ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি নয়, ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাট আসলে টেস্ট। তাইতো কোন ব্যাটারের শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মানদন্ড সাদা পোশাকের পারফরম্যান্স। অবশ্য ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেকে আছেন যারা সাদা পোশাকের পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেদের স্মরণীয় করে রেখেছেন।
কিন্তু ইতিহাসের পাতায় থাকা এসব কিংবদন্তিদের মাঝে সেরা কে? উত্তর খুঁজতে গিয়ে খেলা-৭১ তৈরি করে ফেলেছে সর্বকালের সেরা পাঁচ টেস্ট ব্যাটারের সংক্ষিপ্ত তালিকা।
- স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া)
‘অতিমানব’ – স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানকে বিশ্লেষণ করতে এই বিশেষণটাও কম হয়ে যায়৷ নিশ্চিতভাবেই বলা যায় টেস্টে তাঁর ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়ের রেকর্ড কখনোই ভাঙ্গবে না। স্রেফ ৫২ টেস্টে ৬৯৯৬ রান করেছেন তিনি; আর এই অজি ব্যাটারের ঝুলিতে আছে অসংখ্য রেকর্ড।
টেস্টের একদিনে ৩০০ রান করেছেন তিনি, আর ক্যারিয়ার জুড়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন দুইবার। বিদায়ী ইনিংসে চার রান করলেই ব্র্যাডমানের গড় একশ পার হতো, কিন্তু তিনি কোন রানই করতে পারেননি। এই অতৃপ্তিই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
- শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার সম্ভবত আধুনিক যুগের ব্র্যাডম্যান। তাঁর ব্যাটে ছিল অসাধারণ সব শট, ২৪ বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে তাই সমর্থকদের মুগ্ধ করতে ভুল হয়নি তাঁর। সবমিলিয়ে প্রায় ৫৪ গড়ে ১৫৯২১ রান করেছেন তিনি, অবিশ্বাস্য বটে।
তবে আগের যুগের মড গড়পড়তা বোলার নয়; ভারতীয় তারকাকে খেলতে হয়েছে ওয়াসিম আকরাম, গ্লেন ম্যাকগ্রা, মুত্তিয়া মুরালিধরনদের বিপক্ষে। কিন্তু সেটা দমিয়ে রাখতে পারেনি শচীনকে, প্রতিটা টেস্ট দলের বিপক্ষে শতক আছে তাঁর। তাঁকে তাই সর্বকালের সেরাদের তালিকার দুই নম্বরে রাখাটা অযৌক্তিক ভাবার সুযোগ নেই।
- স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালী সময়ের নায়ক স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। তাঁর ব্যাটিং ছিল ভয়ানক সুন্দরের সবচেয়ে নিখুঁত উদাহরণ, বোলাররা ভয় পেতেন তাঁকে বল করতে। সে সময়ে এমনিতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নড়বড়ে, তবু হেলমেট ছাড়া নির্দ্বিধায় নেমে পড়তেন ভিভিয়ান – তাঁর আগ্রাসন বোঝাতে এতটুকুই যথেষ্ট।
ক্যারিয়ারে মোট ১২১ টেস্ট খেলে ৮৫৪০ রান করেছেন তিনি, কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে আসলে ভিভিয়ানের ইম্প্যাক্ট মূল্যায়ন করা যায় না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯১ রানের ইনিংস কিংবা ৫৬ বলে সেঞ্চুরি; এমন অতিমানবীয় স্মৃতি কি করে ভুলতে পারে ক্রিকেটপ্রেমীরা।
- সুনীল গাভাস্কর (ভারত)
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুর্ধর্ষ পেস ব্যাটারির সামনে দাঁড়াতে ব্যাটারদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো, অথচ সুনীল গাভাস্কর তাঁদের নামিয়ে এনেছিলেন পাড়ার বোলারদের পর্যায়ে। ক্যারিবীয় বোলারদের বিপক্ষে তেরোটা শতক আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি, লাল বলে তাঁর দাপট বোঝাতে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই আসলে।
পেস বোলারদের মতই স্পিন বলেও এই ডানহাতি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালাতে জানতেন। তা নাহলে প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে দশ হাজার রানের মাইলফলক পূর্ণ করা সম্ভব হতো না। সেজন্যই টেস্ট ক্রিকেট যতদিন থাকবে ততদিনই গাভাস্করের নাম উজ্জ্বল থাকবে।
- স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
‘মোস্ট কমপ্লিট ক্রিকেটার’ খুব সহজে ট্যাগটা কাউকে দেয়া যায় না, তবে স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছেন এই ট্যাগ। ৯৩ ম্যাচ খেলে ৮০৩২ রান করেছিলেন তিনি, সেটাও আবার ৫৮ গড়ে। তবে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংটাও ভালোই জানা ছিল, ক্যারিয়ারে ২৩৫ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন এই বাঁ-হাতি পেসার।
যদিও কিছু সংখ্যা দিয়ে প্রকৃত ইম্প্যাক্ট হিসেব করা যাবে না। ব্যাট হাতে যেমন এক ইনিংসেই ৩৬৫ রান করতে জানতেন সোবার্স, তেমনি পারতেন এক ইনিংসে ছয় উইকেট তুলে নিতে – সেজন্যই তাঁর অবসরের পর এমন কাউকে খুব একটা দেখা যায়নি।