আট রানে থামল আঠার বছরে যাত্রা

ব্যাটটা তুলে ধরলেন, হাত নাড়লেন। ফিরতে হয়ত মন সায় দিচ্ছিল না। যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। চলে গেলেন ম্যাথুস, শেষ বারের মত - ক্রিকেট নদীর ওপারে।

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস — শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের এক মহীরুহ, বিদায়ী টেস্ট ইনিংসে থামলেন মাত্র ৮ রানে। তবে, এটা কোনো দু:খ ভারাক্রান্ত বিদায় নয়। এ যেন এক বিদায়ের উৎসব।

আউট হওয়ার পরও তিনি হাসিমুখে বিদায় নিলেন। বাংলাদেশের প্রত্যেক খেলোয়াড় একে একে এসে হাত মেলালেন। গলের সমুদ্রের গর্জনের মাঝেই গর্জে উঠল উত্তাল গ্যালারি। দ্য লায়ন ইন হোয়াইট ব্যাট তুলে শেষ বারের মত পৌঁছে গেলেন সাজঘরে।

তাইজুল ইসলামের ডেলিভারিটাতে যেন ম্যাথুসের বিদায়ই লেখা ছিল। অফ স্টাম্পে করা হালকা ফ্লাইটেড ডেলিভারি, ভেতরে ঢুকে পড়ল। ম্যাথুস এগিয়ে এসে খেলতে গেলেন, কিন্তু বলের লাইনে ছিলেন না। ব্যাটে লেগে প্যাডে, সেখান থেকে লাফিয়ে উঠল বল।

সিলি মিড-অফে দাঁড়ানো মুমিনুল হক সেই বলটা দুই হাতে ধরলেন—ম্যাথিউসের টেস্ট জীবনের শেষ দৃশ্যটা তখন চিরকালীন হয়ে গেল। এক ঝলকে থেমে গেল গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।

বাংলাদেশের সব ক্রিকেটাররা গেলেন তাঁর দিকে, হাত মেলালেন, মাথা নোয়ালেন শ্রদ্ধায়। ফেরার আগে মুশফিকুর রহিমের সাথে খুনসুটি সেরে নিলেন ম্যাথুস

গ্যালারিতে তখন করতালির ঢেউ, লঙ্কান ড্রেসিংরুম উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাচ্ছে। ওপারে উড়ছে শ্রীলঙ্কার পতাকা — ম্যাথুস সেই পতাকার ছায়ায় হেঁটে চলে যাচ্ছেন ইতিহাসের ভেতরে। ৪৫ বলে ৮ রানের ইনিংস, একটা চার। সাথে ১৮ বছরের অনেক স্মৃতি।

শেষবারের মতো সাদা জার্সিতে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটে যাওয়া এক কিংবদন্তি। সাজঘরে ঢুকে যাওয়ার আগে একটু থামলেন। আবারও গ্যালারির দিকে ফিরলেন।

ব্যাটটা তুলে ধরলেন, হাত নাড়লেন। ফিরতে হয়ত মন সায় দিচ্ছিল না। যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়। চলে গেলেন ম্যাথুস, শেষ বারের মত – ক্রিকেট নদীর ওপারে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link