সোয়া পাঁচের আস্কিং রেট তাড়া করতে নেমে ৯৩ বলে ৪৪ রান করে ইমরান খান প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন। এরকম ইনিংস রবি শাস্ত্রী বা আজহার খেললে ‘হায় হায়’ ধ্বনি বাঁধা ছিল ভারতের স্টেডিয়ামগুলোতে।
তার আগে বল হাতেও ১০ ওভারে ৫৯ রান দিয়ে শুন্য উইকেট পেয়ে নিউজিল্যান্ডকে বেশ বড় রান তুলতে সাহায্য করেছেন খান সাহেব। সব মিলিয়ে আজকের ‘ম্যাচ কা মুজরিম’ কে নিয়ে আর খুব একটা মাথা ঘামাতে হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু ঐ যে একটা জিনিস আছে – কপাল। তা ইমরানের অলৌকিক কপালের ব্যাপারে প্রথম আমি জানতে পারি William Darlymple – এর লেখা ‘Age of Kali’ নামের বইটি পড়ে। তখন ইমরান খুচরো রাজনিতি করেন।
অথচ, কোন দরবেশ নাকি তাকে বলে রেখেছে, তিনি একদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন। বিশ্বকাপের ব্যাপারেও ওনার কোন ভবিষ্যতবাণী ছিল কি? আজ আর সেটা মনে নেই। বইটাও হাতের কাছে নেই যে মিলিয়ে দেখব।
সে যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ইমরানের কিছু পরেই প্যাভিলিয়ন মুখো হলেন আরও এক স্টার ব্যাটসম্যান – সেলিম মালিক। সেই সময়ের ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমিরা লোকটাকে হাড়ে হাড়ে চিনতাম। এবার কে? একদিকে জাভেদ মিয়াঁদাদ টিকে আছেন বটে কিন্তু তারও আর আগের বিক্রম নেই। তবুও তিনিই শেষ ভরসা পাকিস্তানের।
কিন্তু, মানুষ ভাবে এক, আর হয় এক। সেদিনই ২২ বছরের মোটামুটি অখ্যাত এক যুবক ঠিক করল এবার বিখ্যাত হওয়া যাক। এরপরের ৮৭ রানের মধ্যে ৬০ রান এল ইনজামাম উল হকের ব্যাট থেকে, মাত্র ৩৭ বলে।
তবে শুধু রান আসা নয়, রানগুলি যে ভাবে এল সেটা বেশি গুরুত্বের। উইকেটের দুই পাশেই, সামনের এবং পেছনের দুই পায়েই এবং পেস – স্পিন নির্বিশেষে সবাইকে শাসন করে ইনজামাম যখন ফিরছেন (কীভাবে আউট হয়েছিলেন সেটা গেস করার জন্যে কোন পুরস্কার নেই – রান আউট) তখন নিউজিল্যান্ডের বোলিং বিধ্বস্ত অবস্থায়।
আমাদের ভারতীয়দের মধ্যে পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের গুণমুগ্ধ হওয়ার ব্যাপারে একটা মেন্টাল ব্লক কাজ করে। ইনজামাম খুব অল্প কয়েকজন পাকিস্তানীদের একজন যার ব্যর্থতা আমি কোনদিন ম্যাচ দেখতে বসে কামনা করি নি। বরং খুশি হতাম তিনি বড় রান পেলে।
গ্রেট ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে একটা অলিখিত বেঞ্চমার্ক আছে – টেস্ট ক্যারিয়র অন্তত ৫০ গড় নিয়ে শেষ করতে হবে। ইনজামাম, মাহেলা জয়বর্ধনের মত ব্যাটসম্যান অল্পের জন্যে সেই বেঞ্চমার্ক মিস করেছেন। মাহেলার বিষয়ে না হয় অন্যদিন আলোচনা করব তবে ইনজি একটু জোরে ছুটলেই অনায়াসে সেই বেঞ্চমার্ক পেরিয়ে যেতেন।
অবশ্য যে ব্যাটসম্যান কার্টলি অ্যামব্রোসদের মত বোলারকে ধীরে সুস্থে মাঠের বাইরে (হ্যাঁ, সীমানার নয় কিন্তু, একদম মাঠের বাইরে) পাঠাতে পারেন, তাকে তাড়াহুড়ো করতে বলার সাহস কার আছে?
একটা ছোট্ট ট্রিভিয়া – সেই বিশ্বকাপেই মোট চারবার রান আউট হয়েছিলেন ইনজামাম (তার মধ্যে পরপর তিনটে ম্যাচের স্ট্রিক রয়েছে)। এটা কি বিশ্বরেকর্ড? উৎসাহীরা খুজে দেখতে পারেন।