আমেজহীন বিশ্বকাপ, হারিয়ে গেছে পুরনো জৌলুস

সবাই হয়ত একটু চিন্তিত। কারো কারো মনে হয়ত প্রশ্ন জাগছে। আগের আমেজ কোথায়? এত কেন এক পেশে ম্যাচ? হ্যা, এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ সেই সব প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে বৈকি। আগের মত হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হচ্ছে না। স্নায়ুযুদ্ধের চূড়ান্ত রুপের দেখা মিলছে না। শেষ ওভারের রোমাঞ্চকর জয়ের দেখা নেই। এসবের কারণ কি?

কারণ হয়ত নানামুখী। খেলার ধরণে পরিবর্তন হয়েছে। কন্ডিশনের হেরফের রয়েছে। সেই সাথে বদলে গেছে আরও কত কি! হতাশার একঝাক কারণ রয়েছে এবারের বিশ্বকাপের আমেজ অনুভূত না হওয়ার। প্রথমত নতুন বলে পেসারদের সেই চিরায়ত দাপট যেন কোথাও একটা মিলিয়ে গেছে। নতুন বলে পেসারদের মূল অস্ত্রই থাকে সুইং।

সেই সুইংয় আশঙ্কাজনক হারে কমছে বা কম দেখা যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপের প্রথমভাবে। সেই সাথে সিম বোলিংয়েও সফলতা কমছে। তাইতো সিম ও সুইং নির্ভর বোলাররা নিজেদের লেন্থের তারতাম্য ঘটিয়ে সাফল্য পেতে চাইছেন। যদিও বছরের শুরুর ভাগে ভারতে হওয়া সাদা বলের ক্রিকেট বিবেচনায় সুইং আর সিমের তফাৎ বেশি নয়।

মাত্র ০.১ ডিগ্রি কমেছে। তবুও বিশ্বকাপের আসরে পেসারদের থেকে তো গতির মিশেলে বলের হেলদোলই প্রত্যাশিত। প্রত্যাশা পূরণ না হলে নিশ্চিতভাবেই আমেজটা পাওয়ার কথা নয়। শুধু যে নতুন বলেই এমন হতাশ করছে এবারের বিশ্বকাপ তা কিন্তু নয়।

শেষের দিকে ব্যাটারদের রান তোলার গতিও বিনোদনের সঞ্চার ঘটাতে পারছে না। গড়ে মাত্র ৭.৩৩ রানরেটে শেষের ওভারগুলোতে রান তুলতে পারছে ব্যাটাররা। অথচ স্লগ ওভারে সাধারণত ব্যাটারদের হাত খুলে, ব্যাট চালিয়ে খেলার প্রবণতাই দেখে এসেছে দর্শকরা বিগত বছর গুলোতে।

তবে এমন দশা ২০১১ বিশ্বকাপেও হয়েছিল। সেবার গড়ে ৭.৪৩ রানরেটে ডেথ ওভারে রান নিতে সক্ষম হয়েছিল ব্যাটাররা। তবে খেলার ধরণ বদলেছে, চাহিদাও বদলেছে। হার্ড-হিটার ব্যাটারদের সংখ্যাও বেড়েছে। তবুও এমন মন্থর গতি ক্রিকেটকে ব্যাকফুটেই ঠেলে দিচ্ছে।

এর পেছনে কারণ অবশ্য টপ অর্ডার ব্যাটারদের দারুণ পারফরমেন্স। এবারের বিশ্বকাপটা এক অর্থে টপঅর্ডার ব্যাটারদের বলা চলে। কেননা ১৯৯৯ সালের পর এবারের বিশ্বকাপেই ইনিংসের শুরুর দিকে ভাল করছেন ব্যাটাররা।প্রথম ৩০ ওভারে প্রায় ৫.৪৬ রান করে তুলছেন ব্যাটাররা। এমনকি সবচেয়ে বেশি গড়ও এই বিশ্বকাপেই হয়েছে এখন অবধি।

প্রায় ৪৬.৪৮ গড়ে ব্যাটাররা শুরু ৩০ ওভারে রান করছেন ভারত বিশ্বকাপে। দলীয় রানের ৬৩.৮৪ শতাংশ রান আসছে শুরু ৩০ ওভারের মধ্যেই। যা অবশ্য ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকে সামান্য বেশি। তবে ১১-৩০ ওভারের মধ্যে ৪২.৬০ শতাংশ রান হচ্ছে। যা আবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপ থেকে এখন অবধি সর্বোচ্চ।

ঠিক এখানে আসলে ম্যাচের ভাগ্য ঢলে পড়ছে দলগুলোর দিকে। তাইতো শেষ ওভারে রোমাঞ্চ যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, ঠিক তেমনি ডেথ ওভারে দ্রুত রান তোলার গতিও মন্থর হয়েছে। ডেথ ওভারে যেতে যেতে দলগুলো নিজেদের পেসারদের কোটার অধিকাংশ ওভারই শেষ করে ফেলছে।

এই প্রবণতায় ডেথ ওভারে স্পিনার ব্যবহারের মাত্রাও বেড়েছে। ২০১১ বিশ্বকাপের পর এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেথ ওভার স্পিনাররা করেছেন। যার শতকরা হিসেব করলে দাঁড়ায় ৩২.৬ শতাংশ। তাছাড়া ২০১৫ বিশ্বকাপের পর রিস্ট স্পিনারদের উত্থান দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু সেই ধারাতেও ব্যঘাত ঘটাচ্ছে ২০২৩ বিশ্বকাপ।

ফিঙ্গার স্পিনারদের দিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টাই যেন করছে। এখন অবধি ৭২ শতাংশ স্পিন বোলিং করেছেন ফিঙ্গার স্পিনাররা। পাশাপাশি বা-হাতি পেসারদের কার্য্যকারিতাও যেন হ্রাস পেয়েছে ব্যাপকভাবে। প্রতিটি উইকেট শিকারে বা-হাতি পেসারদের গড় ৩৩। তাছাড়া ইকোনমি রেট ৬.০৩। বা-হাতি বোলারদের গড়টা এর আগেও খারাপ ছিল কয়েকবার। তবে তারা কখনোই খুব খরুচে বোলার ছিলেন না।

এসব কিছুর পেছনে ঠুনকো এক যুক্তি অবশ্য দাঁড় করাতে চাইছেন অনেকেই। এবারের বিশ্বকাপে ব্যবহার করা বলের মান খুব একটা সুবিধার নয়। অতিদ্রুতই বলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যাচ্ছে। বল নিজের স্বাভাবিক স্বভাব হারিয়ে ফেলছে। দ্রুতই অপরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নতুন বলেও কার্য্যকর সহয়তা পাচ্ছে না বোলাররা। সেটার পেছনে আবার রয়েছে কন্ডিশনের দোষ।

এই সব কিছু মিলিয়ে আসলে বিশ্বকাপ ঠিক জমজমাট হচ্ছে না। মিলছে না কাঙ্ক্ষিত রোমাঞ্চ। বিনোদনের ঘাটতি হচ্ছে। দেখতে হচ্ছে একপেশে ম্যাচ। তাতে করে ওয়ানডে ক্রিকেট আরও একবার হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ।


তথ্যসূত্র: ক্রিকইনফো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link