আকবর আলী, দেরীতে ফোটা সুবাসিত ফুল?

নিজের গড় কিংবা রানের ট্যালিটা বাড়ানো দুষ্ট চক্রে তিনি আটকে নেই। নিজেকে সত্যিকার অর্থেই একজন কার্যকর ব্যাটার প্রমাণের প্রয়াশে রয়েছেন তিনি।

টানা দ্বিতীয়বার রংপুর বিভাগকে এনসিএল টি-টোয়েন্টির ফাইনালে তুলেছেন আকবর আলী। তিনি যেন এক জাত দলনেতা। সেই যে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে শুরু, এরপর থেকেই ঘরোয়া সার্কিটে দেখিয়ে যাচ্ছেন নিজের নেতৃত্বের মুন্সিয়ানা। তবে বরাবরই প্রশ্ন ছিল তার ব্যাটিং নিয়ে। এদফা যেন নিজের সেই অপ্রতুলতাকেও ভেঙে নতুন করে গড়ার পথে হাঁটছেন আকবর আলী।

২০২০ সালে যখন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতল, ঠিক তখন থেকেই আকবরকে ভাবা হচ্ছিল ভবিষ্যত দলনেতাদের একজন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় কেটে গেছে পাঁচ বছর, এখনও তিনি জাতীয় দলের সাইড বেঞ্চ অবধি পৌঁছাতে পারেননি। অথচ তার অধীনে শিরোপা জেতা অনেকেই জাতীয় দলের স্তম্ভে পরিণত হয়েছেন সময়ের সাথে সাথে।

তানজিদ হাসান তামিন, পারভেজ হোসেন ইমনরা তো ওপেনিংয়ের বর্ণিল অধ্যায়ের সারথি। অন্যদিকে তাওহীদ হৃদয় ‘স্টারবয়’ তকমা গায়ে চড়িয়ে, অফফর্মের নিদারুণ বেদনার দিনও পার করে ফেলছেন। তানজিম হাসান সাকিবকে পেস বোলার থেকে পেস বোলিং অলরাউন্ডারে রুপান্তরিত করার একটা প্রচেষ্টাও চলছে। কিন্তু আকবর রয়ে গেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অধিনায়ক হয়ে।

এর পেছনে মূলত কারণ ছিল তার ব্যাটিং। আকবরে নেতৃত্বগুণ যতটা প্রশংসনীয়, তার ব্যাটিং দূর্বলতা ঠিক ততটাই সমালোচনার বিষয়বস্তু। তার ব্যাটিং বড্ড সাদামাটা, কোন প্রকার এক্স ফ্যাক্টর নেই। উইকেট কিপিংয়েও তিনি চোখ ধাঁধানো সেটা বলার উপায় নেই। সে কারণেই মূলত তার অপেক্ষার প্রহর হচ্ছে দীর্ঘ।

তবে অপেক্ষার দিনগুলো হতাশায় কাটিয়ে দিচ্ছেন না আকবর। সে প্রমাণ অন্তত নজড়ে আসতে শুরু করেছে। এবারের এনসিএল টি-টোয়েন্টি আকবর তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। রংপুর বিভাগের হয়ে সর্বোচ্চ রান এসেছে তারই ব্যাট থেকে। ‘ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট!’

আট ম্যাচে ২০৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। এর মধ্যে একটিও নেই পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস। এখানেই মূলত একটু নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইছেন আকবর আলী। তিনি সাধারণত ব্যাটিং করেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। এবারের এনসিলে প্রায় নিয়ম করে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করেছেন তিনি। তার পরে সেই অর্থে আসলে ব্যাটার থাকেন না রংপুরের একাদশে।

অতএব দায়িত্বভার থাকে বেশ। দলকে শেষের দিকে দ্রুত কিছু রান তুলে দেওয়া, রান তাড়ায় বলের সাথের রানের ব্যবধান কমিয়ে নেওয়া- এসব দিক বিবেচনায় রেখে চলছে তার ব্যাট। ১৪৯.২৬ স্ট্রাইকরেট এই স্বীকারোক্তি দিচ্ছে যে- মোটেও আকবর স্লথ ধারায় রান তুলছেন না। নিজের গড় কিংবা রানের ট্যালিটা বাড়ানো দুষ্ট চক্রে তিনি আটকে নেই। নিজেকে সত্যিকার অর্থেই একজন কার্যকর ব্যাটার প্রমাণের প্রয়াশে রয়েছেন তিনি।

কিছু ফুল দেরীতে ফুটেও সুবাস ছড়ায় আপন মহীমায়। হোক না আকবরের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু। উত্তপ্ত লোহার নমনীয় রুপে নয়, তিনি হাজির হোক হাতুড়ি পেটায় বনে যাওয়া ধারালো তরবারী হয়ে। কোন প্রকার দুষ্ট চক্রে আটকে না গিয়ে তার স্রেফ নিজের উন্নতির দিকেই রাখা উচিত নজর।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link