এই সপ্তাহ দুয়েক আগেই পাকিস্তান ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে খেলছিলেন আমির জামাল। তখনো বোধহয় তিনি চিন্তাই করেন নি, সামনে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলবেন। কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল। আমির জামাল পাকিস্তানের হয়ে ম্যাচ খেললেন। স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে দারুণ বোলিং করে ম্যাচ জেতালেন। পাকিস্তানও সিরিজে এগিয়ে গেল। একদম দারুণ এক উত্থান যাকে বলে আমির জামালের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।
অবশ্য পাকিস্তান ক্রিকেটে একজনের পরিবর্তে দলে এসে উত্থানের জন্ম দেওয়া যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারই হয়ে দাঁড়িয়েছে। এশিয়া কাপে শাহিন শাহ আফ্রিদি ইনজুরির কারণে দল থেকে ছিটকে গেলে দলে আসেন নাসিম শাহ। এরপর নাসিম শাহ বলতে গেলে নতুন এক বোলিং সেনসেশনেই পরিণত হয়েছেন। সেই নাসিম শাহের অসুস্থতায় আবার দলে সুযোগ মিলল আমির জামালের। আর একাদশে এসেই আমির জামাল দেখালেন চমক।
ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজের পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল দুই দলের জন্যই সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। কারণ এ ম্যাচের আগের সিরিজের চিত্র ছিল ২-২ সমতায়। এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে পাকিস্তান ১৪৫ রানে আউট হয়ে গেলে ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচটা আপাতদৃষ্টিতে সহজই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু সমীকরণ বদলে দেওয়ার লড়াই বেশ ভাল ভাবেই টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করে পাকিস্তানের বোলাররা। ইংল্যান্ডও একসময় সে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু তখন পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন স্বয়ং অধিনায়ক মইন আলী। বাকি কাজটা করার দায়িত্বটা তিনি নিজের কাঁধেই নেন। সফল হওয়ার পর্যায়েও প্রায় চলে গিয়েছিলেন। কঠিন সমীকরণে চলে যাওয়া ম্যাচটাকে এক ঝটকায় নিয়ে যান ৬ বলে ১৫ তে।
এমন সমীকরণে অধিনায়ক বাবর আজম বলে নিয়ে আসেন অভিষিক্ত হওয়া আমির জামালকে। পুরো ইনিংসে এর আগে একটিই ওভার করেছিলেন জামাল। সে ওভারে ৬ রান দিয়ে নিয়েছিলেন স্যাম কারানের উইকেট। তবে ইনিংসে শেষ ওভারে এবার তাঁর কাঁধে ১৫ রান ডিফেন্ড করার গুরুদায়িত্ব। মইন আলি স্লটের বল অবলীলায় বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারেন। আমির জামাল এখানেই কৌশল আটলেন। প্রথম দুই বলই দিলেন ওয়াইডার ইয়র্কার লেন্থে।
ফলাফল মইন আলী কোনো রানই না নিতে বাধ্য হলেন। পরের বলটায় অবশ্য ছক্কা হজম করলেন আমির। কিন্তু দমে গেলেন না। পরের দুই বল আবারো ওয়াইডার লেন্থে। ফলাফল পঞ্চম বলে মইন আলী স্ট্রাইক পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। আর শেষ বলে ডেভিড উইলি ৭ রানের সমীকরণে কিছু না করতে পারায় পাকিস্তান ৬ রানের জয় পায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আসে অভিষিক্ত আমির জামালের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং। বিশেষত, ইনিংসের শেষ ওভারে স্নায়ু ঠিক রেখে কৌশলে বোলিং করে যাওয়াতে এরই মাঝে ক্রিকেট বিশ্বে প্রশংসা কুড়াতে শুরু করেছেন আমির জামাল।
আমির জামাল পুরোদস্তুর একজন অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ভাল বোলিংও করেন তিনি। এবারের ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে প্রায় ৪২ গড়ে রান করেছেন ১৬৫ রান। সাথে স্ট্রাইক রেটটাও ছিল ঈর্ষণীয়, ১৯৪.১১। আর বল হাতে আমির শিকার করেছেন ৮ ম্যাচে ৯ উইকেট। পারফরম্যান্সের চিত্র দেখলেই বুঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানের জন্য কতটা সম্ভাবনাময় একজন অলরাউন্ডার হতে যাচ্ছেন আমির জামাল। সবে কেবল শুরু হয়েছে। এখন বহু পথচলা বাকি।
তবে, পেস বোলিংয়ের সাথে স্লগ ওভারে ব্যাটিং, এই প্যাকেজটা দারুণ ভাবে মিলে যায় পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার আব্দুল রাজ্জাকের সাথে। আমির জামালের হাত ধরে পাকিস্তান ক্রিকেটে বহু বছর পর যেন আব্দুল রাজ্জাকেরই ছায়া ভেসে উঠলো। আব্দুল রাজ্জাককে আমির জামাল ছাড়িয়ে যাবেন নাকি ছোট গল্পের মতোই মিলিয়ে যাবেন সেটাই আপাতত দেখার পালা।