নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে।
যে মাটিতে তাঁর জন্ম, সব ক্রিকেটারই চায় সেখানটাকে বিশ্ব আসরে তুলে ধরতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিজ দেশ ছেড়ে অন্য এক দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন কোন ক্রিকেটার। এই দেশ ছাড়ার অবশ্য কারণও থাকে। সেই কারণ হতে পারে অর্থনৈতিক, খ্যাতির মোহ কিংবা একান্তই ব্যাক্তিগত সিদ্ধান্ত। তবে এমনও কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা কিনা নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে ফিরে গেলেও পরে আবার ফিরে এসেছেন নিজ মাতৃভূমিতে । সেরকমই পাঁচজনের গল্প থাকছে আজ।
- কাইল জার্ভিস
হিথ স্ট্রিকের পর কাইলি জার্ভিস ছিলেন জিম্বাবুয়ের সবচাইতে প্রতিভাবান পেসার। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়াতে যে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হয় সেখানে প্রথমবারের মত আলো কাড়েন তিনি। ওই সময়ের জিম্বাবুয়ে কোচ স্ট্রিক তখনই বুঝে গিয়েছিলেন জার্ভিসের প্রতিভা। তিনিও জার্ভিসকে দ্রুত দলে নিয়ে আসলেন।
২০০৯ সালে কেনিয়ার সাথে অভিষেকও করিয়ে দিলেন। সাদা পোশাকের অভিষেকটাও যখন ২০১১ সালে হয়ে গেল, জার্ভিসকে নিয়ে বড় স্বপ্নই দেখছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাঁধ সাধলেন জার্ভিস নিজেই। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমালেন। ২০১৮ পর্যন্ত কাটিয়েছেন ল্যাঙ্কাশায়ার ক্রিকেট ক্লাবেই। তবে পাঁচ বছরের চুক্তি শেষ হলে আবারও জিম্বাবুয়ে ফিরে আসেন তিনি।
- ব্রেন্ডন টেইলর
ব্রেন্ডন রস মুর টেইলর ছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক। ততদিন অব্দি জিম্বাবুয়ের সবচাইতে বড় ব্যাটিং ভরসার নাম ছিলেন টেইলর । ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ ক্রিকেটার বিপ্লব করায় সে বছরই শ্রীলঙ্কার সাথে অভিষেক হয় টেইলরের। সিরিজের প্রথমদিকে নিজের জাত চেনাতে না পারলেও শেষ ওয়ানডেতে ৭৪ রানের এক ইনিংস খেলে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ফুরিয়ে যেতে আসেননি। এভাবেই চলতে থাকল টেইলরের পথ চলা। ২০০৭ বিশ্বকাপ দলেও সুযোগ পেয়ে গেলেন তিনি।
টেইলরকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের পথচলা ঠিকঠাকই চলছিল। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬০ রান করে দলকে জিতিয়ে দেওয়ার মত আরও কিছু ম্যাচ তিনি জিম্বাবুয়েকে জেতাচ্ছিলেন। তবে, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দল থেকে অবসর নিয়ে তিনি পাড়ি দেন ইংল্যান্ডে, নটিংহ্যামশায়ারের সাথে চুক্তিতে। তবে সেখান থেকে তিনি আবারও দেশের জন্য ফিরে আসেন ২০১৭ সালেই; লাল জার্সিতে।
- এড জয়েস
জয়েসের জন্ম হয়েছিল আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। তবে আয়ারল্যান্ডে জন্মালেও শুরু থেকেই ইংলিশ ক্রিকেটের প্রতি ঝুঁকে যান তিনি। ১৯৯৯ সালে মিডলসেক্সের সাথে চুক্তি করে তাঁর পথচলাও শুরু করেন। এড জয়েসের মূল শক্তিই ছিল তিনি দারুণ শট খেলতে পারতেন। ইংলিশ ক্রিকেটের বড় কর্তাদেরও তা নজর এড়ায়নি। দ্রুতই জয়েসকে তাঁরা অভিষেক করিয়ে দিলেন তাঁর দেশ আয়ারল্যান্ডের সাথে।
তবে কাউন্টিতে জয়েসের ব্যাট যতটা চওড়া ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ততটা চওড়া উইলো তিনি দেখাতে পারেননি। ফলে যা হবার তাই হল। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ইংলিশ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়তে হয় তাকে। এরপর আবার কাউন্টিতে ফিরে পারফর্ম করলেও নির্বাচকদের সুনজরে আসতে পারেননি তিনি।
অবশেষে ২০১০ সালে জয়েস সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি পাড়ি জমাবেন আয়ারল্যান্ডে। খেলবেন ২০১১ বিশ্বকাপে। কিন্তু, বাঁধ সাধল আইসিসির নিয়ম- জয়েসকে অপেক্ষা করতে হবে চার বছর। যদিও পরে আইসিসি নিয়ম শিথিল করে দেয় আর জয়েস আয়ারল্যান্ড দলে চলে আসেন। এড জয়েস ছিলেন একাদশ শতকের প্রথম ক্রিকেটার যিনি একই সাথে ইংল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলেছন।
- বয়েড র্যাংকিন
৬ ফুট ৮ ইঞ্চির বয়েড র্যাংকিন প্রথমদিকে ছিলেন রাগবি খেলোয়াড়। কিন্তু ছোট বয়সেই রাগবি থেকে ক্রিকেটে চলে আসেন তিনি, সুযোগ পেয়ে যান আয়ারল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৩ দলে। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম্যান্সের পর তিনি মরগান আর এড জয়েসের পথ বেছে নেন।
খেলতে শুরু করেন মিডলসেক্সের দ্বিতীয় একাদশে। তবে দ্বিতীয় একাদশ থেকে প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়ার মত পারফর্ম তিনি করতে পারছিলেন না। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ড থেকে ডাক এলে তিনি ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলাও শুরু করে দেন। ২০১২ অব্দি তিনি আয়ারল্যান্ডেই খেলেছেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হঠাৎ আয়ারল্যান্ড ছেড়ে ইংলিশ দলে সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
লম্বা এই পেসারকে অবশ্য নিরাশ হতে হয়নি। ২০১৩ সালেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা হয়ে যায় তাঁর। তবে সেখানেও থিতু হতে পারেননি, ২০১৫ সালে আবার ফিরে আসেন নিজ দেশে।
- কাইল অ্যাবট
২০১৩ এর ফেব্রুয়ারিতে অ্যাবটের টেস্ট অভিষেক হয় জ্যাক ক্যালিসের অনুপস্থিতিতে। সেখান থেকে পরে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও মরনে মরকেল-ভার্নন ফিল্যান্ডার-ডেল স্টেইন পেসত্রয়ের আলোয় বেশিরভাগ সময়েই অন্ধকারে থাকতে হয়েছে তাকে। এমনকি ২০১৫ বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েও নিউজিল্যান্ড ম্যাচে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলানোর কারণ দেখিয়ে অ্যাবোটকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাইডবেঞ্চে।
এভাবে তো আর বেশিদিন যায় না। ২০১৭ সালে ১৮.৬৩ গড়ে ১৮২ উইকেট নেওয়া অ্যাবোট তাই সিদ্ধান্ত নিলেন কলপ্যাক চুক্তিতে ইংল্যান্ড পাড়ি দেবার। তবে ব্রেক্সিটের পর কাউন্টির নিয়ম নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসে আর কাইলি অ্যাবোট আবার নিজ দেশে ফিরে আসবেন এমনটা ভাবতে থাকেন। অবশেষে এ বছর ২০২১ সালে তিনি ফিরে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্ট মোমেন্টাম ওয়ানডে কাপে খেলার জন্য টাইটান্স-এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি।