কোনো ‘বৈধ’ ডেলিভারি না করেই ক্রিকেটের ইতিহাসে ৮ রান হজম করা একমাত্র বোলার হলেন পাকিস্তানের আব্দুর রেহমান। সালটা ২০১৪। এশিয়া কাপ চলমান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে এই অদ্ভুত রেকর্ডের মালিক বনে যান আব্দুর রেহমান। একটি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি সিঙ্গেল এবং তিনটি নো বলে ৩ মিলিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসে যোগ হয়েছে ৮ রান।
ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো বৈধ বল না করেই আট রান হজমের নজীর আর নেই। কে এই আব্দুর রেহমান? চলুন আগে তাঁকে চিনে নেই।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে জন্ম রেহমানের। পাঞ্জাবের মাঠে-ময়দানে ক্রিকেট খেলেই হয়ত স্বপ্ন বুনেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় দলের জার্সি গায়ে লাখো দর্শকের সামনে নামবেন সবুজ গালিচায়। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে তাঁর চেষ্টাটা চলতে থাকে ঘরোয় ক্রিকেটে।
বেশ সমৃদ্ধ এক ঘরোয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ার রয়েছে তাঁর। বা-হাতি অফ স্পিন বোলার ছিলেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৬৭৩টি উইকেট। এ থেকেই আন্দাজ করে নেওয়া যায় যে ঠিক কতটা কার্যকরী বোলার তিনি।
ম্যাচের সংখ্যা অবশ্য ১৮৪টি। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারটাও প্রশংসনীয়। সেখানে ১৭৪ ম্যাচের বিপরীতে ২৪৩ উইকেট রয়েছে তাঁর। পারফরম করেই জাতীয় দলের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিলেন আব্দুর রেহমান। ওয়ানডে ক্যারিয়ার দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা তাঁর।
শুরুটা করেছিলেন সেই ২০০৬ সালে। এরপর সেখানে পারফরমেন্সের ঝলক দেখিয়ে ক্রমশ জায়গা করে নেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলেও। তবে জাতীয় দলের ক্যারিয়ারটা যে খুব বেশি আলোকিত করতে পারেননি রেহমান। ২২ টেস্টে ৯৯ উইকেট, ৩১ ওয়ানডেতে ৩০ উইকেট।
চমকপ্রদ কোন পরিসংখ্যান নয়। তবে আরেকটু ভাল এক পরিসংখ্যান নিয়ে হয়ত তিনি শেষ করতে পারতেন নিজের ক্যারিয়ার। তবে ২০১৪ সাল এক অভিশাপ হয়ে হাজির হলো তাঁর জীবনে। সে বছর বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডেতে সবচেয়ে কলংকিত এক রেকর্ডের পাশে লেখা হয়ে যায় তাঁর নাম।
এশিয়া কাপের অষ্টম ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামে, প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। শুরুটা ভালই করেন তৎকালীন দুই ওপেনার ইমরুল কায়সে ও এনামুল হক বিজয়। এগারোতম ওভারে বল করতে আসেন আব্দুর রেহমান।
সবাইকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে প্রথম বলটা করলেন ইমরুল কায়েসের মাথার অনেক উপরে তাও আবার অফসাইডের অনেকটা বাইরে। স্বাভাবিক ভাবেই দায়িত্বরত আম্পায়ার সেটিকে ‘নো-বল’ ঘোষণা করলেন। এরপরের পর আবারও ইমরুল কায়েসের কোমর বরাবর বল ছুড়লেন রেহমান। ডিপ মিড উইকেট অঞ্চলে সেই বলটি তালুবন্ধি করেন তাঁর এক সতীর্থ। তবে আম্পায়াদের সন্দেহ হয়।
তাঁরা থার্ড আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত আসে সেটিও নো বল। এই ফাঁকে প্রান্ত বদল করে একটি রান নিয়ে নেন ইমরুল ও বিজয়। ব্যাটারের পরিবর্তন। হাত খুব ভাল করে মুছেও নিলেন রেহমান। তবে লাভের লাভ কিছু আর হলো না। তৃতীয় বলটিও তিনি করলেন বিজয়ের কোমর বরাবর। ইমরুলের মতো ভুল করেননি বিজয়।
সপাটে চালান ব্যাট চালান বিজয়। মিড উইকেট বাউন্ডারি তখন অরক্ষিত। সেই অঞ্চল দিয়েই চার আদায় করে নেন তিনি। ব্যাস! আম্পায়ারও জানিয়ে দিলেন রেহমানকে সে ম্যাচের মতো রেহমান আর বল হাতে আসতে পারবেন না বাইশ গজে। কে জানতো সেই নিষেধাজ্ঞা হয়ে যাবে চিরতরের। সেদিনের পর তাঁকে আর দেখায় যায়নি বল হাতে পাকিস্তানের রঙিন পোশাকে বাইশ গজের আশেপাশে।
০-০-৮-০ এমন এক বোলিং ফিগার নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা শেষ করেন রেহমান। অবশ্য তাতেই শেষ হয়ে যায়নি তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। সে বছর আগস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন রেহমান। তবে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি রেহমান। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচে মাত্র তিনটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন তিনি দুই ইনিংস মিলিয়ে।
শেষ হয়ে যায় আব্দুর রেহমানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। একজন বোলারের বোলিং যদি কার্যকারিতা হারায় তবে তিনি দলের বোঝায় পরিণত হন। তিনি তাঁর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছিলেন নাকি তা ছিলো সময়ের আঘাত তা জানা নেই। তবে ২০১৪ সালটা অপয়া এক সাল হয়ে রইবে আব্দুর রহমানের জীবনে তা সুনিশ্চিত।