ক্রিকেট মাঠে তাঁরা নির্বাক এক চরিত্র। হুট করে হয়তো খুঁজেই পাওয়া যায় না। আবার তারা খুব গুরুত্বপূর্ণও বটে। কারণ, তাঁদের একটা সিদ্ধান্তই পাল্টে দিতে পারে ম্যাচের গতিবিধি। আম্পায়ারের কাজটা আবার খুবই ‘থ্যাঙ্কলেস জব’। কারণ, ভাল আর খারাপ আম্পায়ারের মাঝে পার্থক্যটা খুবই সামান্য। আবার একজন ভাল আম্পায়ারকে নিয়ে ক্রিকেটারদের মত কাব্য করা হয় না। অথচ, আম্পারের ভুল কোনো সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয় বিস্তর।
১.
আলিম দার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আন্তর্জাতিক ম্যাচে (৩৮৬) অন ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে আছে ১৩২ টি টেস্ট (সর্বোচ্চ সংখ্যক), ২০৮ টি ওয়ানডে (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ২০৯ টিতে ছিলেন রুডি কোয়ের্টজেন) ও ৪৬ টি টি-টোয়েন্টি (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৪৯ টিতে ছিলেন আহসান রাজা)। এছাড়া রুডি কোয়ের্টজেন ৩৩১ টি, স্টিভ বাকনার ৩০৯ টি, বিলি বাউডেন ৩০৮ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন।
২.
৩১ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে (২৬ ওয়ানডে, পাঁচ টেস্ট) এক সাথে দায়িত্বে ছিলেন ডিকি বার্ড ও ডেভিড শেফার্ড – ইতিহাসের সবচেয়ে স্বনামধন্য দুই আম্পায়ার। এক সাথে দায়িত্ব পালনে এটাই সর্বোচ্চ। টেস্টে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার (১৯) এক সাথে ছিলেন দুই অস্ট্রেলিয়ান – কল এগার ও লু রোয়ান। আর টি-টোয়েন্টিতে (১৭) ছিলেন – আহসান রাজা ও শোজেব রাজা।
৩.
ক্রিকেটের সবচেয়ে বুড়ো আম্পায়ার হলেন আলফ্রেড জোনস। তিনি ১৯২৯ সালের অ্যাশেজে, মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার টেস্টে যখন শেষবার মাঠে নামেন তখন বয়স ছিল ৬৯ বছর ২৭৫ দিন। ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপে ৬৯ বছর বয়সে চারটি ম্যাচ করেন জন ল্যাঙগ্রিজ। একই টুর্নামেন্টে সমান চার ম্যাচ করা লয়েড বাডের বয়স তখন ছিল ৬৫। আধুনিক টি-টোয়েন্টির জমানায় সবচেয়ে বয়স্ক আম্পায়ার হলেন আইরিশম্যান অ্যালান নিল। তিনি ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ম্যাচে যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন বয়স ছিল ৬৩।
৪.
জর্জ কোল্টহার্ড হলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসের সবচেয়ে তরুণ আম্ডায়ার। সেই ১৮৭৯ সালে মাত্র ২২ বছর ১৫৪ দিনে তিনি যখন মাঠে নামেন, সেটা ছিল ইতিহাসেরই মোটে তৃতীয় টেস্ট। শেষ ১২০ বছরে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যকার ম্যাচে দায়িত্ব পালন করা সবচেয়ে তরুণ আম্পায়ার হলেন ভারতের বালা মুরালি। তিনি ১৯৯৪ সালে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালনা করেন মাত্র ২৫ বছর বয়সে। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আম্পায়ার লেসলি রেইফারের আম্পায়ার হিসেবে অভিষেক হয় ২৬ বছর ৩৫৮ দিনে। ম্যাচটা ছিল ওযেস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের মধ্যকার টি-টোয়েন্টি। ২০১৬ সালে লডারহিলের সেই ম্যাচে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টির কনিষ্ঠতম আম্পায়ার বনে যান রেইফার।
৫.
বাংলাদেশিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৪ জন আম্পায়ার আম্পায়ার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই নবীন সদস্য আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ড বাদে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন অংশগ্রহণ। ১৪ জনের মধ্যে কেউই ১০০ টি ম্যাচের মাইলফলক ছুঁতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৭৩ টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। এর মধ্যে ৪২ টি ওয়ানডে আর ৩১ টি টি-টোয়েন্টি। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১২৩ জন আম্পায়ার এসেছেন ভারত থেকে। এরপর আছে ইংল্যান্ড (১২১) ও অস্ট্রেলিয়া (১০৬)।
৬.
সবচেয়ে লম্বা আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারি ছিল ফ্র্যাঙ্ক চেস্টারের। তিনি ১৯২৪ থেকে ১৯৫৫ মোট ৩১ বছরে ৪৮ টি টেস্টে দায়িত্বে ছিলেন। চেস্টারের আরেকটি অবিস্মরণীয় রেকর্ড আছে। তিনি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭৭৪ টি ম্যাচে ছিলেন অন ফিল্ড আম্পায়ার। এটা অবশ্যই সর্বোচ্চ, আর সম্ভবত এই চূড়ায় আদৌ নতুন করে কেউ আর উঠতে পারবে না। অন্যদিকে ডেভিড কনস্ট্যান্ট ৩০ বছরে (১৯৭১-২০০০) ৬৯ টি ম্যাচ পেয়েছেন।
৭.
বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংখ্যক (৪৬) টি ম্যাচ পেয়েছেন ডেভিড শেফার্ড। তিনি একমাত্র আম্পায়ার যিনি ছয়টি বিশ্বকাপ (১৯৮৩-২০৯৩) করেছেন। বাকনার আর দার করেছেন পাঁচটি করে বিশ্বকাপ। দার হয়তো শেফার্ডকে ছাড়িয়ে যাবেন আগামী বিশ্বকাপেই। বাকনার পাঁচটি বিশ্বকাপ ফাইনাল করেছেন, অন্যদিকে শেফার্ড ও বার্ড করেছেন তিনটি করে।
৮.
সাইমন টফেল পাঁচবার আইসিসির বর্ষসেরা আম্পায়ারের পুরস্কার ডেভিড শেফার্ড ট্রফি জিতেছেন। এই পুরস্কার ২০০৪ সাল থেকে চালু হয়। প্রথম পাঁচবারই বিজয়ী ছিলেন টফেল। আলিম দার ও রিচার্ড কেটেলবরো তিনবার করে ও কুমার ধর্মসেনা ও মারিয়াস ইরাসমুস দু’বার করে জিতেছেন এই পুরস্কার। রিচার্ড ইলিংওর্থ জিতেছেন একবার।
৯.
ক্রিকেটে টিভি আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির প্রচলন হয় ১৯৯১ সালে। অন ফিল্ড আম্পায়ার, টিভি আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি – তিনটি দায়িত্বই পালন করেছেন এমন ম্যাচ অফিসিয়াল আছেন কেবল তিনজন। তারা হলেন – ভেঙ্কট রাঘবান, সিরিল মিশলি ও শাইদ ওয়াদভালা।
১০.
টেলিভিশন আম্পায়ার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ করেছেন নাইজেল লং – ১২১ টি। আর ম্যাচ রেফারিদের মধ্যে এখানে সবার ওপরে আছেন রঞ্জন মাদুগালে। এই লঙ্কান পেয়েছেন ৬৬০ টি ম্যাচ।
– ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে