নখ কামড়ানো উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা আর রূদ্ধশ্বাস থ্রিলার – একটা ক্রিকেট ম্যাচে যা যা আশা করেন দর্শকেরা তার সবটুকু নিয়ে যেন হাজির হয়েছে ক্রিকেট বিধাতা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের ম্যাচে রোমাঞ্চের কোন কমতি ছিল না, কমতি ছিল না বিনোদনেরও। ৫০৪ বলের লড়াইয়ের ফলাফল শেষপর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে শেষ বলে।
সুপার ফোর রাউন্ডের ম্যাচ, কিন্তু সমীকরণের কল্যাণে সেটা রূপ নিলো নক আউট ম্যাচে। জিতলে ফাইনাল, হারলে বিদায় – এমন পরিস্থিতিতে তাই মাঠে নামতে হয়েছে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাকে। আর এই ডু অর ডাই ম্যাচে নাটকীয়তা আকাশ ছুঁয়েছিল, তবে শেষপর্যন্ত জয়ের হাসি হাসতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা; পাকিস্তানকে তিন উইকেটে হারিয়েছে দলটি।
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে একাধিকবার এসেছে প্রকৃতির বাধা; ফলে পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ নেমে এসেছিল ৪২ ওভারে। ওভার কমলেও শুরু থেকে বোলারদের উপর চড়াও হতে পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটাররা। পাওয়ার প্লের নয় ওভারে এক উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৬ রান তুলতে পেরেছিল দলটি।
এরপর অবশ্য ধীরে ধীরে রানের গতি বাড়িয়েছে বাবর আজমের দল। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট শিকার করে তাঁদের আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়নি স্বাগতিক বোলাররা। একটা সময় ১৩০ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল পাকিস্তান, তবে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দৃঢ়তায় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে।
নির্ধারিত ৪২ ওভারে ২৫৭ রানের পুঁজি পায় বাবর আজমের দল, যেখানে রিজওয়ানের ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ৮৬ রান এবং অন্যদের মধ্যে আবদুল্লাহ শফিক ও ইফতেখার করেছেন যথাক্রমে ৫২ এবং ৪৭ রান।
চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে সূচনা প্রত্যাশামাফিক হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। শুরুতে কুশল পেরেরা রান আউটে কাটা পড়লেও ইতিবাচক ব্যাটিং চালিয়ে যায় লঙ্কান ব্যাটাররা। মাত্র আঠারো ওভারের মাঝেই দলীয় শতরান ছুঁয়ে ফেলে তাঁরা; দুই ইনফর্ম কুশল মেন্ডিস এবং সামারাবিক্রমার দাপুটে ব্যাটিংয়ে আস্তে আস্তে ম্যাচ থেকে দূরে সরতে থাকে পাকিস্তান।
এই দুই ডানহাতির একশরানের জুটিতে যখন চালকের আসনে বসে শ্রীলঙ্কা, তখনি কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু এনে দেন ইফতেখার আহমেদ। ৪৮ রানের মাথায় সামারাবিক্রমাকে আউট করে দলকে উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেন এই পার্ট টাইমার। তাতে অবশ্য পরিস্থিতি বদলায়নি, মেন্ডিসের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে ঠিকই জয়ের পথে এগুতে থাকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
৩৬ তম ওভারে ৯১ রান করে মেন্ডিস প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন বটে ততক্ষণে দলকে ভাল অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন। দাসুন শানাকাকে নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়ে ম্যাচ অবশ্য এরপর জমিয়ে তোলেন ইফতেখার। শেষ ওভারের আগের ওভারে পরপর দুই ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচ পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেন শাহীন শাহ।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল নয় রানের; চাপের মুহুর্তে সেই কাজটা অবশ্য ঠিকই করেছেন চারিথ আসালঙ্কা। আর তাতেই টানা দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠে যায় শ্রীলঙ্কা।
গতবার পাকিস্তানকে ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল সাঙ্গাকারা, জয়সুরিয়ার উত্তরসূরীরা; এবার সুযোগ এসেছে ভারতকে হারিয়ে সেই শিরোপা ধরে রাখার৷ সেটা করতে পারবে কি না এশিয়া কাপের সহ-আয়োজক দেশটি, সেটাই এখন দেখার বিষয়।