পাকিস্তানের ‘পাকবল’ বিপ্লব

বাজবল – ক্রিকেট পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায় শব্দটা। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সবচেয়ে পরিচিত ক্রিকেটীয় টার্ম বোধহয় এটিই। এত হাকডাকের যৌক্তিক কারণও আছে, এই বাজবল-ই বদলে দিয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের গতিপথ।

বিরক্তিকর সাদা পোশাকের ম্যাচ এখন পুরো পাঁচ দিন ধরেই দর্শকদের জন্য বেশ উপভোগ্য। বাজবলের শুরুটা ইংল্যান্ডে, নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে বেন স্টোকস, জো রুটরা দীক্ষা নিয়েছেন আক্রমণাত্বক ক্রিকেটের। এবার তাঁদের অনুসরণ করতে শুরু করেছে পাকিস্তান টেস্ট দলও, আগ্রাসী মেজাজেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লাল বলের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে তারা।

নতুন অ্যাপ্রোচে সাফল্যের দেখাও পেয়েছে বাবর আজমের দল; স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানি ব্যাটাররা। আর তাই দলটির এমন নতুন ধরন প্রশংসা কুড়িয়েছে সাবেক ক্রিকেটার এবং বোদ্ধাদের। কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতার তো নতুন টার্ম তৈরি করেছেন, তাঁর মতে, পাকিস্তান এখন ‘পাকবল’ স্টাইলে টেস্ট খেলছে।

গত সোমবার নিজের টুইটার একাউন্টে একটি টুইট করেন রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। সেখানে তিনি লিখেন, ‘পাকবল কি তাহলে বিশেষ কিছু হয়ে উঠছে?’ এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ‘পাকবল’ টার্ম।

সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাত্র ১৬৬ রানেই শ্রীলঙ্কার ইনিংস থামিয়ে দিয়েছে নাসিম শাহরা। এরপর লঙ্কানদের ম্যাচে ফেরার কোন সুযোগই দেননি পাক টপ অর্ডার। শুরুতে ইমাম উল হককে হারালেও রক্ষণাত্মক হয়নি পাকিস্তান, বরং শান মাসুদকে সঙ্গে নিয়ে স্বাগতিক বোলারদের উপর আরো চড়াও হন আবদুল্লাহ শফিক।

মাত্র সতেরোতম ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ করেন এই দুজন। তবে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি করার পরে শান মাসুদ আউট হলে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেট জুটি। অধিনায়ক বাবর আজম এবং আবদুল্লাহ শফিক দিনের বাকি সময় কাটিয়ে দেন আর কোন বিপদ ছাড়াই।

বাবর অপরাজিত আছেন আট রানে আর শফিকের ব্যাটে এখন পর্যন্ত এসেছে ৭৪ রান। সব মিলিয়ে ২৮.৩ ওভার খেলে পাকিস্তানের সংগ্রহ এখন ১৪৫ রান; রান রেট পাঁচের উপরে।

শুধু ব্যাটিং নয়, ফিল্ডিং বা বোলিংয়ের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্বক হওয়াটাও বাজবলের অংশ। তাই ব্যাটিং বাদেও বাকি দুই বিভাগ নিয়ে ভাবতে হবে টিম ম্যানেজম্যান্টকে। পুরো দল হিসেবে আগ্রাসী হতে পারলেই পরিপূর্ণ বাজবল হতে পারবে নবাগত ‘পাকবল’।

আক্রমণাত্বক হলে ঝুঁকি থাকে বিপদেরও; বাজবলের অপকারী দিক তাই নেহায়েৎ কম নয় ৷ তথাকথিত পাকবলের জন্যও একই কথা বলা যায়। ইংল্যান্ড কিন্তু বাজবলের অপকারী দিক দারুণভাবে সামলেছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই খেলে যাচ্ছে। পাকিস্তানও কি পারবে ঝুঁকি সামলে নতুন ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট চালিয়ে যেতে – সময় হলেই এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link