উসমান ডেম্বেলে, অবশেষে। ফ্রান্স ফুটবলের দেওয়া ব্যালন ডি’অর এবার উঠল স্বদেশীর হাতেই। পিএসজির এই তারকার জীবনে সবচেয়ে উজ্জ্বল রাত এনে দিল প্যারিস। প্যারিসকে যে সিংহাসনে তিনি তুলেছেন, প্যারিস সেটাই যেন হাত ভরে ফিরিয়ে দিল তাঁকে।
মঞ্চে ওঠার আগেই ট্রফির ভার যেন বুঝে নিয়েছিলেন। তবে ট্রফি নয়, পাশে বসা মাকেই আঁকড়ে ধরলেন সবার আগে। সবার মাঝে বসা মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রথম কথাই তাঁর— ‘আমরা এটা এক সাথে পেয়েছি।’

বলতে বলতেই থমকে গেলেন। আবেগে দমকা হাওয়ার মতো টলে উঠলেন। চোখে জল। কাঁপা কণ্ঠ। সঞ্চালক কেট স্কট মাকে মঞ্চে ডাকলেন, তবেই সামলে উঠলেন ডেম্বেলে। তবুও তাঁর চোখে তখনও টলটলে জল। ধন্যবাদ দিলেন খোদ লিওনেল মেসিকে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন বার্সেলোনার প্রতি।
করতালিতে ভরা হলরুমে বিজয়ী কাঁদছেন, আর দর্শকসারিতে বসে প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়ামাল তাকিয়ে আছেন অবাক চাহনিতে। তিনি বুঝে গেলেন, এই জায়গাটা ডেম্বেলের।

নিজেকে সামলে ডেম্বেলে বললেন— ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অর্জন। পিএসজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাকে ২০২৩ সালে দলে নেওয়ার জন্য। সতীর্থরা গত বছর যেমন দুর্দান্ত ছিল, এ বছরও তেমনই। এটা ব্যক্তিগত পুরস্কার নয়, আমাদের সবার সাফল্য।’
বার্সেলোনায় ছয় বছর ছিলেন তিনি। কিন্তু বার্সার শিরোনামে তাঁর খেলা নয়, বরং ইনজুরিই বেশি ছিল। হতাশায় ডুবে যাওয়া প্রতিভা হিসেবেই তাঁকে পায় পিএসজি। প্যারিসে এসে যেন জন্ম নিলেন নতুন করে।

গত মৌসুমে ৫৩ ম্যাচে ৩৫ গোল, ১৬ অ্যাসিস্ট। ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’-এর নায়ক। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে একাই করেছেন ৮ গোল। লিগ জয়ের দৌড়েও যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা। যে ট্রফির জন্য প্যারিস এতদিন ব্যাকুল ছিল, সেটাই এনে দিলেন তিনি।
ফয়সালার মুহূর্তে ডাক পড়ল পিএসজিরই আরেক কিংবদন্তির—রোনালদিনহো। যার বাড়িতেও শোভা পায় এই ব্যালন ডি’অর। খাম খোলার আগেই দর্শকসারি চিৎকার করে বলে দিচ্ছিল তাদের রায়—উসমান!

রোনালদিনহো নাম উচ্চারণের আগেই যেন প্যারিস জানত, আজকের রাত ডেম্বেলের। তবে, ডেম্বেলের জয় যতটা প্রাপ্য, ইয়ামালের উত্থান ততটাই অবিশ্বাস্য।
আগেই মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি, সেরা অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবলার হিসেবে কোপা ট্রফি হাতে। সঞ্চালক রুদ খুলিত রসিকতা করেছিলেন, ‘সম্ভবত আমাদের আবার দেখা হচ্ছে।’

হ্যাঁ, ফের দেখা হলো। তবে এবার অতিথি আসনে বসে করতালিতে অভিনন্দন জানালেন তিনি বড়দের মুকুট জেতা ডেম্বেলেকে। টানা দ্বিতীয়বার কোপা ট্রফি জেতা ইয়ামাল শেষমেশ ব্যালন ডি’অরে থাকলেন দ্বিতীয়। একুশ বছরেরও কম বয়সে এ রকম ধারাবাহিকতা, নিশ্চয়ই এই এই যাত্রা বহুদিনের।
ডেম্বেলের জন্য এ শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এক শহরের, এক দলের অর্জন। এটা এক মায়ের অর্জন। এক হতাশ প্রতিভার পুনর্জন্মের প্রতীক। ব্যালন ডি’অরের রাত তাই হয়ে উঠল চোখের জলে ভেজা কাব্যের মতো—যেখানে বিজয়ী কাঁদেন, আর করতালির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ব ফুটবলের আকাশে।











