আইসিসির মঞ্চে ব্যর্থ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স

বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ‍্যগ্র মেদিনী - সতীর্থরা যখন নিশ্চিত হার মেনে নিয়েছিল তখনো মাইকেল ব্রেসওয়েল লড়াইয়ের মন্ত্র ঝপেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের জিততে কষ্ট হয়নি, তবে যতটুকু দেরি হয়েছে সেজন্য চাইলে ব্রেসওয়েলকে দায়ী করা যায়।

বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ‍্যগ্র মেদিনী – সতীর্থরা যখন নিশ্চিত হার মেনে নিয়েছিল তখনো মাইকেল ব্রেসওয়েল লড়াইয়ের মন্ত্র ঝপেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের জিততে কষ্ট হয়নি, তবে যতটুকু দেরি হয়েছে সেজন্য চাইলে ব্রেসওয়েলকে দায়ী করা যায়। ব্যাটে বলে পারফরম করে তিনিই বাঁচিয়ে রেখেছিলেন নিউজিল্যান্ডের আশা।

ভারতীয় স্পিনারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকা কিউই ব্যাটিং লাইনআপ যখন দুইশ রানের গণ্ডি পেরুনোর শঙ্কায় ছিল তখন তিনি খেলেছেন ৪০ বলে ৫৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। শুধু কি তাই? দ্বিতীয় ইনিংসে দশ ওভার হাত ঘুরিয়ে খরচ করেছেন মাত্র ২৮ রান, বিনিময়ে তুলে নিয়েছেন বিরাট কোহলি আর অক্ষর প্যাটেলের উইকেট। তবে শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি, ট্র্যাজিক হিরো জয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে।

যদিও এমন ঘটনা আইসিসির বৈশ্বিক ট্রফির ইতিহাসে নতুন নয়, টুর্নামেন্টের নকআউটে অবিশ্বাস্য অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স দেখিয়ে হেরে যেতে হয়েছে অনেক তারকাকে। তাঁদের নিয়েই খেলা-৭১ এর আজকের আয়োজন।

  • সাকিব আল হাসান বনাম নিউজিল্যান্ড (২০১৯)

৬৮ বলে ৬৪ রান করলেন। বোর্ডে বাংলাদেশ সেদিন বার্মিংহ্যামে জমা করেছিল ২৪৪ রান। এই লক্ষ্যেও দলটা জয়ের পথেই ছিল। মুশফিকুর রহিম তখনই এক শিশুতোষ ভুল করলেন, কেন উইলিয়ামসনের সহজ এক রান আউট মিস করলেন। শেষ অবধি ওই ভুলে ভর করেই রস টেলরের ব্যাটে জয় পায় বাংলাদেশ। বল হাতে সাকিব দুই উইকেট নেন। বাংলাদেশ ছিল পরাজিতের দলে, সেই ম্যাচটা জিতে ফেললে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসই সম্ভবত অন্য ভাবে লেখা হত।

  • জো রুট বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১৬)

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানেই বেন স্টোকস কিংবা কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। জো রুটকে আর ক’জনই বা মনে রেখেছেন? অথচ ব্যাট হাতে স্রেফ ৩৬ বলে ৫৪ রানের বিধ্বংসী একটা ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। বল হাতে এসে আরো বেশি চমক দেখিয়েছিলেন রুট, এক ওভার হাত ঘুরিয়েই ক্রিস গেইল আর জনসন চার্লসকে ফেরান তিনি। কিন্তু দিনশেষে প্রদীপের নিচেই থাকতে হয়েছে তাঁকে, দুর্ভাগ্যের সংজ্ঞা বোধহয় এটাই।

  • রবি বোপারা বনাম ভারত (২০১৩)

২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ইংল্যান্ড কিভাবে হারলো সেটা এখনো রহস্য হয়ে আছে। তবে অবিশ্বাস্য সেই পরাজয়ের দু:খটা সবচেয়ে বেশি রবি বোপারার। কি করেননি তিনি? বিশ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বিশ রান খরচায় পেয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট, আবার ১৩০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে করেছেন ২৫ বলে ৩০! কিন্তু শিরোপা ছোঁয়া আর হলো না তাঁর।

  • শচীন টেন্ডুলকার বনাম নিউজিল্যান্ড (২০০০)

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল, বড় মঞ্চে বড় ক্রিকেটাররাই জ্বলে উঠেন। শচীন টেন্ডুলকারও জ্বলে উঠেছিলেন, ৮৩ বলে করেছিলেন ৬৯ রান। তাঁর গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ২৬৪ রানের পুঁজি দাঁড় করায় ভারত। সেদিন পুরোদস্তুর বোলার হয়ে গিয়েছিলেন ক্রিকেট ঈশ্বর, দশ ওভার হাত ঘুরিয়েছিলেন আর তাঁর বোলিং ফিগার ছিল ৩৮/১। কিন্তু কিউইদের থামানোর জন্য এমন অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স যথেষ্ট ছিল না।

  • জ্যাক ক্যালিস বনাম ভারত (২০০২)

২০০২ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ভারত ২৬২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। রান তাড়ায় নেমে প্রোটিয়া ব্যাটাররা ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন আসা যাওয়ার মিছিলে, ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল জ্যাক ক্যালিস। নিঃসঙ্গ শেরপার মত লড়াই করেন তিনি, খেলেন ৯৭ রানের অনবদ্য ইনিংস। তবে জয়ের বন্দরে পৌঁছানো হয়নি। এর আগে আবার হাফসেঞ্চুরিয়ান বীরেন্দর শেবাগের উইকেটও পেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার – কিন্তু তাতে আর কি আসে যায়?

Share via
Copy link