প্রিয় মুুমিনুল হক সৌরভ,
কেমন আছেন ঠিক জানা নেই। দেশের চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কারোই তো আসলে ভাল থাকার সুযোগ নেই। এর মধ্যেও জীবিকার তাগিদে, পেশাদারিত্বের খাতিরে দল নিয়ে আপনাকে যেতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। তাই না জানলেও অনুমান করতে পারছি কেমন আছেন।
আমিও ঠিক একই পেশাদারিত্বের চাপ বলেন বা দায়িত্ব বলেন – আপনাকে উদ্দেশ্য করে লিখতে বসেছি। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আপনার আলোচিত-সমালোচিত সংবাদ সম্মেলনটা নিয়েই দু’কলম লিখবো। তো দেরি না করে শুরু করি।
ক্যাপ্টেন, সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের প্রসঙ্গ বারবার আসায় আপনি হয়তো গণমাধ্যমের ওপর বিরক্ত। হ্যাঁ, বিরক্ত আপনি হতেই পারেন। আমাদেরও বারবার একই রকম প্রশ্ন শখ করে করি না। আমরা করি পেশাদারিত্বের কারণে, পাবলিক ইন্টারেস্ট মাথায় রাখতে হয়।
আর তাঁদের প্রসঙ্গ বারবার আনবো নাই বা কেন! আজকের ক্রিকইনফো বা ক্রিকবাজে কোনো কারণে ঢুঁ মেরেছিলেন কি? দিনভর একটাই প্রশ্ন শুনলাম, আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের একাদশে কি সাকিব খেলবেন, নাকি খেলবেন না? টানা কয়েকটা দিন দেখলাম হার্শা ভোগলে, ইয়ান বিশপরা তাঁকে নিয়ে কথা বলছেন। মুস্তাফিজুর রহমান ও রাজস্থান রয়্যালসকে নিয়েও বলেছেন। সেই সাকিব-মুস্তাফিজকে আমরা অ্যাভয়েড করবো কি করে?
মুমিনুল আপনি যতই বিরক্ত হন না কেন, বাস্তবতা এটাই যে আপনার দলের সবাই সাকিব আল হাসান কিংবা মুস্তাফিজুর রহমান নয়। হলে তো আর পাঁচ বছর পর টেস্ট স্কোয়াডে শুভাগত হোমকে রাখা হয় না, পেস আক্রমণে অনভিষিক্ত তিনজনকে রাখা হয় না! আর নিয়মিত টেস্ট দলে খেলে এমন যে কেউ হুট করে না থাকলেই তো এই প্রশ্ন আসবে। এটা খুব রেগুলার একটা প্রশ্ন। এটার জবাব দিতেও খুব বেশি ডিপ্লোম্যাটিক হতে হয় না।
সেই বাস্তবতা আপনিও বুঝেন হয়তো, কিংবা বুঝেন না। প্রশ্নে আপনি বিরক্ত হতেই পারেন, কিন্তু প্রকাশ্যে সেই বিরক্তিটা প্রকাশ করে ফেলাটা দৃষ্টিকটু। আপনি বলে ফেললেন, ‘ওনাদের তো ১০-১২টা হাত না। বাকিদেরও ১০-১২টা হাত না।’
কথাটা ভুল না। ১০-১২টা হাত কারোই নেই। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেরও ছিল না, যারা মোটামুটি বেঞ্চ নামিয়ে দিয়ে দুই টেস্টে ক’দিন আগেই আপনাদের হোয়াইটওয়াশ করে দিয়ে গিয়েছে।
এখানে হাতের সংখ্যার বিচারে তো দক্ষতা মাপা যায় না। কিন্তু, কোয়ালিটি বলতেও একটা ব্যাপার থাকে। সেটা না থাকলে তো দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককেই এক এক করে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হত। সেটা তো হচ্ছে না। তারাই পেশাদার পর্যায়ে সুযোগ পাচ্ছেন, যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আর সেখান থেকে জাতীয় দলে তাঁদেরই জায়গা হচ্ছে যারা হাইলি কোয়ালিফায়েড। এটা অবশ্যই আপনি বুঝেন।
আর ১০-১২টা হাতের প্রশ্ন না, দু’জনের দু’টি করে হাত কখনোই এক না। সাকিবের দু’টি হাতের সাথে মেহেদী হাসান মিরাজের দু’টি হাতের আপনি নিশ্চয়ই তুলনা করবেন না ক্যাপ্টেন। আবার আপনার দু’টি হাতের সাথে আমার দুই হাতের তুলনা হবে না। এখানে হাতের সংখ্যা না, কোয়ালিটি বা সামর্থ্যটা ম্যাটার করে।
হয়তো বলতে পারবেন, কথার কথা বলে ফেলেছেন। কিন্তু, আপনি তো টেস্ট অধিনায়ক, মুমিনুল। ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাট টেস্ট। আপনি এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান। আপনার মুখে কি এই ছেলেমানুষি কথা শোভা পায়, তাও আবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে যখন কোভিডের মাঝেও বেশ কিছু ক্যামেরা তাক হয়ে আছে আপনার দিকে।
হ্যাঁ, মেনে নিলাম বিসিবি আপনাদের একদমই মিডিয়া হ্যান্ডলিং শেখায় না। কিন্তু, অভিজ্ঞতা বলতে তো একটা ব্যাপার আছে। অধিনায়ক যদি আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে না জানেন, তাহলে দল চলবে কি করে!
মুমিনুল, ক্রিকেট একটা পারফরমিং আর্ট। যেকোনো খেলাই তাই। এখানে চাপ থাকবেই। দর্শকের চাপ, মিডিয়ার চাপ। এই চাপ নিয়েই খেলতে হবে। একবার ভাবুন তো লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো কিংবা শচীন টেন্ডুলকারকে কি পরিমান চাপ নিয়ে খেলতে নামতে হবে? সে তুলনায় আপনাদের চাপটা তো নস্যি!
মুমিনুল, আমাদের প্রশ্ন করার জায়গা সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু, আপনার কিংবা আপনার দলের উত্তর দেওয়ার মঞ্চ এটা নয়। তার জন্য বাইশ গজ আছে। সেখানে রান করবেন, উইকেট পাবেন। দলকে ম্যাচ জেতাবেন, ট্রফি জেতাবেন। সেটাই হবে আপনাদের সঠিক উত্তর। সাফল্য থাকলে এই দেশের মিডিয়াই আপনার দলের হয়ে কথা বলবে। এই শ্রীলঙ্কাতেই একটা টেস্ট জিতিয়ে আনুন, সমর্থকদের অনেকেই গেল সিরিজের ফলাফল ভুলে যাবে।
শেষ করবো শুভকামনা জানিয়ে। শ্রীলঙ্কা সফরটা সুন্দর হোক। আপনার এবার অন্তত খুশি হওয়া উচিৎ, চাপ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের মিডিয়া থাকবে না। চাপ মুক্ত হয়ে খেলতে পারবেন। তা, এবার কি আমরা একটু সাফল্যের প্রত্যাশা করতে পারি?
ইতি
– বাংলাদেশ টেস্ট দলের সাফল্যের প্রত্যাশারত এক ক্রীড়া সাংবাদিক।