জহির খান ও অজিত আগারকার, এই শতাব্দীর প্রথম দশকে ভারতের দুই সেরা পেসার, পারফর্মার বলাই যায়, বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। দুই মুম্বাইকরের অদ্ভুত রসায়ন ভারতীয় পেসার বোলিং বিভাগকে নতুন পথ দেখিয়েছে তা বলবার অপেক্ষা রাখে না।
বাঁহাতি জহিরের গুড লেংথে পড়ে ইনসুইংয় গুলো ডানহাতি ও বাঁহাতি (তাদের আউট সুইং) উভয় ব্যাটারদের বারবার বিভ্রান্ত করেছে, কয়েকজন তো আবার জহিরের ‘বানি’ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছিলেন, বিশেষ করে গ্রায়েম স্মিথ। নতুন বলে অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ, পুরোনো বলে রিভার্স সুইং সহ ডেথে ইয়র্কার করবার ক্ষমতা, জহির খানকে ভারতের সীমিত ওভারের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি বানিয়েছে।
উল্টোদিকে অজিত আগারকার কিছুটা ‘হিট দ্য ডেক’ টাইপের বোলার। নতুন বলে আউট সুইং অনবদ্য, যে কোনো অবস্থায় উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষমতা, ডেথ বোলিং এনার অন্যতম গুণ, বাড়তি পাওনা ব্যাটিং। ভারতের হয়ে ওডিআইতে দ্রুততম ৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও এনার ছিল।
তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম বহু ম্যাচে এনারা দুজন একসাথে নতুন বল শেয়ার করেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন যাকে বলে। দু’জনে একসাথে খেলেছেন এমন ম্যাচ সংখ্যা ৫৮, উইকেট সংখ্যা ১৮০ (জহির-অজিত, ৩ ২, ২ ২, ২ ০, ০ ০, ০ ২, ৩ ১, ৪ ০, ০ ৩, ১ ০, ১ ২, ১ ১, ২ ১, ০ ৪, ১ ১, ০ ০, ২ ৩, ৪ ১, ৪ ০, ০ ২, ১ ২, ২ ৪, ৩ ০, ০ ৩, ১ ০, ১ ৩, ১ ০, ৩ ৩, ১ ০, ২ ২, ৩ ১, ৩ ১, ০ ১, ১ ৩, ০ ০, ১ ১, ৪ ৩, ০ ২, ৩ ০, ১ ৪, ২ ১, ৩ ২, ১ ১, ২ ২, ১ ২, ২ ২, ৩ ১, ১ ০, ২ ১, ১ ১, ১ ২, ৫ ০, ২ ২, ১ ০, ২ ৩, ২ ১, ১ ২, ১ ০, ১ ৪ মোট ৯৫ ৮৫, গড় কিংবা ইকোনমি হিসাব করা নেই), ম্যাচ প্রতি দু’জনে মিলে তিন উইকেট নিয়েছেন, যা তখনকার দিনের উপমহাদেশের পেসার হিসেবে যথেষ্ট ইমেপ্রেসিভ।
আবার সব মিলিয়ে দেশের তথ্য পর্যালোচনা করলে কিন্তু উইকেট সংখ্যা, গড় ও স্ট্রাইক রেট সবেতেই কিন্তু আগারকার এগিয়ে। জহিরের গড় ৩০.১১ আর স্ট্রাইক রেট ৩৬.৪, যেখানে আগারকার এর গড় ২৭.৮৫ আর স্ট্রাইক রেট ৩২.৯। শুধু ইকোনমিতে জাহির খান একটু এগিয়ে, জাহির এর ৪.৯৫ এবং আগারকার এর ৫.০৭।
এতকিছুর পরও এই প্রজন্মের কাছে জাহির এগিয়ে থাকবেন বা রয়েছেন শুধু ২০১১ বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে ভারতকে চাম্পিয়ন করবার অন্যতম কাণ্ডারি হওয়ার জন্য, যা করতে করতে রয়ে গিয়েছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে।
অন্যদিকে অজিত আগরকারের ক্যারিয়ারের মধ্য গগনে দেশের তেমন বহুদলীয় সাফল্য নেই, ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০০৭ বিশ্বকাপেই, আমাদের অন্যতম দু:স্বপ্নের বিশ্বকাপে। তাই হয়তো এই প্রজন্মের কাছে তিনি ততটা পরিচিত নন। এছাড়াও আরও কিছু কারণ রয়েছে।
ধন্যবাদ দুইজন অসাধারণ মানুষকে, দেশের দিশারী হয়ে দেশকে সাফল্য দিয়ে আমাদের শৈশবে যথাসম্ভব মাধুর্য এনে দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে দেশের আগামীদের দিশা দেখাবেন কোনো ভাবে এই কামনা রইলো।