ইশ সোধি ফিরে যাচ্ছিলেন সাজঘরে। ফেরার সময় হঠাৎ ঘুরে বাংলাদেশ দলকে উদ্দেশ্য করে হাত তালি দিলেন। অধিনায়ক লিটন আম্পায়ার মারিয়াস ইরাসমাসের সাথে কথা বললেন। ডেকে পাঠালেন ইশ সোধিকে। সোধি ফিরে জড়িয়ে ধরলেন হাসান মাহমুদকে।
এই হাসানই নন-স্ট্রাইকার এন্ডে তাঁকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন কিছুক্ষণ আগে। ক্রিকেট মাঠে এই দৃশ্যটা রোজকার কোনো ঘটনা নয়। হাসান মাহমুদ ও লিটন দাস যে কাজটা করলেন, সেটা রীতিমত লেখা হয়ে গেল ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।
ঘটনার সূত্রপাত ৪৬ তম ওভারের তৃতীয় বলে। হাসান মাহমুদ তখন বোলিংয়ে। ইশ সোধি যে বারবারই বল রিলিজের আগে নন-স্ট্রাইকার এন্ড থেকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন – সেট লক্ষ্য করছিলেন তিনি। সুযোগটা কাজে লাগালেন হাসান। নন-স্ট্রাইকার এন্ডে রান আউটের ফাঁদে ফেললেন সোধিকে। টেলিভিশন রিপ্লেতেও দেখা গেল, ক্রিজের বাইরেই ছিলেন সোধি। সাবেকি ভাষায় যাকে বলে ‘মানকাডিং’।
আইনত এই আউটে কোনো বাঁধা নেই। আইসিসির স্বীকৃত আউটের বিধান। কোনো ব্যাটার চাইলেই বল রিলিজ হওয়ার আগে নন-স্ট্রাইকার এন্ড থেকে বের হতে পারবেন না। এগিয়ে থাকলে তিনিই বরং বেআইনী সুবিধা নিচ্ছিলেন।
তবুও, মানকাডিং নিয়ে একটা বিতর্ক আছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মত আছে। কেউ কেউ বলেন, এটা ক্রিকেটের স্পিরিটের সাথে যায় না। ক্রিকেটের স্পিরিটের সাথে না গেলে সেটাকে আইসিসির নীতিমালায় রাখার দরকার কি? ক্রিকেটের স্পিরিটের দোহাই ব্যাটারদের ক্ষেত্রেই কেন আসে? নন-স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা ব্যাটার বাড়তি সুবিধা নিবেনই বা কেন? প্রতিপক্ষ সেটা বুঝতে পেরেও কেন সুযোগ নিবে না?
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই আউটকে আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী দেখা হতো ‘আনফেয়ার বেনিফিট’ এর শাস্তি হিসেবে। অক্টোবর থেকে সেই টার্মও তুলে দেয়া হয়। এখন এটা কেবলই ‘রান আউট’। ফলে, এখানে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।
যাই হোক, সেই আলোচনা বাড়িয়ে দিলেন লিটন আর হাসান। আউট করেও আবার প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে তাঁরা ফিরিয়ে এনেছেন। সাহসী এক সিদ্ধান্ত, আবার কি ভিষণ এক দু:সাহস, চাইলে বোকামিও বলা যায়। রীতিমত অভাবনীয় ও অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। যত সময় গড়াবে লিটনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে। তবে, এটা ঠিক যে সমালোচনাও হবে।
ইশ সোধি যখন মানকাডের শিকার হন, তখন পর্যন্ত ১৭ রান করতে পেরেছিলেন। তিনি শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে করেন ৩৫ রান। মানে আরও ১৮ টা রান যোগ করেন। হাসানরা তখন সেই সুযোগটা না দিলে, এই ক’টা রান অন্তত হয় না। ম্যাচে বাংলাদেশের সুযোগ আরও বাড়ে।
প্রতিপক্ষকে ‘বেআইনী’ সুবিধা দেওয়াটাটা কোন নীতির মধ্যে পড়ে? ক্রিকেট অবশ্যই ভদ্রলোকের খেলা, তবে সেটা হতে হবে ক্রিকেটের আইনের মধ্যে থেকেই। আইন না মেনে সৌজন্যতা দেখানো, ভদ্রলোক বনে যাওয়াটা নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দূর্বল করে তোলে, ভুল একটা ধারণাকেও বাহবা দেওয়া হয়।
মাঠে যখন নামছেনই, তখন আইনের মধ্যে থেকে জয়ের জন্য শতভাগ দিতে হবে। এটাই ক্রিকেটের স্পিরিট। বাকি সব মিথ্যা, বাকি সব ভ্রান্তি। ক্রিকেটের স্পিরিট তখনই বজায় থাকবে – যখন আপনি আইন মানবেন। যে আইন, আইসিসি স্বীকৃত সেটা অমান্য করাটাই স্পোর্টসম্যানশিপের বরখেলাপ।
ধারাভাষ্যকাররাও বাহবা দিলেন। হাসানকে জড়িয়ে ধরলেন। সেই দৃশ্য সেই ছবি ভাইরাল হল। তবে, দিন শেষে এটাই সত্যি যে, একটা ভ্রান্তিকেই বাহবা দেওয়া হচ্ছে বারবার। প্রতিপক্ষকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার মধ্যে ভদ্রলোক-সুলভ ব্যাপার নেই, নেই কোনো স্পোর্টসম্যানশিপ। প্রকৃত স্পোর্টসম্যান তিনি নিজেকে উজার করে দেওয়ার মানসিকতা রাখেন।