কেন কানাডায় লিটনদের রান যোগ হবে না রেকর্ড বুকে!

চারদিকে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের যেন একটা জোয়ার বইছে। আমেরিকার এক প্রান্তে চলছে মেজর লিগ ক্রিকেট। আর ঠিক তার পাশের দেশেই চলছে গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডা। ভুরি ভুরি এমন টি-টোয়েন্টি লিগের কল্যাণে সুযোগ খুলে যাচ্ছে ক্রিকেটারদেরও। লম্বা হচ্ছে ক্রিকেট সূচি। মধুর ব্যস্ততায় দিন কাটছে খেলোয়াড়দের। 

এমন সব লিগে বৈশ্বিক তারকাদের সাথে নাম লেখাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। সাকিব আল হাসান তো আগে থেকেই ছিলেন টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালাদের তালিকায়। এখন যুক্ত হচ্ছেন লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয়, তাসকিন, শরিফুলরাও। 

তবে বিদেশি এই সব লিগই কিন্তু আইসিসি স্বীকৃত না। এই যেমন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডায় লিটন দাস ৪৫ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হলেন। কিন্তু এ পরিসংখ্যান কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ারের খাতায় যুক্ত হচ্ছে না। কিভাবে?

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী কোন লিগের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে হলে লিগগুলোকে আইসিসির পূর্ণ সদস্য প্রাপ্ত দেশে আয়োজিত হতে হবে। আমেরিকা কিংবা কানাডা কেউই আইসিসির পূর্ণ সদস্য না। তাঁরা মূলত আইসিসির সহযোগী দেশ। আর সে কারণেই তাদের দেশে আয়োজিত এ ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ গুলো স্বীকৃত কোনো টুর্নামেন্ট না। 

তবে কি এসব টুর্নামেন্ট গুলোর বৈধতাও নেই ? উত্তরটা হচ্ছে- হ্যাঁ। মেজর লিগ ক্রিকেট কিংবা গ্লোবাল টি-২০ — দুটি লিগেরই আয়োজনের বৈধতা আছে। কিন্তু বৈধতা থাকলেও লিগ গুলোর স্বীকৃতি নেই। আর এ কারণেই ক্যারিয়ারের স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানের খাতা লিটন দাসের এসব রান কিংবা সাকিবের উইকেট— কোনোটাই যুক্ত হবে না৷ 

লিগ আয়োজনের বৈধতা নিয়ে সম্পূরক আরেকটি লিগের ইতিহাস টেনে আনা যেতে পারে, যেটি এখন বিলুপ্ত। অনেকেই মনে করেন, ইতিহাসের প্রথম ফ্রাঞ্চাইজি লিগ হচ্ছে আইপিএল। কিন্তু, তথ্যটা সত্য নয়। 

ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফ্রাঞ্চাইজি লিগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল আইসিএল। কিন্তু এই লিগটি ২ আসর পরে আর আলোর মুখ দেখেনি। এর কারণটা ছিল, আইসিএল কর্তৃপক্ষ আইসিসির অনুমতি না নিয়ে লিগটি আয়োজন করেছিল। আর এ কারণেই ২০০৭ সালে লিগটিকে বিদ্রোহী লিগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

এ ছাড়া প্রত্যেক বোর্ডকেই নির্দেশ দেওয়া হয়, যারা আইসিএলে অংশ নিয়েছে তাদের যেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকেও সে টুর্নামেন্ট ঢাকা ওয়ারিয়র্স নামে একটি দল অংশ নিয়েছিল। আর পরবর্তীতে সেই দলে থাকা সব ক্রিকেটারকেই নিষিদ্ধ করে বিসিব। যদিও কিছু বছর পরেই ক্রিকেটারদের সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। 

মেজর লিগ ক্রিকেট কিংবা গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডার মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ইন্টারন্যাশনাল লিগ টি-২০ নামে একটি ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চল রয়েছে। যেটির বৈধতা থাকলেও নেই কোনো আইসিসির স্বীকৃতি। তাই এসব টুর্নামেন্টে বড় বড় তারকার উপস্থিতি থাকলেও দিনশেষে তা একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে ফলশূন্যই থাকবে। এসব লিগ গুলোর মাধ্যমে কিছুটা অর্থযোগই হবে শুধু। 

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, আইসিসি অনুযায়ী ২০ ওভারের ফরম্যাটটাই সবচেয়ে ছোট সংস্করণ। তাহলে জিম-আফ্রো টি-১০ লিগ, আবুধাবি টি-১০ লিগ, ইউএস মাস্টার্স টি-১০ লিগ— ১০ ওভারের এসব টুর্নামেন্টের বৈধতা কিভাবে মিলছে?

উত্তরটা হচ্ছে, আয়োজনের বৈধতা আছে। কিন্তু কোনো স্বীকৃতি নেই। অর্থাৎ ক্রিকেটারদের এসব টুর্নামেন্ট খেলার উদ্দেশ্যটা হয়ে যায় অনেকটা পারিশ্রমিক নির্ভর। এ ছাড়া, একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে এসব টুর্নামেন্টের কোনো গুরুত্ব নেই। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link