সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বাই অরবিন্দ

যে ম্যাচটির কথা এবার বলছি তা ভারতীয়দের কাছে অন্যতম দু:খের ম্যাচ। প্রথমে ভারতীয় ব্যাটিঙে অপ্রত্যাশিত ধ্বস, তারপর ইডেনের দর্শকদের অভব্যতা এবং সবশেষে কাম্বলির কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়া – এই দৃশ্যগুলো আমাদের কাছে সুখের নয়। তবু এই ম্যাচের প্রসঙ্গ আনছি কারণ এই ম্যাচেই আমি বিশ্বকাপে খেলা অন্যতম সেরা ইনিংসটি দেখেছিলাম।

যে ম্যাচটির কথা এবার বলছি তা ভারতীয়দের কাছে অন্যতম দু:খের ম্যাচ। প্রথমে ভারতীয় ব্যাটিঙে অপ্রত্যাশিত ধ্বস, তারপর ইডেনের দর্শকদের অভব্যতা এবং সবশেষে কাম্বলির কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়া – এই দৃশ্যগুলো আমাদের কাছে সুখের নয়। তবু এই ম্যাচের প্রসঙ্গ আনছি কারণ এই ম্যাচেই আমি বিশ্বকাপে খেলা অন্যতম সেরা ইনিংসটি দেখেছিলাম।

১৯৯৬-এর বিশ্বকাপ আজ সবাই মনে রেখেছে অর্জুনা রানাতুঙ্গার কুশলী অধিনায়কত্ব, বিশেষ করে সনাথ জয়াসুরিয়া এবং রমেশ কালুভিথরনা নামের দুই বোমারু বিমান দিয়ে ব্যাটিং শুরু করার জন্যে। এই দুজনের দাপট ভারত ভালভাবেই টের পেয়েছিল নিজের গ্রুপ ম্যাচে। ভারতের বিশাল স্কোর অনায়াসে টপকে ম্যাচটি জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।

সম্ভবত সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে এই দুজনকে নিয়ে বেশ ভালোরকম হোমওয়ার্ক করেছিল ভারতীয় বোলাররা। ফলও পাওয়া গেল হাতেনাতে। সনথ এবং কালু যখন প্যাভিলিয়নে ফিরলেন তখন শ্রীলঙ্কার স্কোর মাত্র ১। আজহারের টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত যা এর আগে অব্দি ডিফেন্সিভ মনে হচ্ছিল, তা আচমকাই মাস্টার স্ট্রোক মনে হতে শুরু করেছে।

ঠিক এই জায়গা থেকে প্রতি আক্রমণ শুরু করল শ্রী লংকা। বরং বলা ভালো, তাদের সহ অধিনায়ক অরবিন্দা ডি সিল্ভা। এমনিতে ভদ্রলোকের ব্যাটিং সম্বন্ধে যথেষ্ট উঁচু ধারনাই ছিল আমাদের। স্কয়ার অফ দ্য উইকেটে যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলেন ডি সিল্ভা, সেই বিশ্বকাপে যথেষ্ট ভালো ফর্মেও ছিলেন। কিন্তু তার ব্যাটিং যে ভিভ বা জয়সূর্যার মতো বিধ্বংসী হতে পারে সেটা জানা ছিল না। বিশেষ করে দল যখন ম্যাটের ওপর (কিছুক্ষন পরেই দলের স্কোর দাঁড়ায় ৩৫/৩)।

সেদিন দু চোখ ভরে দেখেছিলাম অরবিন্দার অনবদ্য ড্রাইভ। প্রত্যেকটি শট জ্যামিতিক নির্ভুলতার সঙ্গে ফিল্ডারদের মধ্যেকার ফাঁকফোঁকর খুঁজে বলকে সীমানার বাইরে পাঠাচ্ছিল। সেই সঙ্গে তার স্বভাবজাত পুল, স্কয়ার কাট এবং ফ্লিক তো ছিলই। মাত্র ৪৭ বলে ৬৬ রান করে সেদিন যখন অরবিন্দ ডি সিলভা প্যাভিলিয়ন মুখো হলেন তখনও কাগজে কলমে চালকের আসনে ভারতই কারণ তখন শ্রী লংকার স্কোর ৪ উইকেটে ৮৫ মাত্র।

তবে এই ইনিংসের মাধ্যমে অরবিন্দা শ্রীলঙ্কার রান রেট বেশ ভালো অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। এর ফলে মহানামা, রনতুঙ্গার মতো পরবর্তী ব্যাটাররা ধীরে সুস্থে ইনিংস গড়ার সময় পেয়ে গেছিলেন। এর ফলে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস (২৫১)।

ডি সিলভার সেই ইনিংস আক্রমণাত্মক এবং বিধ্বংসী ছিল অবশ্যই, কিন্তু কোনো অক্রিকেটিয় শট মারার চেষ্টা করেন নি ডি সিল্ভা। টাইমিং এবং প্লেসমেন্টের ওপর নির্ভর করে ব্যাটিং করে ডি সিলভা দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে প্রথাগত ক্রিকেট খেলেও দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট রাখা যায়।

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি রত্নখচিত ইনিংস উপহার দেন ডি সিল্ভা। মূলত তার ব্যাটেই ভর করে সেদিন অনায়াসে ম্যাচ করায়ত্ব করে শ্রী লংকা। আজ অব্দি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে রান তাড়া করে এটাই একমাত্র সেঞ্চুরি, বাকি পাঁচটি এসেছে প্রথমে ব্যাট করে।

তা ছাড়া ফাইনালে তিনটা উইকেটও নেন ডি সিল্ভা। সব মিলিয়ে ডি সিল্ভার সেদিনের পারফর্মেন্স বিশ্বকাপ ফাইনালে সবচেয়ে উচ্চস্তরের অলরাউন্ড পারফর্মেন্সের মধ্যে অন্যতম। তবু আমার মতে ফাইনালের তুলনায় অরবিন্দা ডি সিল্ভার সেমিফাইনালের ইনিংসটি যেন একটু বেশি ভালো। বিশেষ করে পিচ এবং শটের কোয়ালিটি বিচার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link