দৃষ্টান্ত গড়েই ফিরে গেলেন তামিম

তামিম ইকবাল ফিরে গেলেন। একটা দৃষ্টান্ত রেখেই ফিরে গেলেন। তীব্র ক্ষুধা আর নিজেকে প্রমাণের তাড়নাকে প্রশ্রয় দিলেন না। আউট জেনেই নিজে ছেড়ে গেলেন নিজের জায়গা। এর আগে অবশ্য ভরসার প্রতীক হবার মতই এক ইনিংস উপহার দিয়ে গেলেন খান সাহেব।

৭৯ দিন বাদে ব্যাট হাতে বাইশ গজে হাজির তামিম ইকবাল খান। গায়ে তার চিরচেনা ২৮ নম্বর জার্সি। মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে উদগ্রীব হয়ে থাকা হাজার দর্শকদের তৃষ্ণাই যেন নিবারণ করলেন তিনি। দায়িত্বশীল একটা ইনিংস খেলেছেন বটে। যদিও সুখকর কিছু বয়ে নিয়ে আসেনি তার ইনিংসটি।  তবুও জানান দেওয়া তিনি প্রস্তুত।

কতশত কাণ্ড হয়ে গেল। তিনি বিদায় জানালেন ক্রিকেটকে। সেখান থেকে ফিরে এলেন। সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি চিকিৎসা করালেন ইনজুরির। সাময়িক এক প্রতিকার। তাতেও সহ্য করতে হয়েছে সমালোচনার দমকা হাওয়া। তবুও ফিরে আসার উদ্দমে দৃঢ় প্রত্যয়ী তামিম।

এশিয়া কাপের মিশনে ব্যস্ত গোটা দল। তামিম একাই লড়াই করলেন নিজের প্রত্যাবর্তনের আশায়। ফিরলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ঘরের মাঠে। তার বিদায়ে আর্তনাদ করা দর্শকদের মাঝে। ইনিংসের শুরুতে তিনি খানিকটা রয়েসয়েই খেলেছেন। প্রায় ৮০ দিন পর ব্যাট হাতে নেমেই তো আর ১৪০ কিলোমিটার গতি সাবলীলভাবে সামলানো যায় না। তিনি অপেক্ষা করলেন। নিজেকে একটু পরিচয় করিয়ে নিলেন নিজের দ্বিতীয় শুরুর সাথে।

অবশ্য উইকেট বোলারদের পক্ষেই ছিল। অন্তত নতুন চকচকে বলটা ছুড়লেই উইকেট বেশ আনন্দের সাথে তার গতিপথে হেরফের ঘটিয়েছে দিনের একেবারে শুরু থেকেই। তাইতো প্রথম পাওয়ার প্লে-এর পাঁচ ওভার শেষে তামিমের রান ১৯ বলে ৯। সেসব যেন পরিবেশের নিজেকে মানিয়ে নেওয়ারই চেষ্টা। লিটনের বিদায়ের পরই যেন তামিম ফিরলেন স্বরুপে। আগ্রাসনের হাত ধরে তিনি খেলতে থাকেন দূর্দান্ত সব শট।

পরের পাঁচ ওভারে ৩৫ রানে পৌঁছে গেলেন তিনি। পরবর্তী ১৭ বলে ২৫ রান এলো তার থেকে। সেটাই তো চিরচেনা তামিম। তবুও বিশাল এক বিরতি একটু হলেও তো প্রভাব ফেলার কথা। নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের বিপক্ষে সেই প্রভাবেরই প্রতিচ্ছবি। আবার একটু ধীর হলেন তামিম। ৯৭.২২ স্ট্রাইকরেটটা নেমে দাঁড়ায় ৭৫.৮৬ এ। তবে এর পেছনে কারণও রয়েছে। অপরপ্রান্তে যে চিরায়িত ছবির মত করেই আসা যাওয়ার মিছিল।

একটা প্রান্ত আগলে রাখার পুরনো দায়িত্ব আবারও হাজির তামিম ইকবাল খান। তাকে সামাল দিতেই হতো। দল যে একটা পর্যায় ৭০ রানে হারিয়েছিল ৪ খানা উইকেট। তিনি তাই দায়িত্ব নেওয়ারই চেষ্টা করলেন। তবে বেশিদূর অবধি যেতে পারলেন না। দলীয় ৯০ রানে তাকে থামতে হয় ব্যক্তিগত ৪৪ রানে। বহুদিন বাদে ফেরার দিনেও তাকে নিতে হয়েছে ইনিংস গড়ার কঠিন দায়িত্ব। তবে ইশ সোদির বলটায় সুইপ খেলতে চেয়েছিলেন। ব্যাটে-বলে সংযোগটা ঠিক হয়নি।

কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ারও সাড়া দেননি। তবে তামিম জানতেন তিনি আউট। তিনি জানতেন অযথা সময় নষ্ট করবার কোন মানে নেই। তাইতো তিনি কোন ধরণের জটিলতার সৃষ্টি না করেই হেটে গেলেন প্যাভিলনের দিকে। স্পিরিট অব গেম- এর আরও এক নিদর্শন চিত্রিত করলেন তামিম। ওই যে এশিয়া কাপে এক হাতে ব্যাটিং করবার দৃশ্যটা নিশ্চয়ই মনে আছে।

তামিমের আসলে ভারতে যাওয়া নিশ্চিত। বিশ্বকাপ দলে তিনি থাকছেন সেটা কোন ধরণের দ্বিধা ছাড়াই। তার স্রেফ প্রয়োজন ছিল ম্যাচ সিনারিওতে নিজেকে আবারও খাপ খাইয়ে নেওয়ার। একটি সুযোগ বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে। দ্বিতীয় সুযোগে তিনি খেললেন ৫৫টি বল। এক-দুই রানে খুব একটা স্বস্তি ছিল না। তবুও ১৬ রান এসেছে দৌড়ে। প্রস্তুতি তবে হয়ে গেছে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link