প্রিয় আর্শদ্বীপ,
জানো তো, জীবন অনেকটা হকি খেলার পেনাল্টি কর্নারের মতো হওয়া উচিত; এন্ডলাইনের কোল ঘেঁষে হকি স্টিকের আগায় রাখা বলে স্ট্রাইক পড়লেই অপোনেন্টের ব্যাক লাইন এগিয়ে আসতে থাকে বলকে ছোঁ মেরে কেড়ে নিতে। আর তখন সেই অগ্রসরমান ডিফেন্ডারদের ফাঁকফোকর খুঁজে স্ট্রাইকারের কাজ হয়ে যায় বলকে জালে পাঠানো।
প্রতিপক্ষ স্থির হলে তাকে ঘা মারা কিছুটা সহজ, প্রতিপক্ষ অগ্রসরমান হলে কাজটা যে আরও শক্ত হয়ে যায়। ঠিক যেমন করে তোমার দিকে এখন ধেয়ে আসছে প্রতিপক্ষ। কোথাও প্রসঙ্গ ক্যাচ মিসের পরে তোমার হাসি, কোথাও প্রসঙ্গ ‘খালিস্থান’, কোথাও আবার প্রসঙ্গটা ‘আইপিএল কিডো’র। এসব কিছুই তোমার প্রতিপক্ষ।
আর্শদ্বীপ, তুমি তো পাঞ্জাব কা পুত্তার, হকির স্টিকওয়াকটা তোমার রক্তে, তুমি ভালো করেই জানো কিভাবে পাঁচজনের ব্যাকলাইন চিরে স্টিক দিয়ে বলটাকে টপ কর্নারে ফিনিশ করতে হয়। জানো বই কি,নইলে ক্যাচ মিসের প্রেসারকে দুই আঙুলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ভারত আর পাকিস্তান ম্যাচে অমন ফাইনাল ওভার করা যায়!
আর্শদ্বীপ, তোমার বয়স তেইশ মাত্র। তোমার অগ্রজ লক্ষ্মীপতি বালাজি যখন ২০০৪ সালের পাকিস্তান সিরিজে হার্টথ্রব হয়ে উঠলো তখন তাঁর বয়সও তেইশ। তোমার আর তাঁর মধ্যে খুব মিল খুঁজে পাচ্ছি। তোমার হাতে বালাজির মতো কাটার হয়তো নেই, কিন্তু তোমার দুই আঙুলের ফাঁক বেয়ে ধেয়ে আসা ইয়র্কার ব্যাটসম্যানের মতো দর্শকেরও যে মন চিরে দেয়।
বালাজিও হাসতো, তোমার মতোই, শান্ত নীরব সেই হাসি, তুমিও হেসো, এভাবেই, চাপের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে হেসে যেও এভাবেই।
আর্শদ্বীপ, জহির খানের পর লম্বা ইনিংসের বাঁ-হাতি পেসার আর আসেনি ভারতে। রুদ্রপ্রতাপ সিং, ইরফান পাঠান – সবাই কালের হাওয়া বেয়ে হারিয়ে গিয়েছে। তুমি হারিও না। আমরা অপেক্ষা করে আছি গতি বাড়িয়ে দৌড়ে এসে কখন এক দুরন্ত সর্দারজি ম্যাচ ঘুরিয়ে বলে যাবে — ‘ইয়ে তো মেরা বাঁয়ে হাত কা খেল হ্যায়।’
আমরা অপেক্ষা করে আছি কখন আরও এক দুরন্ত শিখের নামে গ্যালারিতে পোস্টার পড়বে – ‘সিং ইজ কিং’। আর্শদ্বীপ, তুমি বড়ো হয়ে উঠবে আরও। তোমাকে লালন করা হবে। আর আমরা রয়ে যাবো গ্যালারিতে, চিরদিনের মতোই, তোমার নামে গলা ফাটাবো, বলে উঠবো ‘হামারা পুত্তার, হামারা দেশ কা পুত্তার’। সেই দিনটার অপেক্ষায় থাকলাম।
– ইতি, ভারতবর্ষ