উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন শহরটা খুব চেনা অভিমন্যু ঈশ্বরনের। জন্ম, শৈশব কিংবা ক্রিকেটের প্রাথমিক হাতেখড়ি- সবটাতেই মিশে আছে এই শহরের নাম। তবে অভিমন্যু ঈশ্বরন এখন যতটা না দেরাদুনের তার চেয়ে বেশি বাংলার। কেননা প্রায় এক দশক ধরে তিনি রঞ্জি ট্রফি খেলেন এই দলের হয়েই।
মূলত ক্রিকেট ক্যারিয়ার আরো সমৃদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই মাত্র ১০ বছর বয়সে অভিমন্যু কলকাতায় চলে আসেন। সেখানে কোচ নির্মল সেনগুপ্তের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠা। এরপর ২০১৩ সালে বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক। সেই থেকে বাংলাকেই আঁকড়ে ধরে আছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন।
অভিমন্যু এখন জাতীয় দলের দোরগোড়ায় আছেন। ভারতের হয়ে এখনও অভিষেক হয়নি বটে, তবে লাল বলের ক্রিকেটে দলের আশেপাশেই আছেন তিনি। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটে বর্তমানে দারুণ ছন্দে আছেন এ ব্যাটার। বিজয় হাজারে ট্রফি থেকে শুরু করে এবার রঞ্জি ট্রফিতে রীতিমত সেঞ্চুরির উৎসবে মেতেছেন অভিমন্যু।
টানা ৫ ইনিংসেই করলেন সেঞ্চুরি। তবে নিজ জন্মস্থান উত্তরাখণ্ডের বিপক্ষে রঞ্জি ট্রফিতে করা এবারের সেঞ্চুরিটা যেন একটু বেশিই ‘স্পেশাল’। কারণ যে মাঠে তিনি শতকটা হাঁকালেন সেই মাঠের নাম ‘অভিমন্যু ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’।
এ অভিমন্যু অন্য কোনো অভিমন্যু নয়, তিনি নিজেই। তাঁর নামে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল এ অ্যাকাডেমির। অর্থাৎ নিজের নামের মাঠেই সেঞ্চুরি করে অনন্য এক নজির গড়লেন অভিমন্যু ঈশ্বরন। তবে বিস্ময়ের শুরুটা এখানেই। অভিমন্যু ঈশ্বরনের বয়সটা সবে ২৭।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যার এখনও পা পড়েনি। কিন্তু তাঁর নামে মাঠ হলো কিভাবে? সাধারণত কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের সম্মান জানিয়ে মাঠের নামকরণ হয়ে থাকে। সেখানে উঠতি এক ক্রিকেটারের নামের সাথে মাঠের নামকরণের যোগ সংযোগ ঘটলো?
ঘটনাটা হলো, ২০০৫ সালে দেরাদুনে একটি জমি কিনেছিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরনের বাবা রঙ্গনাথ ঈশ্বরন। বাবা রঙ্গনাথ আবার ক্রিকেটাঙ্গনেরও কেউ ছিলেন না। পেশায় ছিলেন একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে তিনি ২০০৮ সালে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি করেন। যার নাম দেন, ‘অভিমন্যু ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’। ১৪ বছর আগে তৈরি হওয়া সেই অ্যাকাডেমির মাঠেই এখন রঞ্জি ট্রফির খেলা হয়।
কাকতালীয়ভাবে এ মৌসুমে দেরাদুনের এই মাঠেই মুখোমুখি হয়েছিল বাংলা আর উত্তরাখণ্ড। দেরাদুন অভিমন্যুর শহর, তবে তিনি খেলেন বাংলার হয়ে। আর নিজ শহরের বিপক্ষেই তিনি এবার রঞ্জিতে সেঞ্চুরি হাঁকালেন। তাতে অবশ্য অনন্য এক কীর্তিতেই নাম লিখিয়েছেন অভিমন্যু। বাবার তৈরি করা মাঠ কিংবা আরো স্পষ্ট করে বললে নিজের নামাঙ্কিত মাঠে সেঞ্চুরি করলেন তিনি।
দেরাদুনে হওয়া এ ম্যাচে এখন পর্যন্ত প্রথম দিন শেষে অপরাজিত রয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন। ১২ চার আর ১ ছক্কায় তাঁর ইনিংসটি এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে ১৪১ এ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ২০ টি সেঞ্চুরি করেছেন অভিমন্যু। রোহিত শর্মার ইনজুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন। তার আগে ভারত এ দলের সফরে তিনি বাংলাদেশ এ দলের বিপক্ষে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের বেশ কিছু সিরিজে তিনি স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটার হিসেবে স্কোয়াডে ছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত ভারতের হয়ে মাঠে নাম হয়নি তাঁর। অবশ্য ভারতের টেস্ট দলে কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের বেশ সুনজরেই আছেন ২৭ বয়সী এ ক্রিকেটার। খুব শীঘ্রই লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে অভিষেক হতে পারে অভিমন্যু ইশ্বরনের।