ডেভন কনওয়ে, বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান

লর্ডসে ইংলিশ ক্রিকেটারদের উন্মত্ত উল্লাস। আর টেরাকোটা সদৃশ প্যাভিলিয়ন থেকে কেন উইলিয়ামসনের বিষণ্ন চেহারার নিষ্পলক দৃষ্টি। এমন আবহই সে বার বুঝিয়ে দিচ্ছিল, ২০১৯ বিশ্বকাপের শিরোপাটা এই মাত্র হাত ছাড়া করলো নিউজিল্যান্ড। কিউইদের সেই হৃদয় ভাঙা কাব্যে ছিলেন না ডেভন কনওয়ে। তবে দর্শকে আসনে নিশ্চয়ই তাঁকে অদ্ভুত এক বিষোদ্গারে সেদিন আক্রান্ত করেছিল।

৪ বছর বাদে, আবার যখন একটি বিশ্বকাপের পর্দা উঠলো, তখন শুরুটা হলো আগের বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্টের মহারণ দিয়েই। লর্ডসে যেখান থেকে শেষ হয়েছিল সেই যজ্ঞের পুনরাবৃত্তি যেন ঘটলো আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। তবে এবার আর জয়োল্লাসটা ইংলিশ শিবিরে হয়নি। এক পেশে এক জয়ে বিশ্বকাপের দারুণ শুরুর গল্প লিখেছে নিউজিল্যান্ড। আর নিউজিল্যান্ডের সেই গল্পে নায়করূপে আবির্ভূত হলেন ডেভন কনওয়ে।

মাত্র ৮৩ বলেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন কনওয়ে। যা চলতি বিশ্বকাপের প্রথম কোনো ব্যাটারের সেঞ্চুরি। অবশ্য এবারের বিশ্বকাপে যে জ্বলে উঠবেন, তার একটা পূর্বাভাস আগেই দিয়ে রেখেছিলেন বাঁ-হাতি এ ব্যাটার। ক্যারিয়ারের ৫ সেঞ্চুরির ৪ টিই করেছেন চলতি বছরে। আর সেই ফর্মটা প্রত্যাশিতভাবেই তিনি টেনে এনেছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে।

তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮৩ রান তাড়া করতে কনওয়ের সেঞ্চুরিটা যে এতটা আগ্রাসন আর আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে পূর্ণ থাকবে, তা বোধহয় অনেকেই ভাবেনি। শুরু থেকেই ইংলিশ বোলারদের উপর চড়াও হন কনওয়ে। প্রথম ওভারে ১০ রান তুলে নেওয়ার মাধ্যমে আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের শুরু। এরপরে কিউইদের ইনিংসের রানের গতি আর একটুও থামেনি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে উইল ইয়াংয়ের উইকেটও নিউজিল্যান্ডের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সামান্য চিড় ধরাতে পারেনি।

রাচিন রবীন্দ্রাকে নিয়ে রীতিমত ছুটেছেন ডেভন কনওয়ে। ৩৬ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। এরপর ইংলিশ বোলারদের এক বিন্দুও ছাড় দেননি। মার্ক উড, মঈন আলী, ক্রিস ওকসরা রীতিমত খাবি খেয়েছে কনওয়ের ব্যাটিংয়ের সামনে। সামান্য প্রতিরোধও গড়তে দেননি কিউই এ ব্যাটার। আর সেই ধারাবাহিকতায় মাত্র ৮৩ বলেই তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগারে পৌঁছে যান ডেভন কনওয়ে।

সেঞ্চুরির পর আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন কনওয়ে। পৌঁছে যান ব্যক্তিগত ১৫০-তেও। সেঞ্চুরি থেকে ১৫০ ছুঁতে বল খরচ করেন মাত্র ৩৬ টি। আর এতেই বড় এক জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় কিউইরা। এ দিন কনওয়ে ছাড়াও সেঞ্চুরি পেয়েচেন রাচিন রবীন্দ্রাও। তাদের ২৭৩ রানের জুটিতে ইংল্যান্ডের দেওয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্য কিউইরা টপকে যায় মাত্র ৩৬.২ ওভারেই।

১৯ চার ও ৩ ছক্কায় ব্যাট হাতে ১২১ বলে ১৫২ রানের ইনিংস খেলেন ডেভন কনওয়ে। আর রাঁচিন রবীন্দ্রার সাথে অনন্য জুটিতে তিনি নাম লিখিয়েছেন বিশ্বকাপের একটি রেকর্ডে। সফল রান তাড়ায় এই প্রথম ২৫০+ রানের জুটির স্বাক্ষী হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশ্বকাপের মঞ্চে এটিই সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড এখন।

দারুণ এক সেঞ্চুরির সাথে দলের দুর্দান্ত জয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে এমন অভিষেকই প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ অভিষেকে সেই স্বপ্নই পূরণ করলেন ডেভন কনওয়ে। তবে আগের দুই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের দৌড় যেখানে গিয়ে থেমেছে, কনওয়ে এবার নিশ্চয়ই সেটাকেও ছাপিয়ে যেতে চাইবেন। আর সেটিকে ছাপিয়ে গেলেই তো নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে ইতিহাসের সেরা সাফল্যের সারথি হবেন কনওয়ে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link