আবিদ আলীর ইতি!

কল্পনা করুন আপনি একজন খেলোয়াড়, ধরুণ ক্রিকেটার। আপনি আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে রয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনি চাইবেন নিজেকে ছাড়িয়ে, রেকর্ড বইয়ে অন্যদেরও টপকে যাবার। কিন্তু আপনি, আমি, আমরা যা চাই সবসময় কি তা আমরা পাই? বোধকরি না।

কিছু বিষয় থাকে যার কোন উত্তর, প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ আমাদের জানা থাকে না। এই যে যেমন পাকিস্তানের ব্যাটার আবিদ আলীর কথাই ধরুণ কিংবা আর্জেনটাইন ফরোয়ার্ড সার্জিও অ্যাগুয়েরোর কথাই চিন্তা করুন।

হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে ক্যারিয়ারের ইতি টেনে নিলেন অ্যাগুয়েরো। এখন আবিদ আলীও হয়ত রয়েছেন সেই পথে। অথচ এই বছরটা কি অনবদ্য কেটেছে পাকিস্তানের এই ওপেনিং ব্যাটার। সারা বছর জুড়েই পেয়েছিলেন রানের দেখা। সাথে শতক, দ্বিশতক ও অর্ধশতক তো রয়েছেই। কিন্তু তাঁর শরীরটা হয়ত এইবার আর তাঁকে সঙ্গ দিতে চাইছে না। বিশেষ করে বুকের ঠিক মধ্যখানে থাকা হৃদপিণ্ডটা।

গতকাল পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ঘরোয়া ক্রিকেট আসর কায়েদ ই আজম ট্রফির ম্যাচ চলাকালে বুকে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলো তাঁর। অবশেষে প্রথম এনজিওপ্লাস্টি শেষে ধারণা করা হচ্ছে তিনি অ্যাকুইট করোনারি সিড্রম নামক এক ধরণের হৃদরোগে আক্রন্ত।

যদিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ কী দারুণ ছন্দে ছিলেন আবিদ। এইতো ক’দিন আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হয়েছিলেন সিরিজ সেরা।

৮৭.৬৬ গড়ে রান করেছিলেন ২৬৩ রান। চার ইনিংসের একটিতে শতক ও দুইটিতে অর্ধশতক করেছিলেন আবিদ। তাছাড়া এ বছর টেস্টে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় রয়েছেন পঞ্চমস্থানে। অন্যদিকে ঘরোয়া লিগে ষষ্ঠ টেস্ট ম্যাচ খেলতে থাকা আবিদের রান সংখ্যা ছিলো ৭৬৬।

তাছাড় ২০১৯ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় আবিদ আলীর। তারপর থেকে ক্রিকেটের এই বনেদি ফরম্যাটে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই।

এখন পর্যন্ত নিজের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে চারটি শতকের পাশাপাশি তিনটি অর্ধশতকের কল্যাণে ১৬ ম্যাচে আবিদ সংগ্রহ করেছেন ১১৮০ রান। গড় পঞ্চাশের কাছাকাছি। দেরিতে শুরু হওয়া ক্যারিয়ারটাকে লম্বা না হোক রান দিয়ে সমৃদ্ধ করার চিন্তা তাঁর ছিলো হয়ত। সেই লক্ষ্যেই হাটছিলেন আবিদ।

সেন্ট্রাল পাঞ্জাবের হয়ে করাচিতে ঘরোয়া লিগ কায়েদ- এ আজম টুর্নামেন্টে খায়বার পাখতুনওয়ার বিপক্ষে অর্ধশতক হাঁকিয়ে ষাট রানের কাছাকাছি সময়ে মাঠ থেকে দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। দলের ম্যানেজার আশরাফ আলী এ বিষয়ে বলেন, ‘সকালে ও ৬২ রানে ব্যাট করছিল। তখনই বুকে ব্যাথার কথাটা আমাদের জানায়। একবার না, দুবার বলে ব্যাথার কথা। আমাদের কাছে মনে হয়েছে – ওকে হাসপাতালে পাঠানোই সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।’

আবিদ আলী বর্তমানে করাচির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে জানিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘তিনি বর্তমানে বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক দল ও পিসিবি মেডিকেল দল একত্রে তাঁর দেখভাল করছে। বর্তমানে তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।’

ৎতবে প্রাথমিক এনজিওপ্লাস্টে যে রোগ ধরা পড়েছে তাতে অতি শিঘ্রই তাঁর ক্রিকেটে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাছাড়া ৩৪ বছর বয়সী আবিদ আলীর দীর্ঘ বিরতির পর ক্রিকেটে ফেরাটাও বাস্তবসম্মত নয়।

সেক্ষেত্রে হয়ত থেমে যাবেন আবিদ আলী। এই হৃদরোগ তাঁকে আর খুব বেশিদূর এগোতে দিবে না হয়ত। মানুষের স্বপ্নের অপমৃত্যু বোধহয় একেই বলে। এভাবে সম্ভাবনাময় তারকা খসে যায় ক্রীড়াঙ্গনের অসীম আকাশ থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link