উদ্রেক ঘটিয়েছে। ২৫ বলে ৩৩ রানের দারুণ এক ইনিংস। দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দেওয়া। এরপর রানের চাকা সচল রাখা। ‘আস্কিং রানরেট’ অনুযায়ী ব্যাট করা। সাত নম্বরে যা প্রয়োজন, তা সবই তো করলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি।
এই একই ধরণের কাজ তিনি নিশ্চিতভাবেই করতে পারতেন ওয়ানডে দলের হয়েও। অথচ শামীমকে কখনো ওয়ানডে দলের জন্য বিবেচনাই করা হয়নি। তিন বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শামীমের। তড়িঘড়ি করে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। ২০২২ সালের পুরোটা সময় তিনি আবার ছিলের জাতীয় দল থেকে বহুদূরে। কারণটা ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পারফরমেন্স দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারা।
কিন্তু এর পরবর্তী সময়েই তো ওয়ানডে দলে সাত নম্বর পজিশনে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবর্তমানে লোয়ার মিডল অর্ডারে একজনকে তো প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ বহুজনকে বাজিয়েও দেখেছে। আশানুরুপ ফলাফল মেলেনি। তেমনটা হওয়ার তো কথা না। কিন্তু দল যে কাউকেই খুব বেশি সময় দেয়নি। টিম ম্যানেজমেন্ট চেয়েছে দ্রুত সমাধান।
কিন্তু একটা সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে সম্ভবত চিন্তাহীন এক বিশ্বকাপ যাত্রা করতে পারত বাংলাদেশ। সে প্রক্রিয়ার আওতায় শামীম হোসেনকে আরও বছর খানেক আগে থেকেই গড়ে তোলা যেতে পারত। যেমনটা করা হয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তর উপর, লিটন কুমার দাসের উপর। তারা কিন্তু আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন । তাদেরকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সুফল পেতে শুরু করেছে দল।
কিন্তু শামীমের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো। ধর তক্তা, মার পেরেক। বয়সে বেশ তরুণ শামীমের কাছে প্রত্যাশা করা হয়েছে যে, তিনি স্বল্প সুযোগেই করবেন বাজিমাত। একেবারে প্রথম বল থেকেই বাংলাদেশের ‘হার্ডহিটার’ সমস্যার সমাধান হবেন তিনি। স্লগ ওভারে দ্রুত রান তুলে দেবেন। দলের বিপর্যয়ের দিন হাল ধরবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়ার ঠিকঠাক সুযোগও যেন তিনি পাননি।
তিন বছরের ক্যারিয়ারে একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ মোট ম্যাচ খেলেছেন ১৬টি। সমস্যা হলো কখনোই ধারাবাহিকভাবে দলে থেকে তিনি ম্যাচগুলো খেলতে পারেননি। দলে এসেছেন। পারফর্ম করবার চাপ মাথায় নিয়ে খেলেছেন। ব্যর্থ হয়েছেন। দল থেকে বাদ পড়েছেন।
তবে একেবারেই ‘আষাঢ়ে গল্প’ যে নয় তার সামর্থ, সেটাই আরও একবার জানিয়ে দিলেন তিনি। তাইতো তাকে টিম ম্যানেজমেন্ট আসন্ন বিশ্বকাপের ভাবনায় রাখতেই পারেন। কিন্তু ভাবনায় রাখা আর দলে রাখা এক নয়। এই মুহূর্তে শামীমকে দলের সাথে যুক্ত করাটা হতে পারে খাল কেটে কুমিড় ডাকার সামিল। সেটা শামীমের ক্যারিয়ার আর বাংলাদেশ দল, দু’ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
শামীমের উপর হুট করে প্রত্যাশার চাপ চাপিয়ে দিয়ে দেওয়াই হবে এখন তাকে বিশ্বকাপের দলে যুক্ত করলে। তাতে শামীম নিজের স্বাভাবিক খেলাটা হয়ত খেলা থেকে বঞ্চিত হবেন। সেক্ষেত্রে আবারও দল থেকে বাদ পড়ে যেতে পারেন তিনি। এ দফা বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরবে না, সে নিশ্চয়তা নিশ্চয়ই নেই।
দ্বিতীয়ত, শামীম এখনও বিশ্বকাপের মত বড় আসরে খেলার মত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারেননি। তাছাড়া তার খানিকটা ‘গ্লোরি’ খোঁজার প্রবণতাও আছে। সেটা অবশ্য মানসিক অপরিপক্কতার কারণে। নিয়ম করে সুযোগ পেলে সেটাও কেটে যেতে পারত। তবে যেহেতু সুযোগ তিনি পাননি, সেহেতু তাকে এখন দলে নেওয়াটা সমীচীন হয়ত হবে না।
কিন্তু বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে তাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। তাতে অন্তত আগামী বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলকে লোয়ার মিডেল অর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে না। মোদ্দাকথা সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের সঠিক একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
হুট করে একজনকে রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে, তার কাছ থেকে চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স আশা করা নেহায়েত বোকামি। অন্তত বাংলাদেশ আরও একবার সে পথে নিশ্চয়ই হাঁটতে চাইবে না।