পরম পরমানন্দ

রেয়ারেস্ট অব মার্জিন।

ক্রিকেট। গ্রেট লেভেলার কিনা, প্রশ্নের উত্তরটা ভাবছিলাম। কোনো কনক্লুশনে আসতে পারছি না। ভেতরের একটা পার্ট বলছে, হ্যাঁ। আরেকটা পার্ট সরাসরি মানা না করলেও, একটু গুছিয়ে বলছে পার্স্পেক্টিভ, আর সিচুয়েশন মিলিয়ে সময়ের ওপর ডিপেন্ড করে। কাজেই উত্তরটা আপেক্ষিকই।

ঈশ, উফ! অল্পের জন্য হলো না, কী করলে কী হতো থিওরি; ব্যক্তিগত জীবনে এসব কমবেশি আমাদের ছায়াসঙ্গী ই বলা চলে। দু-তিন অক্ষরের শব্দগুলো সাথে নিয়েই আফসোসে পুড়ি, ছিটকে পড়ি, হতাশ হই, ট্র্যাকে ফিরি, ভাবি- লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান?, উঠে দাঁড়াই, ছুটি, হার্ডল পেরোই, থুবড়ে পড়তে পড়তে অথবা, তড়িৎবেগে।

ইয়ান স্মিথ। নিউ জিল্যন্ডের সাবেক ক্রিকেটার। তবে ক্রিকেটার পরিচয় নয়, বরং এই জেনারেশনে কাছে পরিচিত হয়েছেন তার ধারাভাষ্য দিয়ে। ২০১৯ বিশ্বকাপে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের একটা মিসফিল্ডের পরে এই ভদ্রলোকই সবাইকে মনে করিয়ে দেন, সাকিবও মানুষ। তিনিও ফিল্ডিং মিস করেন। আমরা যেমন নতুন কোথাও গেলে কোনো একটা ল্যান্ডমার্কে রাস্তা চেনাজানার সূত্রটা সেট করি। ইয়ান স্মিথকে আলাদাভাবে মনে রাখার ল্যান্ডমার্কটা সাকিব।

সেমিফাইনালে মার্টিন গাপটিলের বুলেট থ্রোতে মহেন্দ্র সিং ধোনি রান-আউট হয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। ড্রেসিংরুমের কাচের দেয়ালে রোহিত শর্মার ঠেসে ধরা মাথা, কমেন্ট্রি বক্সে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে হতবাক হয়ে বসে ‘দাদা’ সৌরভ গাঙ্গুলি। তার পাশে বসে, না বসে নয়, উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে স্মিথ আওড়ে যাচ্ছিলেন, ‘ইজ দিস দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ, ইজ ইট দ্য ফাইনাল!’

১৫ জুলাইয়ের লর্ডস ফাইনালেও তিনি ছিলেন। মাঠে ছিল তার স্বদেশ। যার হাত ধরে সেবার ফাইনালে ওঠা, লর্ডসের পড়ন্ত রোদমাখা শেষ দৃশ্যটাতেও তিনিই; মার্টিন গাপটিল। স্মিথ জানান দিচ্ছিলেন অপ্রিয় মুহুর্তটার। ফাইনালের মঞ্চে যেখানে কেউই থাকতে চায় না। ক্রিকেটের মক্কায় নেমে আসা সেই অবসন্ন, বিষাদী বিকেলটা মনে করতে চাইবেন না বোধহয় নিউ জিল্যান্ডের কেউই।

হয়তো আনমনে এসে খেলা করে যায়, উইলিয়ামসন-গাপটিলদের সাথে। কে জানে? ক্ষতটা যে অনেক গভীর, সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিশামের টুইটটা মনে আছে তো? উইলিয়ামসনের মলিন মুখটাও মনে থাকার কথা।

ফাইনালের কথা বলছিলাম। সুপার ওভারের আগে স্টোকস তো মরতে মরতে বেঁচে গেছিলেন। ক্যাচ ধরে বোল্ট পা দিয়ে ফেলেন বাউন্ডারি রোপের কুশনে। সাথেসাথে জানিয়েও দেন সেটা ছক্কা। আজও তো তাই হলো। ফরম্যাট ভিন্ন, ক্ষেত্রটাও স্লাইটলি আলাদা, ভেন্যুটাও তাই, সাথে বাউন্ডারি লাইনেও চরিত্রের অদল-বদল।

জিমি নিশামের শটে জনি বেয়ারস্টো কী দারুণ ইফোর্টে ক্যাচটা নিয়েছেন। ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডেই সেটা হাত বদল হয়ে লিভিংস্টোনের কাছে। ডাগ আউটে জেসন রয়ের রিয়্যাকশন দেখছিলাম, কয়েকবার ‘ওয়াও’ বললেন। বিগ স্ক্রিনে নট আউট। ছয়।

ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডস।

নিশাম এর আগে একটা, ও পরে আরো একটা ছয় মেরেছেন। দুর্দান্ত একটা ক্যামিও খেলেছেন। ১১ বলে ২৭। আদিলের যে বলটায় মরগানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন, অল্পের জন্য মরগান ক্যাচটা ধরেছেন, নিশামও সেই অল্প ব্যবধানেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন। হাত গলে যে পড়েই যাচ্ছিল বলটা – শেষ মুহূর্তেই সামলে নেন।

সেদিন ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেন স্টোকস। সঙ্গী ছিলেন বাটলার। আজ নায়ক ড্যারেল মিশেল। পাশে থেকেছেন নিশাম। ফাইনালের মঞ্চ নয়, ফাইনালে ওঠার সিড়ি। সেই পুরনো দুই প্রতিপক্ষ। তবুও সেই গভীর ক্ষতে একটু হলেও শান্তির পরশ বুলিয়ে গেল মিচেলের মারা শেষ চারটা। সাউথ ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিক ওশানের দেশটায়।

ইয়ান স্মিথ আজ ছিলেন না কমেন্ট্রিতে। হয়তো টিভিতেই দেখেছেন সেদিনের মলিন মুখগুলোকে হাসতে, আনন্দে ভাসতে। নিশামের টুইটটা ছিল হৃদয়ভাঙা একটা মানুষের আর্তনাদের বহি:প্রকাশ। বেকিং কিংবা অন্যকিছু করে, ষাটোর্ধ্ব হয়ে জীবন পার করে দাও। এই ছিল তাঁর ভাষ্য।

নিশাম সেদিন নত মস্তকে লর্ডসের প্রান্তর ছেড়েছেন, আজ আবুধাবিতেও তাই। তবে পার্থক্যটা গড়ে দিয়ে গেছেন ঠিকই। শেষটা রাঙিয়ে দিয়েছেন তাঁরই সহযোদ্ধা।

নিশাম, বেকিং হয়তো প্রফেশন হিসেবে খারাপ না। কিন্তু ক্রিকেটটা আরো একটু বেশি থ্রিলিং, নাকি? এখন তো একমত হবেন আশা করি। ওহ হ্যাঁ! ষাটে বুড়িয়ে গিয়ে মোটাসোটাও হবেন আশা করি।

ইয়ান স্মিথ, শুনছেন কি? দেখছেন কি? আপনার দেশের ক্লান্ত-শ্রান্ত ছেলেগুলো সেদিনের ‘Agony’ কে অলমোস্ট ‘Absolute ecstasy’ তে রুপ দিয়েছে।

অলমোস্ট বললাম। একটা মাত্র সিড়ি তো আর বাকি। ক্রিকেট গ্রেট লেভেলার কিনা সেই প্রশ্নের প্রোপার উত্তরটাও তো খুঁজে পাওয়া বাকি আমার। আমাদের নিয়ে সেই সিড়িটাও উতরে যান না নিউজিল্যান্ডাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link