ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ইতিহাসের এক কিংবদন্তি স্পিনার হিসেবেই হয়তো তাঁকে মনে রাখতে পারতো ক্রিকেট দুনিয়া। তবে সেই কাব্য লিখতে তিনি আসেননি। স্পিন বোলিংটা তাঁর শক্তির জায়গা ছিল সবসময়ই। তবে হঠাত আইপিএল তাঁকে বানিয়ে দিল ওপেনিং ব্যাটার। সুযোগটার সর্বোচ্চ ব্যাবহার করে সুনীল নারাইন হয়ে উঠেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হটকেক।
পিঞ্চ হিটার সুনীল নারাইনের সর্বোচ্চ রূপ দেখা গেল আজ মিরপুরের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। ওপেন করতে নেমে এই আসরে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মাত্র ১৩ বলে। নিজের ১৩ তম বলে মৃত্যুঞ্জয়কে বাউন্ডারি মেরে এই রেকর্ড করেন সুনীল নারাইন।
১৩ বলে করা নারাইনের এই হাফ সেঞ্চুরিটি এখন বিপিএলের দ্রুততম রেকর্ড। এর আগে ১৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড ছিল আহমেদ শাহজাদের। ২০১২ সালের বিপিএলে এই ইনিংস খেলেছিলেন আফগানিস্তানের এই ওপেনার। আজ শাহজাদের পুরনো সেই রেকর্ড ভাঙলেন সুনীল নারাইন।
এছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেও এটি চতুর্থ দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেছিলেন যুবরাজ সিং। এছাড়া ক্রিস গেইল ও হজরতুল্লাহ জাজাইরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। আর আজ ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে রেকর্ড করলেন সুনীল নারাইন। এছাড়া মার্কাস ট্রেসকোথিকেরও ১৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড রয়েছে।
ক্যারিবিয়ান এই অলরাউন্ডার আউট হবার আগে খেলেন ১৬ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী এই ইনিংসটি সাজিয়েছেন ৫ টি চার ও ৬ টি ছয় দিয়ে। এই ইনিংসে নারাইন ব্যাটিং করেছেন ৩৫৬.২৫ স্ট্রাইকরেটে। বিপিএলে হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে এমন যেকোনো ইনিংসের সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের রেকর্ডও এটি। এমনকি যেকোনো ইনিংসের বিবেচনাতেও বিপিএলে তিনি স্ট্রাইক রেটে আছেন দ্বিতীয় স্থানে। বোঝাই যাচ্ছে, কতটা দানবীয় ছিলেন তিনি!
অথচ ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্পিন বোলার হিসেবেই নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট সবজায়গাতেই কার্যকর স্পিনার। এছাড়া সেই সময়েও শেষের দিকে ব্যাট হাতে প্রায়ই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে চিত্রনাত্রটা বদলে গেল ২০১৭ সালের আইপিএলে।
তবে এই যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে বিগ ব্যাশে। মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে ওপেনিং করার সুযোগ পান তিনি। তবে নারাইনের বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখা যায় পরের আইপিএলে। ২০১৭ সালে পুরো আসর জুড়েই কলকাতাকে উড়ন্ত সব সূচনা এনে দিয়েছিলেন নারাইন।
আসরে ১৮৯.৮৯ স্ট্রাইকরেটে ৩৫৭ রান করেছিলেন। যার ফলে পাওয়ারপ্লেতে দ্রুতগতিতে রান তুলেছিল কলকাতা। আইপিএলের প্রথম ১২ আসরের মধ্যে এক আসরে প্রথম ছয় ওভারে সবচেয়ে বেশি রান রেটে রান তুলেছে কলকাতা। ২০১৭ সালে কলকাতার প্রথম ছয় ওভারে রান রেট ছিল ৯.৪০।
ওদিকে বল হাতে আবার বেশ মিতব্যায়ী ছিলেন এই স্পিনার। চার ওভার বোলিং করে আজ খরচ করেছেন মাত্র ২৪ রান। যদিও এই স্পিনারের ঝুলিতে আজ কোন উইকেট ছিল না। তবে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে পাওয়ার প্লেতেই চট্টগ্রামকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন। তাঁর এই অবিশ্বাস্য ইনিংসে ভর করেই এখন ফাইনালের পথে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।