শাণ দিয়ে তাসমান পাড়ে

পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির খানিকটা ছিপছিপে গঢ়নের একটা ছেলে। দায়িত্ব তাঁর কাঁধে ‘পাওয়ার হিট’ করবার। স্লগারও বলতে পারেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অন্তত আফিফ হোসেনকে বাংলাদেশ সে দায়িত্বই দিয়ে থাকে। ওয়ানডেতেও এর ভিন্নতা নেই। তবে সত্যি বলতে ‘পাওয়ার হিটিং’ করতে যে পরিমাণ পেশিশক্তির প্রয়োজন তা আফিফের মধ্যে রয়েছে কি না সে নিয়ে একটা সন্দেহ থেকেই যায়।

আফিফ হোসেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। বয়সটা কেবল বাইশ। এর মধ্যেই তিনি আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। বলিষ্ঠ হতে শুরু করা কাঁধে বিশাল সব দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছেন। দলের বিপর্যয় সামলে ম্যাচ জেতাচ্ছেন। আশ্বাস দিচ্ছেন, পঞ্চপাণ্ডব পরবর্তী যুগেও দায়িত্ব নেওয়ার মত আরও একজন রয়েছে আমাদের। দেশ হোক কিংবা দেশের বাইরে, সবখানেই পারফরম করার একটা স্পৃহা থাকে আফিফের।

যেহেতু বছরের শেষ প্রান্তে আরও একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসতে চলেছে, তাই টি-টোয়েন্টি প্রেক্ষাপটটাই এখানে মুখ্য। একটা জিনিস বোঝা খুব জরুরি। আফিফের টি-টোয়েন্টি স্ট্রাইকরেট এখন ১১৬ এর একটুখানি বেশি। চলনসই বলা চলে টি-টোয়েন্টির এই মহারণে। তবে তাও তো বাংলাদেশের অনেক ব্যাটারদের থেকে ভাল। কিন্তু দল ঠিক কি চায় আফিফের কাছ থেকে?

দল চায় আফিফ একজন স্লগার হিসেবে খেলবে। ইনিংসের শেষের দিকে নেমে চটপট কিছু রান তুলে দিবে। এমন পরিস্থিতিতে আসলে নিজের পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকে না। আফিফও ঠিক পাচ্ছেন না সুযোগ। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে তো খেলোয়াড়ের প্রভাব বিচার করা যায় না। আফিফের প্রভাবটাও ঠিক তেমনি রান দিয়ে বিচার করা যাবে না।

চাপ সামলে নিয়ে ব্যাট করাটা সবসময় হয়ে ওঠে না। তবে আফিফ যে ঠিক কতটা চাপ সামলে নিতে পারেন তাঁর প্রমাণ তো আমরা পেয়েছি দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হওয়া সিরিজগুলোতে দেখেছি। তবে আফিফ ২০২১ এ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আস্থার প্রতিদান ঠিক দিতে পারেননি।

সে ধাক্কাটা সামলে নিয়েছিলেন তিনি পরবর্তী সিরিজগুলোতে। তিনি নিয়মিত রান করেছেন। দলের চাহিদা মেটাবার চেষ্টা করে গেছেন। এ বছর কেবল দুই খানা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে আফিফের। যদিও বিশ্বকাপের আগে বেশ কিছু সুযোগ তিনি পাবেন নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার। এই যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ রয়েছে।

তাছাড়া আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার একটা সম্ভাবনাও রয়েছে। সেই সাথে এবারের এশিয়া কাপ হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। সুতরাং নিজেকে শাণ দেওয়ার বেশ সুযোগ হাতে রয়েছে আফিফের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাউন্সি উইকেটে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন আফিফ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর যেহেতু অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তাই পেস সহায়ক উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা ভীষণ কাজে দেবে।

আফিফ নিশ্চয়ই সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবেন। সুযোগ হাতছাড়া করবার পাত্র নন তিনি। কিন্তু আফিফের বিশ্বকাপের সফলতা যতটা না তাঁর প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে, এর থেকেও বেশি নির্ভর করে বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনার উপর। আফিফ অত্যন্ত বুদ্ধিমান খেলোয়াড়দের একজন। তিনি মাঠের পূর্ণ ব্যবহার তিনি করতে পারেন। বাইশ গজে থিতু হতে একটু সময় নেন আফিফ।

কিন্তু বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি পরিকল্পনায় আফিফ সে সুযোগটা পাননা। তিনি কখনোই ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ গোছের ব্যাটার নন। এই বিষয়টা বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের বোঝা উচিৎ। সময়টুকু আফিফ পেলে তিনি কি করতে পারেন সে উদাহরণ তো নিকট অতীতেই রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেই হয়ত একটু আভাস পাওয়া যাবে যে আফিফকে নিয়ে ঠিক কি ভাবছে দল।

আর নিশ্চয়ই আফিফ দলের পরিকল্পনার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। নিজের খেলাটাকে সেভাবেই গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। সুযোগ গুলোকে কাজে লাগিয়ে ভরসার এক অটুট স্তম্ভ হয়েই যাবেন তাসমান পাড়ে। সময়ের কাছে তোলা থাক সব সম্ভাবনার উত্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link