ভারতের মাটিতে যেন অজেয় এক দুর্গ গড়ে তুলেছে টিম ইন্ডিয়া। আহমেদাবাদ ও দিল্লী টেস্টে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়ে আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছে শুভমান গিলের দল।
এর মধ্য দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টানা দশম টেস্ট সিরিজ জিতে এক নতুন কীর্তি গড়ল ভারত। এই ধারাটি শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে, আর এখন ২০২৫—২৩ বছর কেটে গেলেও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মুখ দেখেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ভারতের মাটিতে দুর্ভোগ অব্যাহত রইল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ২০১৩ সালে ড্যারেন স্যামির নেতৃত্বে শুরু হওয়া হারের ধারা এখন পৌঁছেছে ছয়ে, আর মজার বিষয়— সেই স্যামিই এখন দলের কোচ। ইতিহাস বলছে, এটি ভারতের মাটিতে কোনো দলের অন্যতম দীর্ঘতম পরাজয়ের রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে এমন ধারাবাহিক পরাজয় শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং দুই দলের শক্তির ব্যবধানও স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
আহমেদাবাদের ম্যাচে ভারত ছিল নিখুঁত ছন্দে। প্রথম ইনিংসে লোকেশ রাহুল, ধ্রুব জুরেল ও রবীন্দ্র জাদেজার দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে গড়ে ওঠে বড় স্কোর। পেস সহায়ক উইকেটে জসপ্রীত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজের নির্ভুল বোলিংয়ে ভেঙে পড়ে ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপ। তারা দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯০ ওভারও টিকতে পারেনি, যা ভারতের শতভাগ নিয়ন্ত্রণের প্রমাণ দেয়।
তবে, দিল্লী টেস্টে অবশ্য কিছুটা লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ভারতের মাটিতে চতুর্থ দিনে টেস্ট নিয়ে যায়। দুই ইনিংসে দুই শতাধিক ওভার ব্যাট করে তারা দেখিয়েছে উন্নতির ছাপ, কিন্তু জয় থেকে ছিল বহু দূরে। পঞ্চম দিন সকালে সাত উইকেটের পরাজয় নিশ্চিত হয়।
ভারতের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ হয়ে উঠলেন তরুণ যশস্বী জয়সওয়াল, প্রথম দিনেই দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে দলের ভিত গড়ে দেন। তাঁর পরেই অধিনায়ক শুভমান গিলের ব্যাট থেকে আসে আরেকটি শতরান, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ভারতের হাতে এনে দেন তিনি। বল হাতে কুলদীপ যাদব ছিলেন অনবদ্য— তাঁর ঘূর্ণিতে ছিন্নভিন্ন হয় ক্যারিবীয় ব্যাটিং, পুরো ম্যাচে তুলে নেন আটটি উইকেট।
দুই ম্যাচেই ভারত দেখিয়েছে কেন তারা নিজেদের ঘরের মাঠে এতটা ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ। ব্যাটে-বলে নিখুঁত দলীয় সমন্বয়, বোলারদের ধার, ব্যাটারদের স্থিরতা— সব মিলিয়ে আরেকটি নিখুঁত সিরিজ জয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামির জন্য এটা যেন এক অদ্ভুত দ্যেজা ভ্যু— যে মাঠে একসময় অধিনায়ক হিসেবে হার দেখেছিলেন, আজ সেখানে কোচ হিসেবেও পরাজয়ের সাক্ষী। ভারতের এই ধারাবাহিক সাফল্য প্রমাণ করে, নিজেদের ঘরে তারা শুধু এক দল নয়, বরং এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি।